যৌবন পেতে বদ্ধপরিকর ব্রায়ান জনসন। ছবি : সংগৃহীত।
ব্রায়ান জনসন— নাম শুনলে চেনা চেনা ঠেকতে পারে, কারণ আমেরিকার দুই খ্যাতনামী তারকা ব্রায়ান অ্যাডামস এবং রবার্ট জনসনের নাম এবং পদবি মিশে আছে তাঁর নামে। আশির দশকে তাঁর নামের এক ব্রিটিশ গায়কও ছিলেন। কিন্তু ইনি কোনও গায়ক নন। বরং ৪৭ বছর বয়সি এই আমেরিকান তরুণকে ‘এ কালের যযাতি’ বলা যেতে পারে।
ভাগবত পুরাণে যে চন্দ্রবংশীয় রাজা যযাতির কাহিনি রয়েছে, তিনি তাঁর শরীরে জরা আটকাতে নিজের পুত্রের যৌবন চেয়ে নিয়েছিলেন এবং হাজার বছর ধরে উপভোগ করেছিলেন ইন্দ্রিয়সুখ। ব্রায়ানও যৌবন পেতে বদ্ধপরিকর। এবং তার জন্য নিজের পুত্রের শরীর থেকে লিটারখানেক প্লাজ়মা নিতে তাঁর বাধেনি।
যৌবন ফিরে পেতে বিবিধ চেষ্টা করেছেন ব্রায়ান। তার মধ্যে একটি ছিল অপারেশন ব্লুপ্রিন্ট। ওই পদ্ধতিতে প্রতি ছ’মাস অন্তর ১ লিটার করে প্লাজ়মা নিতে হয় ব্রায়ানকে। অন্য অনেক প্লাজ়মাদাতার পাশাপাশি ব্রায়ান তাঁর নিজের পুত্রের থেকেও প্লাজ়মা নিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই পন্থা কাজ না করায় হতাশ ব্রায়ান অন্য পথের সন্ধান শুরু করেন। সম্প্রতি তেমনই এক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন ব্রায়ান।
যৌবন ফিরে পেতে বিবিধ চেষ্টা করেছেন ব্রায়ান। তার মধ্যে একটি ছিল অপারেশন ব্লুপ্রিন্ট। ছবি : সংগৃহীত।
ব্রায়ান পেশায় এক জন উদ্যোগপতি এবং পুঁজি ব্যবসায়ী। আবার তিনি বইও লেখেন। সেই সঙ্গে চালিয়ে যান নিজের যৌবন ধরে রাখার চেষ্টা। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের কথা মানুষ জানতে পারেন ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ হওয়ার পরে। সেই তথ্যচিত্রের নাম ছিল ‘ডোন্ট ডাই: এ ম্যান হু ওয়ান্টস টু লিভ ফরেভার’, যার বাংলা অর্থ— মৃত্যু নয়, যে মানুষটি চিরকাল বাঁচতে চান।
এ হেন ব্রায়ান সম্প্রতি হাইপারবেরিক অক্সিজেন থেরাপি করিয়েছেন যৌবন ফিরে পাওয়ার জন্য। তিনি বলছেন, ওই থেরাপির জন্য তাঁকে ৫৪০০ মিনিট অর্থাৎ ৯০ ঘণ্টা একটি বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রিত বদ্ধ ট্যাঙ্কে কাটাতে হয়েছে। তার ফল? ব্রায়ান বলেছেন ‘পরীক্ষা সফল’!
হাইপারবেরিক অক্সিজেন থেরাপি কী?
ব্রায়ান জানাচ্ছেন, আসলে এটি অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি, যা আয়ু বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখতে সহায়ক। এই থেরাপি বহু খেলোয়াড় করিয়েছেন। এই থেরাপি করানো হয় স্ট্রোক হওয়া রোগীদেরও। ব্রায়ান বলছেন, ‘‘এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গেলে বয়সজনিত বা অন্যান্য কারণে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি মেরামত তো হয়ই, পাশাপাশি সার্বিক কর্মক্ষমতাও বাড়ে। বাড়তে পারে আয়ুও।’’
এখন ব্রায়ান জনসন। ছবি : সংগৃহীত।
পদ্ধতিটি কী রকম?
একটি চেম্বার বা প্রকোষ্ঠকে দূষণমুক্ত অক্সিজেনে ভরিয়ে সেই ঘরে প্রতি দিন ১ ঘণ্টা করে কাটাতে হবে। নিখাদ অক্সিজেনে ভাল ভাবে শ্বাস নিতে হবে। ব্রায়ান সে ভাবেই ৯০ দিন কাটিয়েছেন ওই প্রকোষ্ঠে। অর্থাৎ, প্রতি দিন এক ঘণ্টার হিসাবে ৯০ ঘণ্টা বা ৫৪০০ মিনিট।
ফল কী হয়েছে?
ব্রায়ান তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ইনস্টাগ্রাম ভিডিয়োতে। তিনি বলছেন, ‘‘ফল যা হবে বলে ভেবেছিলাম তার থেকেও ভাল হয়েছে। আমার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছ, শরীরের মাত্রাতিরিক্ত প্রদাহ নেই। অ্যালঝাইমার্স অন্তত ২৮.৬ শতাংশ কমেছে। পেটের ভাল ব্যাকটিরিয়া অনেকখানি বে়ড়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল বয়স বাড়লে ক্রোমোজ়োমের যে টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য কমে যায়, তা এই চিকিৎসার পরে বেড়েছে আমার। আমি মনে করি, এ পর্যন্ত আয়ু বৃদ্ধির জন্য যা যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে কার্যকরী।’’