খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে আপত্তির উল্লেখ থাকছে না বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে।
কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দিলেও এ ব্যাপারে ঘোর আপত্তি আছে সঙ্ঘ পরিবারের। মূলত তাদের চাপেই রাজস্থানে ক্ষমতায় এসে সেখানে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছেন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। বিষয়টি নির্বাচনী ইস্তাহারেও রাখতে চেয়েছিলেন আরএসএস নেতারা। কিন্তু সেই বিরোধিতার উল্লেখ ঠেকিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
মোদীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, বিদেশি পুঁজির প্রশ্নে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোটেই সঙ্ঘ নেতাদের মতো রক্ষণশীল নন। দলীয় শৃঙ্খলার কারণে তা তাঁকে মেনে নিতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিজের রাজ্যে তিনি শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রে উদার নীতি নিয়েই চলেন। তাঁর এই মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে সম্প্রতি দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তিনি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৈরি হতে বলেছেন।
কিন্তু মুরলীমনোহর জোশীর হাত দিয়ে যে ইস্তাহার তৈরি হয়েছিল, তাতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির বিরোধিতা করার কথা বলা ছিল। সেই খসড়ার অন্যান্য বহু জিনিসের মতো এই বিষয়টিও মোদীর পছন্দ হয়নি। তিনি দল ও সঙ্ঘ নেতৃত্বকে বলেছেন, ক্ষমতায় এলে দল কী করবে, ইস্তাহারে সেই কথাই বলা হয়। কোনও নেতিবাচক ঘোষণা করার জায়গা ইস্তাহার নয়। ফলে বিদেশি পুঁজির বিরোধিতা করার কথা না-বলে এ কথা বলা যেতে পারে যে, বিজেপি ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করবে।
বস্তুত, গত লোকসভার ইস্তাহারেও ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখার কথা বলা হয়েছিল। জোশী সেই সময় লিখেছিলেন, কৃষির পর খুচরো ব্যবসাতেই সব থেকে বেশি মানুষ যুক্ত। প্রায় চার কোটি। তাঁদের প্রশিক্ষিত করে বাজারের উপযোগী করে তোলাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
মোদী-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সঙ্ঘের আপত্তি উপেক্ষা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। শিল্পমহলকে সদর্থক বার্তা দেওয়ার দায়ও তাঁর রয়েছে। ইস্তাহারে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি প্রসঙ্গ উহ্য রেখে দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখলেন মোদী। মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলির মতে, বিজেপি কখনওই বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নয়। ইস্তাহারেও তার ছাপ থাকবে। কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি। কারণ, দশ বছরে দেশের উৎপাদন শিল্প একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই অবস্থায় প্রাথমিক ভাবে যেটি প্রয়োজন, সেটি হল এই শিল্পকে মজবুত করা, যাতে তা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। মোদী ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে সেই কথাই বলেছেন।
জেটলির বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, সঙ্ঘ যতই স্বদেশিয়ানার পথ আঁকড়ে থাকুক, বিজেপির একটি বড় অংশ খুচরো ব্যবসাতেও ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা খুলতে প্রস্তুত। তার আগে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে আরও মজবুত করার পক্ষপাতী। ফলে এখনই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ খুলে দেওয়ার কথা বলতে চায় না বিজেপি। তার পিছনে আর একটি কারণ, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। যে সম্মেলনে মোদী প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন, তার আয়োজকরাই আজ প্রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমরা বিজেপির ইস্তাহারের দিকে মুখিয়ে রয়েছি। বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসা নিয়ে তারা কী অবস্থান নেয়, সেটি দেখার জন্য।”