ব্রিটিশ কনসুলেটের বাইরে একজোট হংকং প্রতিবাদীরা

কনসুলেটের বাইরে প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ ছিল ঠিকই। তবে পুলিশের নিষেধ উড়িয়ে পূর্ণ গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে সারা শহরে আরও মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হংকং শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৫
Share:

উত্তপ্ত: পেট্রল বোমা ছুড়তে গিয়ে আগুন ধরে গিয়েছে এক বিক্ষোভকারীর শরীরে। রবিবার হংকংয়ে। ছবি: রয়টার্স।

নিজেদের দাবি জানাতে আজ হংকংয়ের ব্রিটিশ কনসুলেটের বাইরে ভিড় করেছিলেন কয়েকশো মানুষ। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন যখন হংকং হস্তান্তরিত করে চিনের কাছে, তখন এ শহরের স্বাধীনতা অটুট থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেজিং প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সে কথা রাখেনি চিন। আর তাই আজ ব্রিটিশ কনসুলেটের বাইরে এসে হংকংয়ের মানুষ একজোট হয়ে বললেন, স্বাধীনতা ফেরানোর জন্য চিনের উপরে চাপ তৈরি করুক ব্রিটেন। তাঁরা গাইলেন ব্রিটেনের জাতীয় সঙ্গীত। ওড়ালেন সে দেশের জাতীয় পতাকা।

Advertisement

কনসুলেটের বাইরে প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ ছিল ঠিকই। তবে পুলিশের নিষেধ উড়িয়ে পূর্ণ গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে সারা শহরে আরও মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে অবশ্য হিংসা ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ।

শুধু ব্রিটেন নয়, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও সমর্থন চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন হংকংয়ের আন্দোলনকারীদের তরুণ প্রতিনিধি জোশুয়া ওয়ং। তিনি বলেছেন, ‘‘চিনের সঙ্গে যে কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে মানবাধিকারের একটা শর্ত ঢোকানো উচিত।’’ আমেরিকার সঙ্গে চিনের বহুদিন ধরেই বাণিজ্যের লড়াই চলছে। এখন সেই সূত্রে জোশুয়ারা বলছেন, ‘‘চিন যদি হংকংয়ের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার কোনও চেষ্টাই না করে এবং নিজের মতো ব্যবসা করে চলে, তা হলে সেটা বিশ্ব অর্থনীতির পক্ষেও ক্ষতিকর হবে।’’ হংকংয়ে এ দিনের মিছিলে মার্কিন পতাকা নিয়েও হেঁটেছেন কেউ কেউ। ট্রাম্পের কাছে তাঁদের আর্জি, ‘‘হংকংকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসুন।’’

Advertisement

যদিও চিন আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, অন্য কোনও দেশ যেন এ ক্ষেত্রে নাক না গলায়। বেজিং প্রশাসনের দাবি, হংকংয়ের পরিস্থিতি একেবারেই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে ব্রিটেন বলেছে, চিন যাতে ‘এক দেশ দুই প্রশাসন’ নীতি মেনে চলে, তা দেখা তাদের আইনি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। হস্তান্তরের আগে এমন শর্তই ঠিক হয়েছিল।

এ মাসের গোড়ায় প্রতিবাদকারীরা কিছুটা জয় অবশ্য পেয়েছেন। হংকং থেকে অপরাধীদের চিনে প্রত্যর্পণের প্রস্তাবিত বিল খারিজ করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। এই বিলের বিরুদ্ধেই সাম্প্রতিক আন্দোলনের শুরু। কিন্তু তার পরেও থামেননি তাঁরা। হংকংয়ে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য সরব হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশি নিগ্রহের বিরুদ্ধেও আপত্তি জানাচ্ছেন তাঁরা।

আজ ব্রিটিশ কনসুলেটের বাইরে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়েছেন, ‘এক দেশ দুই প্রশাসন নীতির আর কোনও অস্তিত্ব নেই’, ‘হংকংকে মুক্ত করতে হবে’। এক আন্দোলনকারীর মন্তব্য, ‘‘প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, হংকংয়ে মানবাধিকার এবং সুরক্ষার অভাব হবে না। আমাদের বিশ্বাস, আমাদের সুরক্ষা দেওয়ার আইনি অধিকার এবং নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে ব্রিটেনের প্রশাসনের।’’ চিন যদিও দাবি করছে, তারা ব্রিটেনের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে সরেনি।

এ দিন ব্রিটিশ ন্যাশনাল (ওভারসিজ) পাসপোর্টের নিয়ম পাল্টানোর জন্যও দাবি জানিয়েছেন আন্দোলকারীরা। চিনকে হংকং হস্তান্তরের পরে এই ধরনের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল। যাঁর এই পাসপোর্ট আছে, তিনি ছ’মাস ব্রিটেনে থাকার অনুমতি পান। তবে সেখানে কাজ করার বা বাস করার সুযোগ পান না। ২০১৭ সাল পর্যন্ত হংকংয়ে ৬০ হাজার মানুষের কাছে এই পাসপোর্ট ছিল।

আজকের প্রতিবাদ হয়েছে বিভিন্ন সরকারি দফতর এবং আইনসভা ভবনের কাছে। চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বেস-এর বাইরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলকারীদের বিরুদ্ধে। ১ অক্টোবর চিন প্রতিষ্ঠার ৭০ তম বার্ষিকীর জন্য তৈরি একটি লাল ব্যানার ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলেও দাবি। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করছে। সেখানে আবার ছুটে এসেছে পেট্রল বোমা। যা থেকে একটি জলকামানে আগুন ধরে যায় বলে অভিযোগ। পুলিশ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘আন্দোলকারীদের একটি অংশ হারকোর্ট রোড দখল করে সরকারি ভবন তছনছ করেছে। একের পর এক পেট্রল বোমাও ছুঁড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন