কূটনীতির কোপ পড়ল খুদে খেলোয়াড়দের উপরে। যার জেরে ভারতে আমন্ত্রণ পেয়ে খেলতে এসেও ফিরে যেতে হল শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট দলটিকে।
কলম্বো থেকে গত কাল রাতে চেন্নাইয়ে পৌঁছেছিল ষোলো জনের ওই দলটি। বেসরকারি উদ্যোগে আজ থেকে এখানে অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। চলবে ৭ অগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আজ আর মাঠে নামতেই দেওয়া হল না খুদে ক্রিকেটারদের। উল্টে আজ সকালে চেন্নাই বিমানবন্দরে পুলিশ দিয়ে ঘিরে কলম্বোগামী বিমানে তুলে দেওয়া হল ক্রিকেটারদের।
গত সপ্তাহে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে একটি বিতর্কিত ছবি ও প্রবন্ধ (যার শিরোনাম ছিল- নরেন্দ্র মোদীকে লেখা জয়ললিতার প্রেমপত্র কতটা অর্থপূর্ণ!) প্রকাশিত হয় শ্রীলঙ্কার সরকারি ওয়েবসাইটে। তার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তামিলনাড়ু। ভারত বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার কড়া প্রতিবাদ জানানোর পরে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজাপক্ষে সরকার ওই লেখাটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতে উত্তাপ ক্রমশ বেড়েছে। আর তার আঁচ পড়েছে শ্রীলঙ্কার খুদে ক্রিকেট দলের উপরেও।
তামিলনাড়ু ক্রিকেট ফেডারেশন আয়োজিত ডি এম হারুন অল ইন্ডিয়া অনূর্ধ্ব ১৫ জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলার কথা ছিল তাদের। ৮টি স্থানীয় দলের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাংলাদেশও রয়েছে বিদেশি আমন্ত্রিত দলের মধ্যে। তামিলনাড়ু প্রশাসন সূত্রে জানানো হচ্ছে, রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ শ্রীলঙ্কা থেকে টিম চেন্নাই পৌঁছনোর পরই সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে তাদের হোটেল ঘিরে দেওয়া হয়। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে খবর ছিল যে এই সিংহলী ক্রিকেটারদের উপরে হামলা চালানো হতে পারে। পরিস্থিতি দেখে টিমের ম্যানেজার দিনেশ কুমারাসঙ্গে কথা বলেন আয়োজকদের সঙ্গে। তিনি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগও প্রকাশ করেন। কথা হয় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যেও। আজ সকালে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ক্রিকেটারদের দেশে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা না থাকলেও খেলা বন্ধ হবে না।
আজ সংসদের ভিতরে তামিল দলগুলি যে ভাবে শ্রীলঙ্কা সরকারের মুণ্ডপাত করেছে, তাতে বাইশ গজে খুদে ক্রিকেটাররা কতটা নিরাপদ থাকত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দফায় দফায় রাজ্যসভা অচল করে দেন এআইডিএমকে-র সাংসদেরা। শ্রীলঙ্কার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধটি হাতে নিয়ে তাঁরা তেড়ে আসেন ওয়েলে। এমন চিৎকার জুড়ে দেন যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান মৃদুভাষী হামিদ আনসারিও ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, এই আচরণ কোনও সাংসদের পক্ষে শোভা পায় না। আনসারি বলেন, “এ আপনারা কী করছেন? এমন করতে পারেন না।”
কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকার ওই বিতর্কিত প্রবন্ধ সরিয়ে দেওয়ার পরেও সাংসদরা এমন করছেন কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁরা তামিল আবেগকেই উস্কে দিতে চাইছেন। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলকে ফিরিয়ে দেওয়ার পিছনে প্রকাশ্যে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার মধ্যেও তামিল উষ্মাই কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তামিল নেতাদের প্রতিবাদের হাওয়া কিছুটা কেড়ে নিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও আজ রাজ্যসভায় জানিয়েছেন, “ভারত কড়া ভাবে এই ঘটনার নিন্দা করছে। আমরা সে দেশের হাইকমিশনারকে ডেকে ক্ষোভের কথা জানাব।”