লাতেহারের জঙ্গলে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। দু’টি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন জওয়ানরা।
ঘটনাটা ঘটল তখনই। ভোরের আলো ভাল করে ফোটেনি। গাছপালার আড়ালে জঙ্গিদের মতো পোশাকে কয়েক জনকে দেখতে পান নিরাপত্তাকর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গেই গুলি চালাতে শুরু করলেন তাঁরা। পাল্টা জবাবও মিলল। ঘণ্টা দু’য়েক নাগাড়ে সংঘর্ষও চলল। অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে তল্লাশি অভিযানে সামিল নিরাপত্তা বাহিনীর দু’টি দল জেলা পুলিশের কন্ট্রোল-রুমের সঙ্গে ওয়ারলেস-যন্ত্রে যোগাযোগ করতেই হতবাক। জঙ্গি কোথায়! লড়াই চলছে তো তাঁদের নিজেদের মধ্যেই। ভুল যখন ভাঙল, তত ক্ষণে জখম হয়ে কাতরাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর তিন জওয়ান।
পোশাক-বিভ্রাটের জেরে ওই কাণ্ডে বিব্রত পুলিশকর্তারা। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, পাহাড়-জঙ্গলে মাওবাদী অভিযানে সামিল যৌথ বাহিনীর জলপাই-রঙা, সবজেটে বা কালচে পোশাকের সঙ্গে তেমন তফাৎ নেই জঙ্গিদের জামার। অন্ধকারে তার ফারাক করা আরও ঝক্কির। আজ ভোরে লাতেহারের গারু থানা এলাকার সরযুতে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে সম্ভবত সেই কারণেই।
পুলিশ সুপার এস মাইকেল রাজ ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। আহতদের রাঁচির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসপি জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ঝাড়খণ্ড জাগুয়ার জওয়ানরা সরযু এলাকায় মাওবাদী বিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল। প্রায় শ’দুয়েক জওয়ান জঙ্গলের দু’টি রাস্তায় ঘুরছিলেন। কুকুপিড়ির জঙ্গলে দু’টি দল মুখোমুখি হয়। একে অন্যকে মাওবাদী ভেবে গুলি চালাতে শুরু করেন। দু’ঘন্টা গুলির লড়াইয়ের পর দু’পক্ষই লাতেহার জেলা পুলিশের সঙ্গে জঙ্গল থেকে যোগাযোগ করে। তখনই ভুল বুঝতে পারে তাঁরা।
রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, কী করে ভুল বোঝাবুঝি হল তা দেখা হচ্ছে। ২০১২ সালে পলামুর জঙ্গলে কোবরা জওয়ান এবং অন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যেও একই ভাবে সংঘর্ষ হয়েছিল।
আজ দুপুরে পলামু এবং চতরার সীমানায় ঢুলকি নদীর কাছে ল্যাণ্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হন চতরার এএসপি আর এস মিশ্র ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান। এক জন স্থানীয় বাসিন্দাও তাতে জখম হয়েছেন।
জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই এস রমেশ জানান, চতরার পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছিল। একটি ল্যাণ্ডমাইন পাওয়া যায়। তা নিষ্ক্রিয় করার সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে। ভোটের আগে মাওবাদীরা সক্রিয় হচ্ছে বলে দাবি ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেভিএম দলের প্রধান বাবুলাল মারাণ্ডির। তাঁর উপরও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা জানান বাবুলাল।