স্ট্যালিনের ফুল, প্রেমচন্দ্রনের কাঁটা, বিপাকে বামেরা

লোকসভা ভোটের দিন যত কাছে আসছে, দক্ষিণ ভারতের তিন রাজ্যে তত দ্রুত বদলাচ্ছে বামেদের শত্রু-মিত্রের রসায়ন! তিন রাজ্যেই যে হেতু বামেদের কিছু না কিছু রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক অস্তিত্ব আছে, শিবির বদলের এই খেলা তাই তাদের উদ্বেগে ফেলেছে। উভয় সঙ্কটে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে হাঁফ ছুটছে বাম নেতৃত্বের!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৫:০৮
Share:

লোকসভা ভোটের দিন যত কাছে আসছে, দক্ষিণ ভারতের তিন রাজ্যে তত দ্রুত বদলাচ্ছে বামেদের শত্রু-মিত্রের রসায়ন! তিন রাজ্যেই যে হেতু বামেদের কিছু না কিছু রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক অস্তিত্ব আছে, শিবির বদলের এই খেলা তাই তাদের উদ্বেগে ফেলেছে। উভয় সঙ্কটে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে হাঁফ ছুটছে বাম নেতৃত্বের!

Advertisement

সঙ্কট আপাতত সব চেয়ে বেশি গভীর কেরলে। সে রাজ্যে এ বার ভাল ফলের আশায় ঝাঁপাচ্ছেন প্রকাশ কারাট-এ বি বর্ধনেরা। অথচ সেখানেই বামফ্রন্টের বাইরে বেরিয়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছে তিন দশকের পুরনো বাম শরিক আরএসপি। সুযোগ বুঝে কংগ্রেস তাদের সমর্থনের প্রস্তাব দিয়ে বসায় অস্বস্তিতে পড়েছেন আরএসপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও! কারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করবে না বলে ভোটই দেয়নি তারা। এই অবস্থায় শরিক নেতৃত্বকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিএম নেতারা। তবে পিনারাই বিজয়নেরা নমনীয় না হলে কেরলে মীমাংসার বিশেষ পথ যে নেই, বুঝতে পারছে বাম মহল।

কেরলের ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে সিপিএম লড়ে ১৬টি, বাকি চারটিতে সিপিআই। এ বার কোল্লম আসনে দলের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবিকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। ওই আসনটি আগেই দাবি করে রেখেছিল আরএসপি। সিপিএম দাবি না-মানায় তারা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এন কে প্রেমচন্দ্রনকে সেখানে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোল্লমের রাস্তায় নেমে সিপিএম-বিরোধী বিক্ষোভেও অংশ নিয়েছেন আরএসপি সমর্থকেরা। এই সমস্যার জন্য তাঁর অনড় মনোভাবের দিকে আঙুল ওঠায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন। কিন্তু পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভি এম সুধীরন আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক এ আজিজকে ফোন করে সমর্থনের প্রস্তাব দেওয়ায় পাল্টা বলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে সিপিএম! দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এখনও আমরা মনে করি, বাম ঐক্যের স্বার্থে এবং কংগ্রেস-বিজেপি’কে পরাস্ত করার লক্ষ্যে আরএসপি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।” একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করবে না বলে যারা ভোটদানে বিরত থাকল, তারা লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সমর্থন নেবে কী ভাবে?”

Advertisement

আগ বাড়িয়ে আরএসপি-কে সমর্থনের বার্তা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বও। কোল্লমের আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। কংগ্রেসের মধ্যে টিকিট-প্রত্যাশী এবং ইউডিএফের অন্য কিছু শরিকও আরএসপি-কে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। এই অবস্থায় আরএসপি-র এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, “বাম ঐক্যের পরিপন্থী কাজ করেছে সিপিএম। তবে আমরা এখনও দলে আলোচনা চালাচ্ছি।” কেরলে অবশ্য নির্বাচনের আগে শিবির-বদল কোনও নতুন ঘটনা নয়। তৎকালীন সাংসদ বীরেন্দ্র কুমারের জন্য বিজয়নেরা গত বার একটি আসন ছাড়তে রাজি না-হওয়ায় জেডিএস লোকসভা ভোটের আগে চলে গিয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফে। এ বার ইউডিএফ বীরেন্দ্র কুমারকে টিকিট দিতে চাইছে না এবং তিনি ফের ফুঁসছেন! আবার বামেদের এলডিএফে আরএসপি-র মতোই আসন দাবি করে রেখেছে দেবগৌড়ার জেডি(এস)। কিন্তু সম্ভাবনা ক্ষীণ!

কেরলে যখন এই চিত্র, তামিলনাড়ুতে তখন আসরে নেমেছেন এম কে স্ট্যালিন। জয়ললিতার সঙ্গে বামেদের সমঝোতা ভেস্তে যেতেই (তামিলনাড়ুতে গিয়ে রবিবারই এডিএমকে-র বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন কারাট) তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে ডিএমকে। রাজ্য রাজনীতিতে চির শত্রু ‘আম্মা’কে বার্তা দেওয়া তো বটেই, ঘরের শত্রুকেও শিক্ষা দিতে চাইছে তারা। মাদুরাইয়ে বামেদের কিছু সমর্থনের ভিত আছে, অতীতে তারা সাংসদও পেয়েছে সেখান থেকে। এখন মাদুরাইয়ের সাংসদ আলাগিরি। কিন্তু ডিএমকে-র সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাওয়ার পরে করুণানিধি-পুত্র স্ট্যালিন চাইছেন, মাদুরাইয়ে বামেদের সমর্থন দিয়ে ভাই আলাগারির যাত্রাভঙ্গ করতে! স্ট্যালিনদের প্রস্তাব মেনে নিতে ডি পান্ডিয়ানের মতো সিপিআই নেতাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সিপিএমের উভয় সঙ্কট! দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় এ রাজা, কানিমোঝিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সওয়াল করে এসে এখন কী ভাবে তাঁদের দলেরই সমর্থন নেওয়া যায়?

অন্ধ্রপ্রদেশে আবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজ্য ভাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিপিএমের সাবেক অন্ধ্র রাজ্য কমিটি দু’ভাগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নতুন তেলঙ্গানার রাজ্য সম্পাদক তাম্মিনানি বীরভদ্রম। পুনর্গঠিত অন্ধ্র রাজ্য কমিটির সম্পাদক পি মধু। অবিভক্ত অন্ধ্রের শেষ রাজ্য সম্পাদক বি রাঘভুলু নতুন দুই রাজ্য কমিটির উপরেই ভার দিয়েছেন জগনের ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। জগন আবার তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছেন। স্বভাবতই দোটানায় পড়েছে অন্ধ্র ও তেলঙ্গানা, দুই রাজ্য কমিটিই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন