behavioral therapy

লোকলজ্জা কমাতে ‘বিহেভিওরাল থেরাপি’

এ রকম সমস্যা থাকলে দেরি না করে নিজেকে বদলাতে উঠেপড়ে লাগুন৷ সচেতন হলে আপনি নিজেই পারবেন৷

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ১৯:০৭
Share:

ভয় ভাঙান চিকিৎসার মাধ্যেম। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

কোথাও যেতে লজ্জা, বহু মানুষের মধ্যে বসে খেতে লজ্জা, উচিত কথা বলতে লজ্জা— এ তো মহা বিপদ! এ ভাবে চললে যে জীবন থেমে যাবে। কাজেই এ রকম সমস্যা থাকলে দেরি না করে নিজেকে বদলাতে উঠেপড়ে লাগুন৷ সচেতন হলে আপনি নিজেই পারবেন৷ নিতান্ত না পারলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে৷ কীভাবে কী করতে হবে, তা জানিয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অমিতাভ মুখোপাধ্যায়৷ আসুন, দেখে নিন৷

Advertisement

প্রথমে বুঝে দেখুন আপনি লাজুক না অবসেসিভ৷

অবসেসিভ হলে কাজটা একটু কঠিন৷ কারণ যে কোনও বিষয়ে তাদের বিশ্বাস ও ধারণা এত বদ্ধমূল থাকে যে তা বদলাতে বিস্তর কাঠ–খড় পোড়াতে হয়৷ যেমন ধরুন, শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক পরতে লজ্জা পেলে সামলানো সহজ৷ কিন্তু যদি ধরে নেন অন্য পোশাক পরা খারাপ, বদলানো বেশ কঠিন৷ কাজেই কোনও কাজ করতে চান, অথচ লজ্জার জন্য পারেন না, না কি কাজটা খারাপ ভেবে করেন না, সেটা বুঝে নিন সবার আগে৷

Advertisement

আরও পড়ুন: বয়স ৪০ পেরিয়েছে? এগুলো অবশ্যই মাথায় রাখুন

অনলাইন ক্যাবে বিপদ? মোবাইল ঘাঁটলেই থাকবেন ‘সেফ’

অবসেসিভদের সমস্যা হল, তারা এত সব বোঝাবুঝির মধ্যে ঢুকতে চায় না৷ মুশকিল হয় কাছের মানুষদের৷ তারা ধরেবেঁধে আনলে চিকিৎসা হয়৷

অবসেশনের চিকিৎসা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা সিবিটি, কাউন্সেলিং এবং ওষুধ৷ ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে সেরে যায় প্রায় সময়ই৷

লজ্জা থেকে সমস্যা হলে আপনি নিজেই একটু উদ্যোগ নিন৷ যার প্রথম ধাপ অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতির সাহায্য না নেওয়া৷ ধরুন মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে প্রবল টেনশন হচ্ছে বলে মদ বা ঘুমের ওষুধ খেলেন৷ ভাবলেন সংকোচ কেটে গিয়েছে, দারুণ বলবেন৷ শিক্ষকের সামনে হল উল্টো৷ সংকোচ ফিরে এল পুরো মাত্রায়, আর নেশার চোটে উল্টোপাল্টা বকলেন৷ পরীক্ষা বরবাদ হল, সম্মানও গেল৷ এর দীর্ঘ মেয়াদি বিপদও আছে৷ যত দিন যাবে মদ বা ঘুমের ওষুধের মাত্রা বাড়বে৷ কিন্তু মূল সমস্যা থেকে যাবে সেই তিমিরেই৷

অকারণে ভয় পাবেন না এই সমস্যায়। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

সঠিক রাস্তায় লজ্জা কাটাতে চাইলে একটু ভাবুন, যেমন—

ক) কোনও একটা কাজ, ধরুন পার্টিতে যাওয়া কি মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়া, পারবেন না ভাবছেন কেন? প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না, লোকে অপদস্ত করবে, হাসাহাসি করবে না কি পাত্তা দেবে না?

খ) এ রকম করার কোনও কারণ আছে, না বাড়িয়ে ভাবছেন?

গ) কী সেই কারণ? কীভাবে তাকে দূর করা যায়?

ঘ) এত ভয়ে ভয়ে থেকে লাভ কী হচ্ছে? একা হয়ে যাচ্ছেন, কাজে পিছিয়ে পড়ছেন৷ এ রকম অবস্থায় মানসিক অবসাদ গ্রাস করারও আশঙ্কা থাকে৷

ঙ) তার চেয়ে একবার গিয়েই দেখুন না, যতটা ভয় পাচ্ছেন ততটা হয়তো না–ও হতে পারে৷

ভেবে কূল–কিনারা না পেলে কাছের মানুষ বা বন্ধু–বান্ধবের লক্ষ করুন৷ তারা কীভাবে মেলামেশা করে, কথা বলে, প্রশ্নের উত্তর দেয় তা খুঁটিয়ে দেখুন৷ আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন তাদের৷ সাহায্য চান৷

এতে কাজ না হলে মনোবিদের তত্ত্বাধানে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা সিবিটি শুরু করুন৷ কয়েকটি সিটিংয়ের পরই বুঝতে পারবেন কিছু ভুল চিন্তাধারার জন্য এ রকম হচ্ছে৷ হয়তো নিজেকে ছোট ভাবছেন৷ হয়তো তার কোনও কারণ নেই৷ বা থাকলেও দু’–একটি পদক্ষেপ নিলেই হয়তো তা দূর করা যাবে৷ হয়তো অন্যকে নিয়ে যা ভাবছেন তার অনেকটাই ভুল৷ বেশি ভেবে ফেলছেন বলে সমস্যা হচ্ছে৷ বা অতিরিক্ত স্পর্শকাতর বলে সামান্য বিষয়কে বড় করে দেখছেন ইত্যাদি৷ এ ভাবে ধাপে ধাপে মনের অন্ধকার কোণে আলো ফেলে থেরাপিস্ট সমস্যার মূল খুঁজে বার করবেন৷ তার হাত ধরে একটু একটু করে খুলে যাবে সমাধানের রাস্তা৷

হীনম্মন্যতা, গোঁয়ার্তুমি বা স্পর্শকাতরতা থেকে সমস্যা হলে কাউন্সেলিংয়ে ভাল কাজ হয়৷ সঙ্গে লাইফ স্কিল ট্রেনিং নিলে পুরো ব্যক্তিত্ব বদলে যায়৷

পরের ধাপ আসে গ্রেডেড এক্সপোজার টেকনিক৷ ধরুন, অচেনা জায়গায় যেতে সংকোচ হয়৷ সংকোচটা যে অযৌক্তিক তা বোঝার পর তাকে কাটাতে কয়েকটা পদক্ষেপ করুন৷ যেমন–––

ক) প্রথম কিছুদিন একা একা চেনা–পরিচিত মহলে ঘোরাফেরা করুন৷

খ) কয়েক দিন পর থেকে কাউকে সঙ্গে নিয়ে অচেনা জায়গায় যান৷

গ) এ বার যান একা৷ কাউকে বলুন সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে৷

ঘ) দু’–চার দিন বাদে পুরোপুরি একা যাওয়া শুরু করুন৷

ঙ) বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করুন৷ আগ বাড়িয়ে কথা বলতে না পারলেও যদি আলোচনার সমঝদার হতে পারেন, জনসমাবেশে আপনার কদর বাড়বে৷

চ) কয়েকবার এ রকম করতে করতে দেখবেন অপরিচয়ের সংকোচ কেটে যাবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন