বাবা-মা পাশে থাকলে পরীক্ষাটা সহজ হয়

আইআইটি জয়েন্ট মানেই একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি। শুধু বিষয়ের উপর দখলই নয়, চাই চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও। সঙ্গে চাই মা বাবাকেও। জানালেন আইআইটি ২০১৭ সালের পরীক্ষার্থী আদিস্বদীপ্ত মণ্ডল। শুনলেন সৌরজিৎ দাসএই জেইই পরীক্ষা কিন্তু একটা এলিমিনেশন টেস্ট। গত বছর মোটামুটি ১২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী জেইই মেন পরীক্ষায় বসেছে। সেখান থেকে আড়াই লক্ষের কাছাকাছি ছাত্রছাত্রী জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৮
Share:

জানুয়ারি মাসে জেইই মেন পরীক্ষা। যাদের লক্ষ্য আইআইটি, তাদের এই ধাপটি পেরোতেই হবে। তবেই মিলবে জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় বসার সুযোগ। সেটা হবে জেইই মেন-এর কয়েক মাস পরেই। সেটা ঠিকঠাক পার হতে পারলে লক্ষ্যপূরণ। কোনও ধাপই কিন্তু সোজা নয়। তার জন্য চাই দীর্ঘ প্রস্তুতি। এমন অনেককে দেখেছি যারা পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই আইআইটি-র জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া অবশ্যই ভাল। তবে তারও আগে বুঝে নেওয়া দরকার আইআইটি-ই তোমার লক্ষ্য কি না। না হলে কিন্তু তোমার প্রেপারেশনে সেই উদ্যম থাকবে না। আমি যে বছর পরীক্ষা দিয়েছিলাম সে বছর আমারই এক বন্ধু পরীক্ষা দিয়েছিল, যে আইআইটি-র জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল সপ্তম কিংবা অষ্টম শ্রেণি থেকেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে সুযোগ পায়নি। এখানে তুমি কত আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছ সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং তোমার প্রেপারেশনটা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, ঠিক দিকে তুমি এগোচ্ছ কি না, সেটা অনেক জরুরি। আমার মতে, দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই জেইই পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। তত দিন তুমি নিজেও অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে যাবে এটা বুঝতে যে, তোমার লক্ষ্য আইআইটি বা অন্য কিছু।

Advertisement

এই জেইই পরীক্ষা কিন্তু একটা এলিমিনেশন টেস্ট। গত বছর মোটামুটি ১২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী জেইই মেন পরীক্ষায় বসেছে। সেখান থেকে আড়াই লক্ষের কাছাকাছি ছাত্রছাত্রী জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত আইআইটিতে আসতে পারে এগারো থেকে বারো হাজারের কাছাকাছি। আইআইটি পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমি বুঝেছিলাম এটা শুধু ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং অঙ্কের জ্ঞান যাচাই করে না, একই সঙ্গে এটাও দেখে তোমার চট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কতখানি। বোর্ডের পরীক্ষায় আমরা অনেকেই ঠিক করি, অমুক বিষয়ে একশোতে একশোই পাবো। সব প্রশ্নের উত্তর করব। আইআইটি কিন্তু একেবারে উল্টো। এখানে তুমি যদি এমন মানসিকতা নিয়ে যাও যে সব উত্তর করে আসবে, তা হলে ভুল করবে। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কতখানি করবে, কোনগুলি নয়।

নিজে পড়ে আইআইটি পাওয়া কিছুটা হলেও শক্ত। কোনও ভাল কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে ভাল হয়। তার বড় কারণ এরা তোমাকে প্রশ্ন খুব তাড়াতাড়ি করার কার্যকরী উপায়গুলো শিখিয়ে দেবে। পরীক্ষার সময় এই শর্ট মেথডগুলি খুব কাজে লাগে। যেমন, ধরো, পরীক্ষায় তুমি প্রথম দশটা প্রশ্ন করতে পারলে। ১১ নম্বর প্রশ্নে গিয়ে গেলে আটকে। কিছু ক্ষণ চেষ্টা করেও হল না। ১২ নম্বর প্রশ্নে গেলে। সেটাও পারলে না। তখন কিন্তু ধীরে ধীরে তোমার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে শুরু করবে। এই সব ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের শেখানো হয়, সঙ্গে সঙ্গে ১৬ বা ১৭ নম্বর প্রশ্নে চলে যেতে। দেখা গেল, সেখানে তুমি তিন-চারটে প্রশ্ন পর পর পেরে গেলে। ফলে সময় নষ্ট না করে তোমার মতো প্রশ্নপত্র উত্তর করে ফেললে।

