Behala

Behala Street Art Festival: দেওয়াল জুড়েই দেওয়াল ভাঙার প্রয়াস বেহালা স্ট্রিট আর্ট ফেস্টিভ্যালে

মুক্তি শুধু ব্যক্তিমানুষের চাহিদা নয়, শিল্পের তাগিদও বটে। বেহালা পথশিল্প উৎসব তারই প্রত্যক্ষ প্রয়াস

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৫৪
Share:

আলো অন্ধকারের দ্বন্দ্বকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ। ছবি সৌজন্য: শুভম দাস

কলকাতার দেওয়াল বরাবরই খুব স্পষ্ট করে কথা বলে। রাজনীতির কথা, সমাজের কথা, শিল্পের কথা। বেহালায় শুরু হয়েছে এমন এক প্রদর্শনী, যা ফের এক বার মনে করিয়ে দিচ্ছে কলকাতার সেই রূপ। বেহালা নতুন সঙ্ঘের উদ্যোগে ও শিল্পী সনাতন দিন্দার নেতৃত্বে শুরু হয়েছে বেহালা স্ট্রিট আর্ট ফেস্টিভ্যাল, যা চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ বারের বিষয়বস্তু ‘আলো ও অন্ধকার’। সব মিলিয়ে ২৮ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন এই উৎসবে। সমাজের উপেক্ষিত শ্রেণির কথা থেকে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ, পাঁচিল, রাস্তা, চায়ের দোকান কিংবা বহুতলের দেওয়াল জুড়ে তৈরি করা বহুবিধ শিল্প কর্ম এক সুতোয় বেঁধেছে একাধিক স্তরকে।

Advertisement

সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্ককে আরও সহজ করাও এই শিল্প প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্দেশ্য। ছবি সৌজন্য: স্বপ্ননীল দাস

এই শিল্প উৎসবের কনভেনর হিসেবে রয়েছেন শিল্পী সনাতন দিন্দা। একে ভারতের প্রথম ‘কিউরেটেড আর্ট ফেস্টিভ্যাল’ বলে দাবি করে দিন্দা জানান, ‘‘আমরা আসলে একটি শিল্পের মেলা করতে চেয়েছি। যাঁরা এতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা সবাই যে প্রথাগত ভাবে ছবি আঁকেন এমন নয়। তবে প্রদর্শনী শুরু হওয়ার মাস চারেক আগে থেকে তাঁদের রীতিমতো পড়াশোনা করতে হয়েছে বিষয়বস্তু নিয়ে। এ বারের বিষয়বস্তু ছিল আলো আঁধারি।’’

পথ চলতি যে কোনও মানুষ নিখরচায় ছুঁয়ে দেখতে পারেন এই শিল্প। ছবি সৌজন্য: স্বপ্ননীল দাস

শিল্পী জানান, আলো অন্ধকারের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। আদি কাল থেকেই তার সূচনা। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে শিল্পের মাধ্যমে আলো অন্ধকারের এই দ্বন্দ্বকে আরও বেশি রাজনৈতিক করে তোলার প্রয়াসই এই প্রদর্শনীর বিষয়বস্তুগত উদ্দেশ্য। সনাতন দিন্দার কথায়,‘‘কেবল আলো অন্ধকার দেখানোই আমাদের কাজ নয়, জীবনানন্দ যেমন আলো অন্ধকারের মধ্য দিয়ে একটি বোধে উন্নীত হতে চেয়েছেন, তেমন ভাবেই একটি বোধে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি আমরা। এই বোধ রাজনৈতিক হতে পারে, সামাজিক হতে পারে, ঐতিহাসিক হতে পারে।’’ পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পীদের সম্পর্ককে আরও সহজ করাও এই শিল্প প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। প্রদর্শনীশালাতে প্রদর্শিত ছবি বা ভাস্কর্যের মধ্যে সাধারণ পথচলতি মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার যে প্রয়াস দেখা যায়, সেই ধারণাকে ভেঙে ফেলে শিল্প ও শিল্পীকে খোলা আকাশের তলায় আনার মধ্যে রয়েছে এক মুক্তির প্রত্যাশা। যা সনাতনবাবুর ভাষায়,‘‘গ্যালারি থেকে বেরিয়ে এসে শিল্পকে মুক্ত করার প্রয়াস।’’ এ ছাড়া এই শিল্প কর্মের কোনওটিই বিক্রয়যোগ্য নয়, কাজেই এই প্রদর্শনী ভোগবাদকেও একটি জবাব ছুঁড়ে দেয়।

Advertisement

প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে দেওয়াল জুড়ে আঁকা গ্রাফিতি। পথ চলতি যে কোনও মানুষ নিখরচায় ছুঁয়ে দেখতে পারেন এই শিল্প। অনুভূতির প্রত্যক্ষ সেতুই স্বতন্ত্র করে এই প্রয়াসকে। রয়েছে সনাতন দিন্দার তৈরি করা বেশ বড় একটি ইনস্টলেশন। যেখানে প্রবেশ করলে কার্যত দম বন্ধ হয়ে আসে। নগর সভ্যতার কংক্রিটের জঙ্গল বা সিসিটিভির দৃষ্টি প্রতিনিয়ত কী ভাবে মানুষের বোধকে গ্রাস করছে, সেটিই তুলে ধরা হয়েছে এই কাজে। এ ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু শিল্পের নিদর্শন। সনাতন বাবুর কথায়,‘‘আলো তো শুধু বস্তুগত নয়, আলো মানে উজ্জ্বল মানুষও বটে। পাশাপাশি লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশনের প্রথম কথাতেই রয়েছে আলো। তাই সত্যজিৎ রায় তাঁর মেধা দিয়ে যে ভাবে চারুলতা কিংবা মহানগরে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের কথা বলেছেন, সেই ছবিগুলিকেই আমরা তুলে ধরেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন