—প্রতীকী ছবি।
কম বয়সে কারও জলবসন্ত হলে অনেকেই মনে করেন, আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অধিকাংশ সময়ে এ কথা সত্যি হলেও মাঝে মাঝে জলবসন্তের ভাইরাস শরীরে থেকে যায়। এর প্রভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে দেখা দিতে পারে হার্পিস জ়স্টার বা শিঙ্গলস। সাধারণত, হার্পিস বলতে যে রোগটির কথা মাথায় আসে, সেটির থেকে কিছুটা আলাদা হার্পিস জ়স্টার।
রোগটি যেমন
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর বললেন, “ভ্যারিসেলা জ়স্টার নামে এক ভাইরাসই হার্পিস জ়স্টারের জন্য দায়ী। যদি কারও কোনও সময় জলবসন্ত হয়ে থাকে, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এই রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল হয়। মূলত ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সিদের মধ্যে হার্পিস জ়স্টার দেখা দেয়। তাঁদের মধ্যেও আবার যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যাঁরা ক্যানসার, এইচআইভির মতো রোগে ভুগছেন, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলেও এই রোগ হতে পারে।”
রোগের উপসর্গ
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হার্পিস শুনলে অনেকেই ধরে নেন হার্পিস সিমপ্লেক্স রোগের কথা। তবে আদতে এই রোগটির উপসর্গ ও ধরন চিকেন পক্সের সঙ্গে মেলে। জলবসন্তের ক্ষেত্রে সারা গায়ে ফোস্কার মতো দাগ দেখা দেয়। সঙ্গে দেখা দেয় জ্বর, গায়ে ও পেটে ব্যথা, মুখের ভিতরে ঘা হওয়ার মতো উপসর্গ। শিঙ্গলস হলেও এমন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। তবে তা হয় শরীরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। যেমন, মুখের, পিঠের, কোমরের বা বুকের এক দিকে অজস্র জলফোস্কা হয়, সেগুলির আশপাশের চামড়ার কিছুটা অংশ লাল হয়ে থাকে। এই ফোস্কার জায়গায় অসম্ভব যন্ত্রণা হয়। কিছু বিরল ক্ষেত্রে রোগীর গায়ে জলফোস্কা দেখা না গেলেও অসম্ভব ব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগী বুঝতে পারেন না আদতে কী হয়েছে।
চিকিৎসা যেমন
· হার্পিস জ়স্টারের চিকিৎসার জন্য সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। তবে চিকিৎসক সুবীরকুমার মণ্ডলের পরামর্শ, “যদি এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, তা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ও রোগটি দ্রুত চিহ্নিত করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।।”
· অনেক ক্ষেত্রে রোগী বা তাঁর পরিজনেরা হার্পিস সিমপ্লেক্স ও হার্পিস জ়স্টারের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না। নিজেদের মতো করে ব্যথার ওষুধ, ফোস্কার মলম ব্যবহার করেন। এতে ভুল চিকিৎসার ফলে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
· কিছু সময়ে ‘পোস্ট হার্পেটিক নিউরলজিয়া’ বলে এক ধরনের অবস্থা দেখা দেয় শিঙ্গলস রোগীদের মধ্যে। মূলত যাঁদের পিঠে, বুকে বা কোমরের কাছে জলফোস্কা হয়, তাঁদের মধ্যেই এটি দেখা দেয়। জ়স্টারের ফোস্কাগুলি সেরে গেলেও শরীরের ওই অংশটিতে ব্যথা থেকে যায়। নিউমোনিয়াও হতে পারে কিছু রোগীর।
· পোস্ট হার্পেটিক নিউরলজিয়া মূলত বয়স্কদের মধ্যে দেখা দেয়। তবে, ক্যানসার-সহ অন্য কোনও গুরুতর রোগে আগে থেকে আক্রান্ত হলে শিঙ্গলসের যন্ত্রণা বাড়তে পারে।
· এ-ও মনে রাখা জরুরি যে, হার্পিস জ়স্টার কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। জলবসন্ত হলে যেমন রোগীকে বিচ্ছিন্ন ভাবে রাখা হয়, হার্পিস জ়স্টারের ক্ষেত্রে তেমনটা দরকার নেই। শুধু সতর্ক থাকতে হবে, যদি সরাসরি সংক্রমিত অংশটির সঙ্গে অন্য সুস্থ ব্যক্তি সংস্পর্শে আসেন, তবে কিছু মাত্রায় এই রোগ তাঁরও হতে পারে। তবে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে নবজাতকদের নিয়ে। মা-বাবা বা কোনও নিকটাত্মীয়ের এই রোগটি হলে তাঁদের সদ্যোজাত শিশুদের কোলে না নেওয়াই উচিত।
হার্পিস জ়স্টার হওয়ার পরে ফোস্কাগুলি শুকিয়ে গেলেও অনেক সময় সংক্রমিত অংশে দাগ থেকে যায়। সন্দীপন জানাচ্ছেন, ফোস্কা ও তার দাগ ঢাকতে অনেকে রসুনের তেল, চুন ব্যবহার করেন। কিন্তু তাতে দাগ যায় না বরং ক্ষতির ভয় থাকে।