Bobo Calcutta at CIMA Art Gallery

রংকে ভয় পেতেন, সেই বোবোর শিল্প এত রঙিন কী ভাবে? সিমা গ্যালারিতে প্রাক্-প্রদর্শনী আড্ডা

সিমা গ্যালারিতে প্রদর্শনীর আগে ‘বোবো ক্যালকাটা’র প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্যাশন ডিজ়াইনার বোবো ওরফে আয়ুষ্মান মিত্রের সঙ্গে সকলকে আলাপ করালেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৩৭
Share:

‘বোবো ক্যালকাটা’র প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্যাশন ডিজ়াইনার। নিজস্ব চিত্র।

বালিগঞ্জের ‘সিমা’ গ্যালারিতে বাৎসরিক প্রদর্শনী ‘আর্ট ইন লাইফ’-এর সূচনাপর্ব সম্পন্ন হল। প্রাক্‌-পুজো প্রদর্শনীতে শাড়ি, গয়না, ব্যাগ, নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী, গৃহসজ্জার উপকরণের সম্ভার সাজানো প্রায় শেষ। প্রদর্শনীর আগে ‘বোবো ক্যালকাটা’র প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্যাশন ডিজ়াইনার বোবো ওরফে আয়ুষ্মান মিত্রের সঙ্গে সকলকে আলাপ করালেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন। দর্শকাসনে ভিড় জমিয়েছিলেন ‘লেডিজ় স্টাডি গ্ৰুপ’ নামের একটি অসরকারি সংস্থার সদস্যেরা। সিমা গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকারের উদ্যোগে মুখোমুখি ফ্যাশন ডিজ়াইনার এবং অভিনেত্রী।

Advertisement

গ্যালারির একটি কোণে মেলে ধরা হয় ‘বোবো ক্যালকাটা’র শিল্প। আঁকা থেকে পোশাক, রঙিন হয়ে উঠেছে দেওয়াল। সুতি, হাবুতাই সিল্ক, অর্গ্যানজ়া, নানাবিধ কাপড়ে বোবোর আঁকা। কখনও সমগ্র পোশাকই যেন বোবোর ক্যানভাস। আবার কখনও গোটা পোশাকের কোনও কোনও অংশে ফুটে উঠেছে তাঁর শিল্পের ছোঁয়া। বোবোর নতুন এই সম্ভারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফোর্ট্রেস অফ সলিটিউড’। যেখানে প্রেমই মূল চরিত্রে।

মুনমুন সেনের সঙ্গে বোবো ওরফে আয়ুষ্মান। নিজস্ব চিত্র।

মুনমুনের কাছে বোবোর স্বীকারোক্তি, তিনি প্রেমিক মানুষ। প্রেমের উন্মাদনাই তাঁর শিল্পে ফুটে ওঠে বার বার। নতুন এই সম্ভারে অবশ্য নিজের ভিতরে ভালবাসা খুঁজে পাওয়ার কথাই বেশি বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ক্ষত এবং হারানোর বেদনা, প্রেম, শোকের কথা। সেই সঙ্গে যৌন আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান, উদ্‌যাপন এবং শেষ পর্যন্ত এক গভীর উপলব্ধি— যেখানে সব কিছু মিলেমিশে তৈরি হয়েছে ২০২৫ সালের পুজোর শিল্পসম্ভার। আসলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন এ বারের সমস্ত কাজ এঁকেছিলেন বোবো। তাই সম্ভবত নিঃসঙ্গতাই আনন্দে উদ্ভাসিত এই সমস্ত শিল্পকর্মে।

Advertisement

‘‘তোমার পোশাকে এত রং কেন বোবো?’’ মুনমুনের প্রশ্নের উত্তরে ডিজ়াইনার জানাচ্ছেন, তিনি আগে রংকে ভয় পেতেন। রংকে তিনি সামলাতে পারতেন না। তাই শুরুর দিকে সাদা আর কালোর উপরেই ভরসা ছিল তাঁর। কিন্তু যে দিন রংকে জয় করতে পারলেন, সে দিন থেকে রঙের হাত ছাড়েননি বোবো। আর তাই একই সঙ্গে ‘বোবো ক্যালকাটা’র সমস্ত পোশাকে রঙের এত খেলা! কিন্তু মুনমুন জানালেন, বোবো নাকি ধীরে ধীরে ফের সাদা-কালোর দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু কেন? এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা এত রঙের সঙ্গে স্বচ্ছন্দ নন, তাই বোবো নিজের সম্ভারে সাদা-কালোর জায়গাও রেখেছেন।

সিমা গ্যালারিতে ফ্যাশন-আড্ডা। নিজস্ব চিত্র।

রঙের মতো লিঙ্গের ছকেও বাঁধতে চায় না ‘বোবো ক্যালকাটা’। তাই নতুন শিল্পসম্ভারে নারী-পুরুষদের ভিন্ন পোশাক নেই। ‘বোবো ক্যালকাটা’র শুরুটাই ছিল সমাজ নির্ধারিত লিঙ্গ ভেদাভেদের বাইরে থেকে। নিজের দাদু, শিল্পী গোষ্ঠকুমারকে বোবো দেখতেন, পুরুষ হয়ে আলপনা দিচ্ছেন, ছবি আঁকছেন, কনে সাজাচ্ছেন, ঘর সাজাচ্ছেন, স্থাপত্যশিল্পের কাজ করছেন, রান্না করছেন। নারী-পুরুষের ছকের বাইরে কাজ করার ইচ্ছে সে সময় থেকেই তৈরি হয়েছিল বোবোর। পরবর্তীতে ভাই রাহুলের সঙ্গে নিজের শিল্পকে পোশাক ও সাজের জগতে নিয়ে আসেন বোবো।

বোবোর শিল্পনিদর্শন। নিজস্ব চিত্র।

সিমা গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকারের কথায়, ‘‘১৯৯৩ সাল, অর্থাৎ যে দিন থেকে সিমা গ্যালারির পথচলা, তখন থেকেই শিল্পের সমস্ত ধারাকে একত্রে আনতে চেয়েছি আমরা। ছবি আঁকা, স্থাপত্যশিল্পের পাশাপাশি পোশাক ডিজ়াইনিং, ফ্যাশন, আর্কিটেকচারকেও জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এগুলি শিল্পেরই বিভিন্ন ধারা। বোবো তো একজন শিল্পী। তাই বোবোর পোশাক গ্যালারিতে শিল্পকর্ম হিসেবেই জায়গা পেয়েছে।’’

১৯৯৭ সালে ‘আর্ট ইন লাইফ’ প্রকল্প শুরু হয় সিমা গ্যালারিতে। কেবল শহরের নয়, গ্রামীণ শিল্পীদেরও কাজ জায়গা পায় সেখানে। নতুন করে গিফ্‌ট শপ তৈরি হয় গ্যালারিতে, যেখানে গ্রামীণ শিল্পকলার প্রচার শুরু করা হয়। প্রতি বছর এই প্রদর্শনীর অন্যতম অভিমুখ থাকে সেই গিফ্‌ট শপ। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিমা গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী চলবে। গ্যালারি খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement