Dharmendra Death

জিন্‌স থেকে বো-টাই দুরস্ত পশ্চিমি ফ্যাশনে সাবলীল, ধর্মেন্দ্র পর্দায় লুঙ্গিও পরেছেন! কী ছিল তাঁর স্টাইল-স্বাক্ষর?

সে কালে নায়কদের ধুতি-পাঞ্জাবি, স্যুট, কুর্তা-পাজামা পরতেই দেখা যেত বেশি। ধর্মেন্দ্র বেছে নিলেন ক্যাজ়ুয়াল ফ্যাশন। কিছুটা আমেরিকান কাউবয়ের ধাঁচের স্টাইল দেখা গেল তাঁর পোশাক-আশাকে। যা সে কালের যুব সম্প্রদায়কেও প্রভাবিত করল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:২৩
Share:

ছবি : সংগৃহীত।

দেখতে সুপুরুষ। উচ্চতাও প্রায় ৬ ফুটের কাছাকাছি। পেটানো ঝরঝরে চেহারা। চোখের নজরে, হাসিতে মার্জিত-সৌম্য ভাব। জন্মসূত্রে জাট ধর্মেন্দ্রকে পর্দায় দেখে এক নজরেই মন দিয়ে ফেলেছিলেন ভারতীয় সিনেমার দর্শকেরা। তখন অবশ্য বলিউডে রাজেশ খন্না, অমিতাভ বচ্চন আসেননি। কপূর পরিবারের সুদর্শন পুত্র শশী কপূর সিনেমা জগতে পা রাখবেন এক বছর পরে। বলিউডের গগনে পুরোদমে বিরাজ করছেন, দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার, শাম্মি কপূরের মতো অভিনেতারা। জাটপুত্র তাঁদের মধ্যেই নিজের জন্য আলাদা জায়গা বানিয়ে নিলেন। অভিনয়ে তো বটেই, আলাদা ভাবে নজর কাড়তে শুরু করল তাঁর অন্য রকম ফ্যাশনও!

Advertisement

কাউবয় স্টাইল নিয়ে এসেছিলেন ধর্মেন্দ্র।

সে কালে নায়কদের ধুতি পাঞ্জাবি, স্যুট, কুর্তা-পাজামা পরতেই দেখা যেত বেশি। না হলে শার্ট আর ফরম্যাল প্যান্ট। ট্যুইস্ট জমানা তখন শুরু হয়েছে পশ্চিমে। ড্রেনপাইপ প্যান্ট, সুচালো জুতো আর আলোহা শার্টের এলভিসছায়া পড়ছে বলিউডেও। ধর্মেন্দ্র বেছে নিলেন ক্যাজ়ুয়াল ফ্যাশন। কখনও লেদার জ্যাকেট পরলেন, কখনও ডেনিমের। ফর্ম্যাল বা ড্রেনপাইপ ট্রাউজ়ার্সের বদলে বেছে নিলেন ঢিলেঢালা জিন্‌স। গলায় টাইয়ের বদলে বাঁধলেন রঙিন স্কার্ফ। খানিকটা আমেরিকান কাউবয়ের ধাঁচের ওই স্টাইল সে কালের যুব সম্প্রদায়কেও প্রভাবিত করল। ধর্মেন্দ্রের সেই ফ্যাশন স্টেটমেন্টে এক নজর দেওয়া যাক।

ডেনিম অন ডেনিম

Advertisement

‘শোলে’র দৃশ্যে ডেনিম অন ডেনিম লুক।

‘ডেনিম অন ডেনিম’ এখন ট্রেন্ডিং ফ্যাশন। যে ফ্যাশনে শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ এবং নিম্নাঙ্গের পোশাক— উভয়ই ডেনিমে তৈরি। ডেনিমের শার্ট পরলে ডেনিমেরই প্যান্ট পরতে হবে। এ যুগে ওই ফ্যাশনকে নানা আঙ্গিকে ফেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে। ধর্মেন্দ্র কিন্তু অমন পোশাক পরে ফেলেছেন বছর পঞ্চাশেক আগেই। ‘শোলে’-তে জয়ের বাইকে ডেনিম জ্যাকেট, জিন্‌সের সঙ্গে নীল টি-শার্ট পরা বীরু-রূপী ধর্মেন্দ্র সে যুগেও ডেনিম ফ্যাশনকে প্রভাবিত করেছিলেন।

জ্যাকেট

লেদার জ্যাকেট, সানগ্লাসে নায়ক।

জ্যাকেট পরতে ভালবাসতেন। নানা ধরনের জ্যাকেট পরেওছেন ধর্মেন্দ্র। কখনও বাদামি চামড়ার ডবল ব্রেস্টেড ব্লেজ়ার। কখনও ট্যুইডের জ্যাকেট। ডেনিম জ্যাকেট, স্যুট, ব্লেজ়ার, নেহরু জ্যাকেট এমনকি শার্টের সঙ্গে ওয়েস্টকোটও পরেছেন ধর্মেন্দ্র। ছবিতে ধর্মেন্দ্র রয়েছেন মানে তাঁকে কোনও না কোনও দৃশ্যে কোনও কোনও জ্যাকেট পরে দেখা যাবেই। এতটাই প্রেম ছিল তাঁর জ্যাকেটের প্রতি।

