সুনামি আক্রান্তদের প্রতি শ্রদ্ধা। শুক্রবার সেই ভয়াল তাণ্ডবের দশ বছর পর তাইল্যান্ডের কাও লাকে।
চোখের সামনে দশটা বছর কেটে গিয়েছে। তা-ও যেন চেন্নাইয়ের নাগাপট্টিনামের মানুষগুলো ভুলতে পারেননি ২০০৪ সালে ডিসেম্বরের শেষ রবিবারটা। ভুলতে পারেননি সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাতে মার খাওয়া অসহায়তা এবং প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা। আজ, বৃহস্পতিবার সুনামি কাণ্ডের দশ বছর বাদে কেমন আছে নাগাপট্টিনাম?
অনেকে দুষছেন সরকারকে। বলছেন, সুনামির মতো ভয়ঙ্কর বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য এক শতাংশও তৈরি নয় রাজ্য সরকার। আবার অন্য দিকে, সুনামির জলের তোড়ে সন্তান হারানোর পর ফের মাতৃত্বের স্বাদ ফিরে পেতে চান কেউ কেউ। যেমন সেলভি বিজয়কুমার।
সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে সাঁইত্রিশ বছরের সেলভি বললেন রাতের ঘুম কাড়া সুনামির অভিজ্ঞতা কথা। বললেন, “সে দিন বাচ্চাগুলোর জন্য সকালের খাবার বানাচ্ছিলাম। তখনও কিছুই জানতাম না ঠিক কী ঘটতে চলেছে আমার বাচ্চাগুলোর সঙ্গে। ঘর থেকে বেরিয়ে কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারিনি। দশ বছর কেটে গিয়েছে। ‘আম্মা’ ডাকটা শেষ বার শুনেছি। খুব শুনতে ইচ্ছে হয় ডাকটা।”
সমুদ্রের কাছে প্রার্থনা। সুনামির দশ বছর পরে। শনিবার চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের জল বাধ মানেনি সেলভির। পাঁচ সন্তানের মা হওয়ার পর ২০০৩ সালে নিজেই বন্ধ্যাকরণ করেছিলেন। তবে এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ফের অস্ত্রোপচার করিয়ে মা হবেন তিনি। এটাই এখন পাঁচ সন্তানহারা সেলভির এক মাত্র ইচ্ছে।
তবে শুধু সেলভি নয়। তালিকাটা অনেক বড়। তথ্য বলছে, ২০০৫ সালের অগস্টেই বন্ধ্যাকরণ ঘুচিয়ে আবার মা হবেন বলে ঠিক করেন অ্যাগনেস রাই। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে নাম লিখিয়েছিলেন আরও ৫০ জন মহিলা।
সুনামিতে স্ত্রী হারিয়ে বছর ষাটের এক প্রৌঢ় বললেন, “সুনামির জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ২০০০ মানুষ প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে আমার স্ত্রী-ও ছিল। এখনও ভুলতে পারেনি সে দিনের কথা। মিনিটে মিনিটে বদলে যাচ্ছিল মৃতের সংখ্যাটা।” অনেকেই সুনামির সেই তাণ্ডবের পরে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অনেকে অন্যত্র জীবিকা খুঁজে নিয়েছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও থেকে গিয়েছেন বছর তিরিশের সত্য। জানালেন, ২০০৪ সালে ডিসেম্বরে তিনি তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার পরে যমজ সন্তানের মা হয়েছেন। এখন নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন সুনামিতে সর্বহারা কিছু মানুষকে।
সিএজি-র তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ২০০৪-এর সুনামিতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নাগাপট্টিনাম এবং কুড্ডালোরের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গোটা রাজ্য বাদ দিলেও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেও আগাম সতর্কীকরণ কাজ করছে না। গত বছরেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে সাহায্য নিয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলির উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তবে তা শুধু নামেই।
ছবি: এ পি।