দ্রুত বেড়ে চলেছে অ্যালঝাইমার্স রোগের প্রকোপ

দশ বছর আগেও যে রোগকে আলাদা করে এ দেশে চিহ্নিত করা হয়নি, আগামী দশ বছরে সেই রোগই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে। সারা বিশ্বে ২০০০ সাল থেকেই অ্যালঝাইমার্স রোগটি দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতে ২০০৫ অবধি অ্যালঝাইমার্সকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়নি।

Advertisement

সুমনা কাঞ্জিলাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:৫০
Share:

দশ বছর আগেও যে রোগকে আলাদা করে এ দেশে চিহ্নিত করা হয়নি, আগামী দশ বছরে সেই রোগই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে।

Advertisement

সারা বিশ্বে ২০০০ সাল থেকেই অ্যালঝাইমার্স রোগটি দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতে ২০০৫ অবধি অ্যালঝাইমার্সকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। ডিপ্রেশন, স্কিৎজোফ্রেোনিয়া, বাই-পোলার ডিসঅর্ডার, পারকিনসন্স এইরকম বহু রোগের সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স রোগীদেরও ‘পাগল’ বলে চিহ্নিত করা হত। কিন্তু ২০০৫ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সচেতনতায় এই রোগগুলিকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতি বছরের রোগীদের বিষয়ে সমীক্ষা রেকর্ড রাখা সম্ভব হচ্ছে। ২০১৪-’১৫-র সমীক্ষা অনুযায়ী, এ দেশে এই রোগ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু চিন্তায় ফেলেছে গুড়গাঁওয়ের ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টারের তথ্য। যে তথ্য বলছে, গোটা ভারতে ২০২৫-এর মধ্যে অ্যালঝাইমার্স রোগটি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে।

Advertisement

‘অ্যালঝাইমার্স’ মূলত বার্ধক্যজনিত রোগ। এই রোগ বৃদ্ধির কারণ গবেষণা করে দেখা যাচ্ছে, ভারতে মানুষের গড় আয়ু ইদানিং যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, আট বা নয়ের দশকে ভারতে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫ থেকে ৬৭ বছর। ২০১৪-২০১৫-য় তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ থেকে ৮০ বছর হয়েছে। ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টারের গবেষক অভিজিৎ মণ্ডল বলেন, “সচেতন না হলে এই রোগ মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে। যদি বৃদ্ধ বয়সে ভাল থাকতে চান তবে কাজ শুরু করতে হবে ৪০ বছর বয়সে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের পাশাপাশি ব্রেন বা মস্তিষ্কের পরীক্ষা করানো জরুরি। ৪০ বছর বয়েসে মহিলাদের এবং পুরুষের ৪৫ বছর থেকে এই পরীক্ষা জরুরি।’’

‘অ্যালঝাইমার্স’ আসলে কী? মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক বা কেমিক্যালে ভরা। ধীরে ধীরে মস্তিস্কের সেলগুলি নষ্ট হতে থাকে। তখন কোনও মানুষ বা জায়গা চিনতে পারা যায় না। মস্তিস্কের সংরক্ষণ প্রণালী নষ্ট হয়ে যায়। গ্রামে এখনও এদেরকে পাগল বলা হয়।

যে কোনও মানুষের এই রোগ হতে পারে।

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কী? দিল্লির আর এক মস্তিস্ক বিশেষজ্ঞ মঞ্জুরী ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘কোনও কিছু ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু রোজকার জীবনে প্রতিটা জিনিস ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক। দায়িত্বশীল মানুষ যখন হঠাৎ সব দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তখন এক কথা বারবার বলা, এবং খুব পরিশ্রমী মানুষ হঠাৎ অলস হয়ে পড়েন, তখন অবশ্যই তাঁর কাছের লোকেদের সচেতন হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।’’

ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টার মানুষের সচেতনতার জন্য এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। অভিজিৎ মণ্ডলের নেতৃত্বে একদল তরুণ গবেষক এই কাজ করছেন। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাই সকলে ৪০ বছরের পর মস্তিষ্কের পরীক্ষা করান। আমাদের গাড়ি পাঠিয়ে রিসার্চ সেন্টারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা এবং বিনা মূল্যে শুধু নয়, এই পরীক্ষা যারা করাবেন তাঁদের আমাদের তরফ থেকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়।’’ বাঁকুড়ার সোনামুখী গ্রামের ছেলে অভিজিৎ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। ইউরোপ-আমেরিকায় গবেষণার কাজ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে নিজেকে সচেতন হতে হবে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় স্ট্রেস থাকবেই। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রোজকার জীবনে শরীরচর্চার সঙ্গে খাদ্য তালিকায় জাম, মাশরুম, ব্রকোলি মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজন। আলাদা আলাদা ঘরে আলাদা আলাদা রঙের ব্যবহার বাসস্থানের একঘেঁয়েমি কাটিয়ে তুলবে। নিয়মিত ভাল গান শোনাও এক ধরনের মানসিক চর্চা।’’

চিকিৎসকদের পরামর্শ, সাদা ক্যানভাসে একটা রঙের দাগ যেমন সুন্দর ছবি তৈরি করতে পারে, তেমনই সেই রঙের ভুল ব্যবহার ক্যানভাসটিকে নোংরা করে দেয়। তাই সচেতন হোন। চিন্তার আবর্জনা যেন মস্তিষ্কের পরিবেশকে দূষিত করে না ফেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন