লাহৌরের জেল থেকে উর্দু শিখে ফিরলেন মঙ্গল, ভুলেছেন সাঁওতালি

মাথার চুলে পাক ধরেছে। চেহারাতেও বয়সের ছাপ। গ্রামের ছেলে এখন প্রতিবেশীদের কাছেই অচেনা মানুষ। ছ’বছর পাকিস্তানের জেলে থাকতে থাকতে নিজের মাতৃভাষাই ভুলে গিয়েছেন জামতাড়ার মঙ্গল মরান্ডি। পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলছেন বিদেশি ভাষায়উর্দু, পঞ্জাবি, ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে। যার অধিকাংশই বুঝতে পারছেন না ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী গ্রামটির মানুষজন।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫১
Share:

মঙ্গল মরান্ডি।— নিজস্ব চিত্র।

মাথার চুলে পাক ধরেছে। চেহারাতেও বয়সের ছাপ। গ্রামের ছেলে এখন প্রতিবেশীদের কাছেই অচেনা মানুষ। ছ’বছর পাকিস্তানের জেলে থাকতে থাকতে নিজের মাতৃভাষাই ভুলে গিয়েছেন জামতাড়ার মঙ্গল মরান্ডি। পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলছেন বিদেশি ভাষায়উর্দু, পঞ্জাবি, ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে। যার অধিকাংশই বুঝতে পারছেন না ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী গ্রামটির মানুষজন।

Advertisement

ছ’বছরেরও বেশি সময় পাকিস্তানের লাহৌরের কোট লাখপত জেলে বন্দি ছিলেন বছর চল্লিশের মঙ্গল। কেন, সে উত্তর তাঁর নিজেরও অজানা। মানসিক বিকারের শিকার মঙ্গল ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার গোপালপুরের এক আদিবাসী চাষি পরিবারের ছেলে। ছ’বছর আগে একদিন গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি পরিবারের লোকজন। শেষ পর্যন্ত গত বছরের শেষে মঙ্গলের বাবা সদন মরান্ডির কাছে জামতাড়া জেলা প্রশাসন খবর পাঠায়, মঙ্গল লাহৌরের জেলে বন্দি রয়েছেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে চাইছে। কিন্তু ছেলেটির নাম আর বাড়ির ঠিকানায় ভুল থাকায় দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও কিছু করতে পারছে না। এর পরেই ছেলেকে ফিরে পেতে নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন মঙ্গলের পরিবারের লোকজন।

মঙ্গলের বাবা বৃদ্ধ সদন জানান, গত সপ্তাহে ছেলেকে জেলা পুলিশ বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে। কী করে বাড়ির মেজো ছেলেটি সুদূর লাহৌরে গিয়ে পৌঁছল তা একাধিকবার মঙ্গলের কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু ছেলে কিছুই বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, “ছেলে তো আমাদের সাঁওতালি ভাষায় কথাই বলতে পারছে না। শুধু পঞ্জাবি, উর্দু আর ভাঙা হিন্দিতে কথা বলছে।”

Advertisement

মঙ্গলের সঙ্গে রাঁচি থেকে টেলিফোনে হিন্দিতেই জানতে চাওয়া হয়, কী করে তিনি পাকিস্তানে পৌঁছলেন? জেলে তাঁর উপরে কোনও অত্যাচার করা হত কিনা? পাঞ্জাবি-হিন্দিতে মঙ্গল বলেন, “আবছা মনে আছে, আমি পঞ্জাব গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরে আর কিছু মনে নেই। জেলে থাকার সময় আমার কাছে কয়েকবার বাড়ির ঠিকানা জানতে চেয়েছিল জেলের পুলিশ। জেলে আমি শ্রমিকের কাজ করতাম। আর আমার উপরে কোনও অত্যাচার হয়নি।” জামতারার ডেপুটি কমিশনার শশীরঞ্জন সিংহ বলেন, “ছেলেটি মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আমাদের জানায়। আমাদের বলা হয়েছিল, ছেলেটিকে দিল্লি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। আমরা সেই মতো ছেলেটিকে নিয়ে এসে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।”

পাকিস্তান থেকে ফেরার পর, আপাতত গোপালপুরের লোকজনের কাছে আলোচনার বিষয় মঙ্গল। প্রতিদিনই আশপাশের গ্রামের লোকজন তাঁর বাড়িতে আসছেন। পাকিস্তান কেমন দেশ, জেলে আতঙ্কবাদীরা রয়েছে কিনা, সে দেশের মানুষ কোন ভাষায় কথা বলে---এমন নানা প্রশ্নের উত্তর অনেকেই জানতে চাইছেন মঙ্গলের কাছে। কিন্তু মঙ্গল নীরব। বাবা সদনের কথায়, “ছেলে বরাবরই চুপচাপ থাকত। এখন আরও চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে ও ফিরে এসেছে।” জামতারার জেএমএম নেতা দেবাশিস মিশ্র জানিয়েছেন, “ছেলেটির চিকিৎসার জন্য আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন