সাজের ভিতটা ঠিক কী? পোশাক, না কি অলঙ্কার? এ নিয়ে রয়েছে নানা মত। কারও কাছে পোশাককে দশ গোল দেবে গয়না, কারও কাছে উল্টো। কিন্তু সাজের জগতে গয়না যে গুরুত্বপূর্ণ, তা কেউ অস্বীকার করবেন না। আর তাই পুজোর আগে গয়নার বাজার যে জমজমাট হবেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রুপো বা সোনার দামে ভাটা পড়ুক বা জোয়ার উঠুক, দোকানে মানুষের ভিড়ে খামতি পড়বে না।
মা, মাসি, কাকিমা থেকে শুরু করে কলেজপড়ুয়া মেয়েটি— কারও পছন্দ হবে একজোড়া চাঁদবালি, কারও বা পাতলা সোনার চেন, কারও আবার সীতাহার, কেউ বা খুঁজে বেড়াবেন আধুনিক নকশার মিক্সড-মেটাল গয়না। মাত্র শুরু হয়েছে পুজো, বাকি দিনগুলিতে সাজের জন্য গয়নার কিছু নকশা রইল।
পুজোয় এ বার রোদ-বৃষ্টির পালাবদল চলবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভ্যাপসা গরম রোজের সঙ্গী। তাই ভারী সাজের পরিকল্পনা থাকলেও তা পাল্টে ফেলতে হচ্ছে হাওয়া বুঝে? তা হলে হালকা, অভিজাত সাজেই জাঁকজমকের প্রয়োজন। ‘জলসাঘর’-এর পুজোর সম্ভারে রয়েছে এমনই গয়না।
পুজোর নয়া সম্ভার ‘রজঃ’-য় রাখা হয়েছে ফুলের মোটিফ দেওয়া গয়না। ওড়িশার হারিয়ে যাওয়া ফিলিগ্রি কাজগুলি ফিরিয়ে আনা হয়েছে এ বারের পুজোর সম্ভারে। লম্বা হার, গলার চোকার, কানের দুল, নাকের নথ— সবই জমকালো অথচ হালকা। কেবল পুজো নয়, অফিসযাত্রীদের জন্যও এমন গয়না পরা যায়।
সোনার বদলে রুপো বেশি পছন্দ? বাংলার চিরাচরিত সোনার গয়না যদি রুপোয় পান, তবে তো সত্যিই সোনায় সোহাগা। পছন্দের নকশা, অথচ দাম তত বেশি নয়। হাতের নকশা গয়না সচরাচর সোনা দিয়েই গড়া হয়। কিন্তু তা তৈরি হতে পারে রুপো দিয়েই। ঠিক যেমন ‘গহনে’-র হাতের কঙ্কন চূড় ও গোলাপ নকশা আংটি। একই ফিনিশ, একই পালিশ। ৯২.৫ শতাংশ রুপো দিয়ে তৈরি, উপরে সোনার পালিশ। সোনার পরিচিত গয়নার নকশা পাওয়া যাবে রুপোর দামে।
জড়োয়া ও নকশা, দুই-ই পছন্দ, তা হলে একটি বাদ পড়বে কেন? নকশাপ্রধান গয়নায় থাকুক জড়োয়ার ছোঁয়া। ‘গহনে’-র মাছ নকশার রত্নখচিত হার তেমনই এক গয়না। মাছ নকশার গয়না অনেকেই পছন্দ করেন। তার উপরই কয়েকটি পাথর বসানো হয়েছে। তবে কেবল হার নয়, সঙ্গে সাজুন এমনই ত্রিভুজ কানবালা দিয়ে। দুলের নীচে থাকুক মুক্তোর ছোঁয়া।
পুজোর কোনও একটি রাতে জমকালো সাজ চাই। সোনার পালিশ করা রুপোর গয়নার সেট থেকেই গোটা সাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারেন। 'গহনে'-র নয়া সম্ভারে রয়েছে এমনই আরও নানা রকমের সোনার জল করা রুপোর গয়নাগাটি। তিন ফুল নকশা ঝালর হার, গোলাপ নকশা চোকার, ময়ূর পাশা, মুক্তো বসানো ময়ূর নথটানা, ঠোকাই নকশা করা টিকলি।
হাতফুল বা রতনচূড় বাঙালির অনুষ্ঠানের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। একটিই গয়না। ঢেকে রাখে কব্জি, হাতের পিঠ থেকে আঙুল পর্যন্ত। এমন গয়না বাঙালির সাজের ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহু দিন। সচরাচর ভারী সাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু নতুন প্রজন্মের সাজগোজে রতনচূড় হালকা সাজসামগ্রীর দলেও ভিড়ে যায় মাঝে মধ্যে।
হালকা রতনচূড়ও কিনে ফেলতে পারেন পুজোর ফুরফুরে সাজের জন্য। ‘আর্থামেন্টস’-এর পুজো সম্ভারে মিলবে এমনই এক গয়না। হাতের পিঠে থাকে চাঁদ ও তারা, জুড়বে আঙুলের আংটি ও কব্জির হারকে। তবে সবেচেয়ে বেশি নজর কাড়তে পারে এমন একটি মুকুট। পুজোর সেরা সাজটির জন্য তোলা থাক এমনই একটি গয়না।
চন্দ্র, মৎস্য, তারার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া রয়েছে চারটি চেন। মাথা ও কপাল ঢেকে রেখেছে এই মুকুট। প্রাচীন সাজের সামগ্রীকে নয়া প্রজন্মের জন্য উপযোগী করে তোলা হয়েছে। যে কোনও পোশাক, শাড়ি বা ড্রেসের সঙ্গে ‘আর্থামেন্টস’-এর মুকুটের মতো এমনই একটি গয়না পরে ফেললেই সাজ সম্পূর্ণ।
হাতে বানানো গয়নাও থাকতে পারে এ বারের পুজোর সাজে। রংবেরঙের সুতো দিয়ে, তার উপর পুঁতি বসিয়ে তৈরি করা গয়না। জমকালো, অথচ পরলে ভার বোধ হয় না। পুজোয় হালকা সাজের দিন এমন গয়নার জুড়ি মেলা ভার। যেমন ‘পোটলি গোপাল’-এর কানের দুল আর ব্রোচ।
মাছপ্রেমী বাঙালির সাজগোজে বার বার মাছের চিহ্ন পাওয়া যায়। এই পুজোয় মাছের নকশা করা হারের পর মাছের আদলের কানের দুলও মন্দ হয় না। তায় আবার রঙিন মাছ! তা ছাড়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানানসই ব্রোচও পরতে পারেন। শাড়ি বা পাঞ্জাবিতে পাখি আঁকা ব্রোচ আটকে দিলে সাজে যোগ হবে অন্য মাত্রা।