Advertisement

কোচিং ক্লাসগুলিতে যা পড়ানো হচ্ছে তা প্রতি দিন শেষ করা চাই। কোনও কারণে পড়া জমিয়ে রাখলে পরে নিজেই তা ধরতে পারবে না। এবং এক সময় অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বে। মার খাবে তোমার প্রেপারেশন।

পরীক্ষায় প্রশ্ন বাছাইয়ের অনেক রকম পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারো। আমি যেমন গোটা প্রশ্নপত্রটা দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে পড়ে ফেলতাম। তার পর প্রশ্নগুলিকে নিজের মতো তিনটি স্তরে ভাগ করে নিতাম— সোজা, মাঝারি এবং শক্ত। সোজা ও মাঝারিগুলি করার পরই ধরতাম শক্ত প্রশ্নগুলি। তোমরাও নিজেদের সুবিধেমতো কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারো।

পরীক্ষার সময় কোনও প্রশ্নে দু’মিনিটের বেশি সময় দিও না। যদি দেখো তাতে হচ্ছে না, সঙ্গে সঙ্গে পরের প্রশ্নে চলে যাও।

প্রেপারেশন নেওয়ার সময় গোড়া থেকেই শক্ত বই এবং শক্ত শক্ত অঙ্ক করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রথমে বোর্ডের বইটি ভাল করে দেখো। সেখানকার অনুশীলনে যে সব অঙ্ক আছে, সেগুলি সল্‌ভ করো। সেখান থেকে যেগুলি ভাল প্রশ্ন সেগুলি আলাদা কোনও খাতায় টুকে রাখো। এর পর বাজারচলতি আইআইটি স্তরের বইগুলি দেখো। সেখানকার বিভিন্ন প্রশ্ন সল্‌ভ করো এবং গুরুত্বপূর্ণ ও অন্য ধরনের প্রশ্নগুলি আলাদা খাতায় এক সঙ্গে করে রাখো। যেগুলো পারবে না, শিক্ষকের সাহায্য নাও। প্রয়োজনে দু’এক বার প্র্যাকটিস করো। এগুলো হলে তখন আরও উচ্চ স্তরের বইগুলি দেখতে পারো।

পরীক্ষার অন্তত এক মাস আগে কোনও নতুন বিষয় বা অঙ্ক করতে যাবে না। এতে আত্মবিশ্বাসে আঘাত লাগতে পারে। বরং যা পড়েছ, সেগুলি ভাল করে রিভাইস করো। আগেই বলেছি, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্ক বা প্রশ্ন একটা বিশেষ খাতায় টুকে রাখো। আর একটা খাতা রাখতে পারো যেখানে তুমি সমস্ত ফর্মুলা লিখে রাখলে। সময় সময়ে দেখতে থাকো।

শেষে বলব, আইআইটি শুধু স্টুডেন্টের নয়, বাবা-মায়েদেরও মানসিকতার পরীক্ষা। কারণ অনেক সময়েই দেখেছি স্টুডেন্টরা মক টেস্টে একটু খারাপ করলে বাবা-মায়েরা তাদের বকেন। আমার মতে, বকুনির থেকে বরং স্টুডেন্টের পাশে দাঁড়ালে অনেক কাজে দেয়। এই পরীক্ষাটি শক্ত সে নিয়ে সন্দেহ নেই। ফলে বাবা মায়েরা যদি সব সময় তোমার পাশে থাকেন, তা হলে লড়াইটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এ দিক থেকে আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমার বাবা-মা সব সময় আমার পাশে থেকেছেন। ভুল হলেও উৎসাহ দিয়েছেন যাতে পরের বার আমি ঠিক করতে পারি। আর সেই কারণেই পরীক্ষায় সাফল্য পেতে আমার অসুবিধে হয়নি।

আদিস্বদীপ্ত আইআইটি খড়্গপুর-এ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পাঠরত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন