এত দিন সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন জেডিইউ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি বা সাবির আলির মতো প্রাক্তন সাংসদরা। এ বার নীতীশ কুমারের উপস্থিতিতেই প্রকাশ্য জনসভায় তাঁর মন্ত্রিসভার এক সদস্যই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, “আমি হাত গুটিয়ে নিলে জামুইয়ের প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়ে যাবে।” বক্তা নীতীশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ।
আজ জামুইয়ে সভা করেন নীতীশ কুমার। সেখানে দলের প্রার্থী বিধানসভার স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী এনডিএ জোট শরিক তথা লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ। সভায় জামুইয়ের ভূমিপুত্র নরেন্দ্র সিংহ বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী জেনে রাখুন, আমি হাত সরিয়ে নিলে স্পিকারের জামানত জব্দ হবে।” এর পরে তাঁর হুঁশিয়ারি, “আপনি যে ভাবে দল চালাচ্ছেন, দলের ক্ষতি হচ্ছে।” এ কথা বলার পরে উপস্থিত সমর্থকদের মধ্যে হাসির রোল ওঠে।
এমনিতেই নীতীশ কুমার যথেষ্ট চাপে রয়েছেন। বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার পরে নানা ভাবে দলের অন্দরেও চাপ বাড়ছে। ভোটের ফলাফল নিয়েও এখন জেডিইউ নেতৃত্ব যথেষ্ট উদ্বেগে। ইতিমধ্যে নীতীশ বলতে শুরু করেছেন, লোকসভা ভোটের ফলের উপরে রাজ্য সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। কারও কারও মতে, নীতীশ আঁচ করতে শুরু করেছেন যে, এই ভোটের ফলাফল তাঁর ক্ষমতায় থাকা-না থাকার উপর প্রভাব ফেলবে।
লোক জনশক্তি থেকে ২০০৫ সালে জেডিইউয়ে যোগ দেন নরেন্দ্র সিংহ। কিছু দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, “নীতীশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য।” তা হলে কী এমন হল যে প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতে নামলেন তিনি?
জেডিইউয়ের এক সাংসদের কথায়, “নীতীশ নিজের মতো দল চালাতে গিয়ে বেশ কিছু ভুল করে ফেলছেন। তারই সুযোগ নিচ্ছেন এই সব আত্মকেন্দ্রিক নেতারা।” নীতীশ-ঘনিষ্ঠদের মতে, নরেন্দ্র সিংহ চান, তাঁর জেলা থেকে জেডিইউ প্রার্থী জিতলে সেই সাংসদ যেন তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকেন। নিজের জায়গায় তিনিই যে শেষ কথা, তা বোঝাতেই আজ নরেন্দ্রর আস্ফালন। দলের অন্য অংশের মতে, নরেন্দ্র এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু সেটা যে হচ্ছে না বুঝে অন্তত উপমুখ্যমন্ত্রী যাতে হতে পারেন, তার জন্য নীতীশের উপর চাপ তৈরি করছেন।
নরেন্দ্রর যদিও যুক্তি, “নীতীশ কুমার দলে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন। যাকে মনে করছেন, প্রার্থী করছেন। এমনকী জামুইয়ে প্রার্থী ঠিক করার সময়ও আমার সঙ্গে কথা বলেননি।” এই নিয়ে নীতীশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, ঠিক সময়ে নরেন্দ্রকে জবাব দেবেন নীতীশ।