বো টাই

ধর্মেন্দ্রের প্রিয় বো-টাই।

সে যুগের সিনেমায় নায়কদের আগমন মানেই পর্দায় তিনি আসবেন পরিপাটি অবতারে স্যুট আর টাই পরে। তবে ধর্মেন্দ্র টাই নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালবাসতেন। বো-টাই ছিল তাঁর প্রিয়। বহু সিনেমায় কোটের সঙ্গে বো-টাই পরেছেন। শুধু শার্টের সঙ্গে বো-টাই পরেও হাজির হয়েছেন বহু দৃশ্যে। সরু-মোটা নানা রকম টাই পরেছেন। তবে তার বাইরে টাইয়ের জায়গায় গলায় সিল্কের স্কার্ফও বেঁধেছেন বিভিন্ন ভাবে। এমনও হয়েছে, ডেনিম শার্টের সঙ্গে গলায় সিল্কের প্রিন্টেড স্কার্ফের একটি ফাঁস দিয়ে রেখেছেন। আবার ছবিতে মধ্যবিত্ত যুবকের চরিত্রে সাধারণ শার্ট-ট্রাউজ়ার আর কোলাপুরি চপ্পল পরেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে গলায় অনেকটা টাইয়ের মতো গিঁট বেঁধে ঝুলিয়ে নিয়েছেন সরু রঙিন স্কার্ফ।

সোয়েটার

ঢোলা জিন্‌সের সঙ্গে হাইনেক সোয়েটার।

গোলগলা বা হাই নেক সোয়েটার বা সোয়েট শার্ট ছিল ধর্মেন্দ্রের স্টাইল স্টেটমেন্ট। প্লেন ডেনিমের ঢিলে প্যান্টের সঙ্গে তেমন হাইনেক উলের সোয়েটার পরে যখন পর্দায় আসতেন নায়ক, তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন বহু মহিলা ভক্ত। আবার গোল গলার একরঙা সোয়েটারের সঙ্গে ব্লেজ়ার পরতেও দেখা গিয়েছে ধর্মেন্দ্রকে। তবে তাঁর সেরা সোয়েটার পরার স্টাইল যা সে যুগের যুবসমাজকে প্রভাবিত করেছিল, তা হল গলায় সোয়েটার বেঁধে রাখা। পিঠের উপরে সোয়েটারটিকে ফেলে গলায় হাতা দু’টি দিয়ে ফাঁস দিয়ে রাখতেন নায়ক। বহু ছবিতে এমনকি, বহু গানের দৃশ্যেও ধর্মেন্দ্রকে ওই ভাবে গলায় সোয়েটার বেঁধে রাখতে দেখা গিয়েছে।

ফিটেড শার্ট

প্রিন্টেড শার্টের ফ্যাশন জনপ্রিয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র।

তবে ধর্মেন্দ্র সম্ভবত সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন তাঁর শার্টে। নানা ধরনের শার্ট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। ডেনিম শার্টের প্রতি তাঁর কিছুটা বাড়তি দুর্বলতা ছিল। তবে তার বাইরে চেকড বা স্ট্রাইপড বা নানা ধরনের ক্যাজ়ুয়াল শার্ট পরতেও ভালবাসতেন ধর্মেন্দ্র। তাঁর প্রিন্টেড শার্টের ফ্যাশনও আলোড়ন ফেলেছিল ষাটের দশকে।

ছক ভাঙা

ধরম বীর ছবিতে ধর্মেন্দ্রের পোশাক।

তবে স্বাচ্ছন্দ্যের বাইরে বেরোতে দ্বিধা করেননি কখনও। পর্দায় তাঁকে নানা অদ্ভুত পোশাকেও দেখা গিয়েছে। ধরমবীর ছবিতে রোমান গ্ল্যাডিয়েটরদের আদলের ঊরু উন্মুক্ত করা পোশাক পরেছিলেন। পায়ে পরেছিলেন গ্ল্যাডিয়েটর শ্যু। আবার স্লিভলেস জ্যাকেটের সঙ্গে লেদারের আঁটোসাঁটো প্যান্ট, হান্টার শ্যু, কোমরে চওড়া বেল্ট আর গলায় নানা রকম বিডস বা পুঁতির মালা পরেও পর্দায় অবতীর্ণ হতে দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে।

লুঙ্গি-কুর্তাতেও অনায়াস ধর্মেন্দ্র।

ধুতি-পাঞ্জাবিতে সম্ভবত খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। তাই ওই পোশাকে পর্দায় কমই দেখা গিয়েছে। তবে যখন পরেছেন, তখন দেখে তা বোঝা যায়নি। ‘অনুপমা’, ‘সত্যকাম’, ‘মেরে হমদম মেরে দোস্ত’ ছবিতে ধোপদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবিতে একই রকম সুপুরুষ দেখতে লেগেছে তাঁকে। আবার এই তিনিই সোনালি পাড় লাল ধুতি পরে দক্ষিণী নর্তকদের পোশাক পরে নেচেওছেন। সোজা কথায়— আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাই যে পোশাকই পরেছেন, তা পরেছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। ফলে তা কখনও বেমানান লাগেনি। পৌরুষময় ধর্মেন্দ্র যেমন চওড়া বেল্ট আর গলায় রুমাল বাঁধা কাউবয়ের ইমেজে সাবলীল, তেমনই ‘গুড্ডি’ ছবিতে যখন তিনি নিজের ভূমিকাতেই অবতীর্ণ, তখন ঘরোয়া লুঙ্গি-কুর্তাতেও তিনি সমান অনায়াস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement