উপকার হবে ভেবে প্রসাধনীর দোকান থেকে ভিটামিন সি সিরাম কিনে মাখছেন? এর ফল কী হতে পারে? ছবি: সংগৃহীত।
বহু দিন পর পৃথার সঙ্গে দেখা তমার। বয়স চল্লিশ কে বলবে! ত্বকের দীপ্তি সদ্যযুবতীর মতো। বলিরেখা নেই, মুখ টানটান। অথচ তমার মুখে লাবণ্য ফুরিয়েছে কবেই। কথায় কথায় তমা জেনেছিলেন, নিয়মিত ভিটামিন সি সিরাম মাখেন তাঁর বন্ধু। ব্যস, আর দেরি করেননি। দোকানে গিয়ে সিরাম কিনে আনেন। মেখেও ছিলেন দু-তিন দিন। তার পরেই ত্বকে অস্বস্তি, র্যাশ।
তমা প্রতীকী মাত্র। এর-ওর মুখে শুনেই কি রূপচর্চার প্রসাধনী বেছে নিচ্ছেন? মাখছেন সঠিক ব্যবহারবিধি না জেনেই? সে ক্ষেত্রে উপকারী সিরামও ক্ষতি করতে পারে ত্বকের। কারও যদি ত্বক স্পর্শকাতর হয় তা হলে ভিটামিন সি সিরাম থেকে ত্বকে জ্বালা, র্যাশ হতেও পারে জানাচ্ছেন কলকাতার ত্বকের রোগের চিকিৎসক আশারানি ভোল। তিনি বলছেন, ‘‘সাধারণত পিগমেন্ট বা মুখে কালচে দোগছোপ প্রতিরোধে এটি কার্যকর। তবে তা সানস্ক্রিনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সানস্ত্রিন ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।’’
ভিটামিন সি সিরাম কেন মাখবেন?
· অনুজ্জ্বল ত্বকে দীপ্তি ফেরায় ভিটামিনটি।
· ত্বকের কালচে ভাব বা পিগমেন্টেশন দূর হয় ভিটামিন সি-র ব্যবহারে।
· ত্বকের জন্য জরুরি হল কোলাজেন নামক প্রোটিন। এই প্রোটিনের অভাব হলেই চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে ভিটামিন সি।
· ফ্রি র্যাডিক্যালের ফলে ঘটা ত্বকের ক্ষতি রুখতে সাহায্য করে এটি।
আমেরিকার রূপচর্চা শিল্পী কেট সামারভিল জানাচ্ছেন, ত্বকের চিকিৎসায় এই ভিটামিনের প্রয়োগ করেন তিনি। কারণ, ত্বক টানটান রাখতে ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু কারা মাখবেন এটি? যে কোনও বয়সেই কি মাখা চলে? আশারানি জানাচ্ছেন, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, বলিরেখা পড়া, কালচে হয়ে যাওয়া এমন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ভিটামিন সি ব্যবহার করা যায়। পিগমেন্টেশন যাতে না হয়, সে জন্যও এটি মাখতে পারেন কেউ। সাধারণত, ১৭-১৮ বছর বয়সে ত্বকে এমন সমস্যা হয় না, তাই ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
ভিটামিন সি কখন, কী ভাবে, কোন পরিমাণে মাখতে হবে, সেটি জানা জরুরি। সিরামে বিভিন্ন মাত্রায় ভিটামিন সি মেশানো হয়। কোনওটিতে ৫ শতাংশ, কোনওটিতে ১০ বা ২০ শতাংশ পর্যন্তও থাকে। ত্বকের চিকিৎসকদের পরামর্শ, শুরুটা কম ঘনত্বের ভিটামিন সি দিয়েই শুরু করা ভাল। ত্বকে সয়ে গেলে মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। আমেরিকার ত্বকের চিকিৎসক প্যাট্রিসিয়া ওয়েক্সলারের কথায়, ‘‘ত্বকের ধরন তৈলাক্ত বা সাধারণ হলে ভিটামিন সি-তে থাকা এল এসকরবিক অ্যাসিড ভাল। তবে শুষ্ক বা স্পর্শকাতর জন্য ভাল ম্যাগনেশিয়াম অ্যাসকরবিয়াল ফসফেট, এটিও এক ধরনের ভিটামিন সি যুক্ত রাসায়নিক।’’
পিএইচ মাত্রা: পিএইচ মাত্রার উপর ভিটামিন সি ত্বকে কতটা শোষিত হবে নির্ভর করে। ত্বকের ধরন সাধারণ হলে ৩.৫ পিএইচ মাত্রার ফর্মুলা যথাযথ। ত্বকের ধরন স্পর্শকাতর হলে সেটি হওয়া দরকার ৫-৬।
সিরাম: সিরাম হিসাবে ভিটামিন সি-এর ব্যবহার জনপ্রিয়। সিরাম ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্যাট্রিশিয়ার মত, ভিটামিন সি, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই, ফেরুলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-এর সঙ্গে আরও ভাল কাজ করে। তবে ত্বকের ধরন স্পর্শকাতর হলে সিরামের বদলে ভিটামিন সি ময়েশ্চারাইজ়ার বা ক্রিমে কয়েক ফোঁটা যোগ করে মাখাই তুলনামূলক ভাল পন্থা। তবে ভিটামিন সি-র সঙ্গে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা রেটিনল জাতীয় উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করলে ত্বকে প্রদাহ হতে পারে, সতর্ক করছেন আভারানি।
ধীরে চলো নীতি: শুরুতেই প্রতিদিন নয়, বরং সপ্তাহে এক দিন মাখা উচিত। তার পর দিন বাড়ানো যেতে পারেন। কোনও কোনও রূপচর্চা শিল্পীর মতো, নিয়মিত মাখার চেয়ে সপ্তাহে তিন দিন মাখলেও ভাল ফল মিলতে পারে। তবে ভিটামিন সি সিরাম মাখলেই জাদুর মতো ত্বকে দীপ্তি ফিরবে, তা নয়। বরং ত্বকের চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে ফল পেতে অন্তত মাস খানেক বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে।
সংরক্ষণ: ভিটামিন সি যদি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তা হলে তার উপকারিতা মিলবে না, এমনকী ত্বকে সমস্যাও দেখা দিতে পারে জানাচ্ছেন চিকিৎসক আভারানি। এটি আলোতে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ফলে ভিটামিন এমন সি এমন স্থানে রাখা উচিত নয় যেখানে সূর্যালোক আসে বা গরম। বায়ুনিরোধী কৌটোয়, অন্ধকার জায়গায় সেটি রাখা প্রয়োজন।
এসপিএফ: সিরাম মাখার পর রোদে বেরোলে, হিতে বিপরীত হতে পারে। সূর্যালোকের সংস্পর্শে ত্বকে জ্বালা দিতে পারে, কালো হয়ে যেতে পারে। ভিটামিন সি সিরাম রাতে ব্যবহার করা ভাল। দিনে মাখলে তারপর ময়েশ্চারাইজ়ার এবার তার উপরে উচ্চ মাত্রার এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিনের ব্যবহার জরুরি।
তবে কারও কথা শুনে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ভিটামনি সি ব্যবহার জরুরি মনে করাচ্ছেন আশারানি। তিনি জানাচ্ছেন, ত্বকের চিকিৎসায় যে ভিটামিন সি তাঁরা ব্যবহার করতে বলেন, সেটি ওষুধের দোকানে মেলে, প্রসাধনীর বিপণিতে নয়।