ব্যাঙ্ক শূন্য, রক্ত কেবল দাতা আনলে

হাসপাতালে মিলছে না এক ইউনিটও রক্ত। বৃহস্পতিবার দেখা গেল ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রোগীর আত্মীয়দের দীর্ঘ লাইন। এ দিকে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা পুরভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রক্তদান শিবির বন্ধ রয়েছে। শিবির থেকে আসা রক্ত না মেলাতেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে দাবি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। ফলে রোগীর পরিজনদেরই খুঁজে নিয়ে আসতে হচ্ছে রক্তদাতাদের। তবেই মিলছে রক্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

হাসপাতালে মিলছে না এক ইউনিটও রক্ত। বৃহস্পতিবার দেখা গেল ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রোগীর আত্মীয়দের দীর্ঘ লাইন। এ দিকে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা পুরভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রক্তদান শিবির বন্ধ রয়েছে। শিবির থেকে আসা রক্ত না মেলাতেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে দাবি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। ফলে রোগীর পরিজনদেরই খুঁজে নিয়ে আসতে হচ্ছে রক্তদাতাদের। তবেই মিলছে রক্ত।

Advertisement

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাতে দৈনিক প্রায় ৭০ ইউনিটের রক্তের লাগে। জেলায় ইতি মধ্যে প্রায় ৬০০ জন রোগী থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। তাঁদের জন্য প্রতি মাসে কম পক্ষে ৩০০ ইউনিট রক্ত মজুত রাখতে হয়। গত মাসে ২০০ ইউনিট রক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দেওয়া হয়েছে।

মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কই এক মাত্র ভরসা। এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরে ইংরেজবাজার শহরেই ২০টি বেসরকারি হাসপাতালও নির্ভরশীল। এ ছাড়া সদর হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার পর থেকে জেলার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড, বিহার, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর প্রভৃতি জেলা থেকে প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য ভিড় জমান। ফলে এই ব্লাড ব্যাঙ্কে কমপক্ষে ৫০ ইউনিট রক্ত মজুত রাখতে হয়। তবে মাসখানেক ধরে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গত সোমবার থেকে কোনও গ্রুপেরই এক ইউনিটও রক্ত মজুত নেই ব্লাড ব্যাঙ্কে। ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ মাসে জেলায় মোট আটটি রক্তদান শিবির হয়েছে। এই শিবিরগুলি থেকে রক্ত সংগ্রহ হয়েছে ২৯০ ইউনিট। গরমের সময়ে জেলায় রক্তদান শিবিরগুলিতে তেমন ভিড় হয় না।

Advertisement

এ দিন ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে হবিবপুরের বাসিন্দা রেন্টা মুর্মু বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার করে আমার মেয়ের ছেলে হয়েছে। এর জন্য দু’ইউনিট রক্ত দরকার। সকাল থেকে তার জন্য ঘুরছি। কোনও রকমে এক জনকে জোগাড় করে নিয়ে এসে এক ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে পেরেছি। এ দিকে চিকিৎসকেরা বলছেন, আরও রক্তের দরকার। কী ভাবে রক্ত জোগাড় করব বুঝতে পারছি না।’’ এমনই সমস্যার কথা জানালেন গঙ্গারামপুর থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আসা প্রিয়জিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘বাবার শরীরে রক্ত নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন চার প্যাকেট রক্ত লাগবে। এ দিকে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি এক ইউনিটও রক্ত নেই। এ দিকে বাবার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ঘাটতি থাকায় সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ মহম্মদ আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘‘মাস খানেক ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলল। এখন পুরভোট। ফলে রক্তদানের শিবির তেমন হয়নি চলতি মাসে। যে কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর জন্য সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। তা হলে সমস্যাটা মেটানো যাবে।’’

এই মরসুমে ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্কট প্রায়ই দেখা যায়। তবে এ বার শুরুতেই এমন অবস্থা হওয়ায় চিন্তিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের এক কর্তা বলেন, ‘‘মালদহে প্রায়ই পথ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময়ে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হবে। পরীক্ষার পর এখন পুরভোটের সময়। ফলে রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোট নিয়ে ব্যস্ত। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে। আর সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement