Lifestyle News

অবসাদ আরও গভীর করছে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট?

স্ট্রেস, উত্কণ্ঠা, ইনসমনিয়া, অবসাদ চলতি সময়ের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলির অন্যতম। সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনোবিদদের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ বাড়লেও ক্রমশই গুরুত্ব হারাচ্ছে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ১৭:৩১
Share:

দীর্ঘ দিন অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

স্ট্রেস, উত্কণ্ঠা, ইনসমনিয়া, অবসাদ চলতি সময়ের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলির অন্যতম। সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনোবিদদের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ বাড়লেও ক্রমশই গুরুত্ব হারাচ্ছে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ওষুধের থেকে বেশি অলটারনেটিভ থেরাপির উপরই জোর দিচ্ছেন মনোবিদরা। ব্রেন হেলথ জার্নালিস্ট ও বায়োচেকার জর্ডন ফালিস জানাচ্ছেন কেন আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ড্রাগ।

Advertisement

চরম পরিস্থিতিতে চিকিত্সকরা অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকলেও অধিকাংশ অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তিনটি উপাদানের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। যার ফলে প্রথম দিকে কিছুটা সুস্থ বোধ করলেও দীর্ঘ দিন অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

কোএনজাইম কিউ১০

Advertisement

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে কোএনজাইম কিউ১০ অণু থাকে। যা এনার্জি উত্পাদনে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে শরীর ও মস্তিষ্কে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজ রুখতেও এটা সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অধিকাংশ অ্যান্টি়ডিপ্রেস্যান্ট ও অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ কোএনজাইম কিউ১০-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে মানসিক ক্লান্তি, মনসংযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা বাড়ে।

ম্যাগনেশিয়াম

শরীরের ৩০০টি জৈব রাসায়নকিক ক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল ম্যাগনেশিয়াম। এর মধ্যে রয়েছে নিউরোট্রান্সমিটার, উত্‌সেচক ও হরমোনের কার্যকারিতা। এই সবকটাই মস্তিষ্ককে সচল রেখে মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, পেশীর দুর্বলতা, মাথা যন্ত্রণা, অনিদ্রা, মাথা ঘোরা, অস্টিওপরেসিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়। যা নিউরোসাইকিয়াট্রিক সমস্যার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। অবসাদ, উত্কণ্ঠা, অনিদ্রা, শর্ট-টার্ম মেমরি লস, প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম বাড়তে থাকে। মনোবিদরা জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্কিজোফ্রেনিয়া ও গভীর অবসাদে ভোগা রোগীদের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম দেখা গিয়েছে। শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে অ্যাভোকাডো, আমন্ড, কুমড়োর বীজ, সুইস কার্ড, পালং শাক, ডার্ক চকোলেট, বিট রাখুন ডায়েটে।

আরও পড়ুন: আপেলের বীজ যে এত বিষাক্ত জানতেন?

বি ভিটামিন

সাইকিট্রিক মেডিসিনের প্রভাবে শরীরে বি২, বি৬, বি১২ ও ফোলেটের মতো বেশ কিছু বি ভিটামিনের ঘাটতি হয়।

ভিটামিন বি২ বা রাইবোফ্ল্যাভিন শরীরে এনার্জি মেটাবলিজমের জন্য জরুরি। ফলে দুর্বলতা, ওজন বাড়া, ত্বক ও থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ধরে যারা অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খাচ্ছেন তাদের প্রায়শই ভিটামিন বি২-এঅর ঘাটতি দেখা যায়। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, ডিম, সবুজ শাক-সব্জি, মেটে, মাশরুম, আমন্ড খেলে এই ভিটামিনের ঘাটতি মেটানো যায়।

মুড ভাল রাখা, ভাল ঘুম ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৬। মস্তিষ্কে সিরোটোনিন, জিএবিএ, ডোপেমাইনের ক্ষরণ বাড়ায় এই ভিটামিন। সাইক্রিয়াটিক মেডিসিন ভিটামিন বি৬-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে দুর্বলতা, মানসিক দ্বিধা, অনিদ্রার সমস্যা বাড়তে থাকে। আলু, কলা, চিকেনের মতো খাবার ভিটামিন বি৬-এর গুরুত্বপূর্ণ উত্স।

নার্ভাস সিস্টেম ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি১২ ও ফোলেট। অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, বেঞ্জোডিয়াজেপিনস, অ্যান্টিসাইকোটিস, অ্যান্টিকনভালস্যান্টস শরীরে ভিটামিন বি১২ ও ফোলেটের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সবুজ শাক-সব্জি, ব্রকোলি, ফুলকপি, স্ট্রবেরিতে ভিটামিন বি১২ থাকে।

কী করবেন?

মানসিক স্বাস্থ্য ভাল করতে যে ওষুধ আমরা খাই, তা আমাদের শরীরে পুষ্টিগুণ শোষণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। শরীর ও মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল না পাওয়ায় বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। আবার মনোবিদরা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলোর ঘাটতি অনেক মানসিক সমস্যা, স্ট্রেসের প্রধান কারণ। তাই অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট বা স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ না খেয়েও সঠিক ডায়েট ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের সাহায্যে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে তোলা যায়। যদি কখনও গুরুতর পরিস্থিতিতে চিকিত্সকরা অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খাওয়ার পরামর্শ দেন, সঙ্গে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন