তখনও পুরোদমে চলছে রাস্তা ঘষার কাজ। আগরায়। ছবি: এএফপি।
তিনি তাজমহল দেখতে আসবেন। কড়া নিরাপত্তায় তাই কার্যত দুর্গের চেহারা নিয়েছে আগরা। কিন্তু শুধু সুরক্ষার ব্যবস্থা করলেই কি হবে? হাজার হোক, নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযান শুরু হওয়ার পর এই প্রথম এ দেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রী মিশেল। জঞ্জাল-ময়লা-নোংরা যাতে কণামাত্র না থাকে সেটা-ও দেখা দরকার। সে লক্ষ্যেই দিনরাত মেহনত করেছেন ৬০০ কর্মী। আগরার রাস্তাকে ঝকঝকে করে ফেলার দায়িত্ব ছিল তাঁদেরই হাতে।
কাজের পারিশ্রমিক? দৈনিক তিনশো টাকা। লম্বা সময় ধরে সাফাইয়ের কাজ করতে গিয়ে কোমর-হাঁটু যন্ত্রণায় ফেটে গিয়েছে। তবু উপায় ছিল না। কবেকার পুরনো থুতু, পানের পিকের দাগ তুলতে হাত চালাতেই হয়েছে। এত অল্প পারিশ্রমিকে এ হেন কষ্টসাধ্য কাজ কেন করেছেন তাঁরা? “রাস্তার প্রতিটা অংশ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তা হলে ওবামা খুশি হবেন”, ঝটিতি উত্তর রামজিতের। ওই সাফাইকর্মীর আশা, নিশ্চয়ই তাঁর পরিশ্রম নজর এড়াবে না মার্কিন প্রেসিডেন্টের। সে কথা ভেবেই আপাতত গর্বিত রামজিত। কোমর-হাঁটুর যন্ত্রণা ভুলে বুরুশ আর বালতি হাতে টানা রাস্তা সাফাইয়ের কাজ করেছেন তিনি।
তবে গত দশ দিন রাস্তা-ঘষার কাজ বন্ধ। প্রশাসন জানিয়েছে, সিমেন্টের রাস্তা ঘষাঘষির ফলে বিস্তর ধুলো উড়েছে। ওবামা-দম্পতি আগরায় পৌঁছনোর আগে সেগুলি যাতে থিতিয়ে পড়ে সে জন্যই স্থগিত রাখা হয়েছে রাস্তা-ঘষার কাজ। তবে এই ‘স্বচ্ছ আগরা’ অভিযানের অন্যান্য কর্মসূচি জারি রয়েছে। যেমন- শহর থেকে স্রেফ উধাও করে দেওয়া হচ্ছে পথকুকুর, গরু-মোষ। দু’দিনের মধ্যে প্রায় ২ টন আবর্জনা বের করা হয়েছে যমুনা নদী থেকে। দৈনিক ১০০ টাকার বিনিময়ে তাজমহলের সামনের বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার কাজ করে চলেছেন মহিলারা। সব মিলিয়ে গোটা শহরটা যেন কোনও জাদুমন্ত্রে হঠাৎ জোরে দৌড়তে শুরু করেছে।
এ সব কিছুর দিকে প্রশাসনের পাশাপাশিই কড়া নজর রেখে চলেছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। প্রায় তিন হাজার পুলিশকর্মী টানা কাজ করে চলেছেন। যমুনায় নৌকো থেকে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওবামা-দম্পতি যে দিন আগরা আসবেন, সে দিন তাজমহলে যে বাইরের কোনও পর্যটককে ঢুকতে দেওয়া হবে না, তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে। সে দিন স্থানীয়দের রাস্তাঘাটে বেরোনোর উপরও নিষেধাজ্ঞা চেপেছে। সব দেখে বিরক্ত মিষ্টি-ব্যবসায়ী অনিল কুমার সোনকার। বললেন, “বাইরে বেরোতে পারব না, ছাদে উঠতে পারব না, ...যেন কার্ফু জারি হয়েছে।” তবে, ওবামা যে দিন আসবেন সে দিন দোকান খোলা রাখতে হবে সোনকারকে। হাজার হোক, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আগরার পেঠা চাখানোর দায়িত্ব তো তাঁদেরই উপর।
আগরার ছবিটাই যদি এমন হয়, তবে খাস রাজধানীর অবস্থা কেমন হবে ভেবেই চিন্তিত অনেকে। রবিবার সকাল দশটায় সেখানেই তো পৌঁছনোর কথা ওবামার। তার পর নিজের লিম্যুজিন ‘বিস্ট’-এ চেপে যে রাস্তা দিয়ে তিনি হোটেলে উঠবেন, সেখানে এমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে যে মাছিও গলার উপায় নেই। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জয়পুর-আগরাও। মেট্রো স্টেশনে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা, ৭০-এরও বেশি বহুতলের ছাদে ‘স্নাইপার’ মোতায়েন সব মিলিয়ে দিল্লিও এখন দুর্গ। তবে গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দিল্লি নয়, ওবামার সফর চলাকালীন জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যে হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের ভারত সফরের সময় কাশ্মীরের ছিট্টিসিংহপুরাতে হামলা চালিয়ে ৩৬ জনকে হত্যা করেছিল লস্কর ই তইবা। এ বারও সে রকম কিছু ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা। জম্মু ও কাশ্মীর-সহ আরও কিছু রাজ্যকে তাই সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। বাড়ছে নিরাপত্তাও।