BTS

কোরিয়ার পপ গানে মজে বাঙালির নতুন প্রজন্ম

ব্ল্যাকপিঙ্ক, মামামু, বিটিএস, সেভেনটিন— এই সব নামের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিচিতি দীর্ঘদিনের।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১৭
Share:

জনপ্রিয় পপ-গ্রুপ বিটিএস-এর সদস্যেরা।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সুগা-র কাঁধে অস্ত্রোপচার হচ্ছে। আর তাই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে বালিগঞ্জের কর্নফিল্ড রোডের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির বাঙালি ছাত্রী!

Advertisement

বিটিএস দলের নতুন ভিডিয়ো লঞ্চ। তাই মাকে লুকিয়ে অনলাইন ক্লাসের জ়ুম কল বন্ধ করে মেয়ে ইউটিউবে গান দেখতে ব্যস্ত।

ব্ল্যাকপিঙ্ক, মামামু, বিটিএস, সেভেনটিন— এই সব নামের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিচিতি দীর্ঘদিনের। কারণ, ওই অঞ্চলে হিন্দির চল নেই। তার উপরে চেহারা, সংস্কৃতি, রীতিনীতিতে মিল থাকায় কোরিয়ার নাচ-গান-সিনেমাই মিজোরাম, মণিপুরে বেশি প্রচলিত। কিন্তু বেহালা-বালিগঞ্জ, যাদবপুর-ভবানীপুর, টালা-টালিগঞ্জে আমবাঙালির অন্দরমহলে, নতুন প্রজন্মের স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেও কোরিয়ান পপ গানের বা কে-পপের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কনভয়ে হামলায় ‘লজ্জিত’ নড্ডার বাঙালি স্ত্রী, প্রচারে আসতে চান বঙ্গে

আরও পড়ুন: রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ৭৫ লক্ষ চাকরি, প্রতিশ্রুতি বিজেপির, ‘ভাঁওতা’ বলছে তৃণমূল-বাম-কং

বাঙালির কাছে কে-পপ গান প্রথম জনপ্রিয় করেছিলেন সাই। তাঁর গাংনাম স্টাইল গান ও নাচের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিল গোটা দেশ। কিন্তু কোরিয়ার পপ দলগুলির ইতিহাস-ভূগোল একেবারে গুলে খেয়েছে এখনকার স্কুলের ছেলেমেয়েরা। সপ্তম শ্রেণির শুভমিতা দাস নিরলস ভাবে কোরিয়ান পপ গান নিয়ে কথা বলে যেতে পারে। প্রিয় দলের ‘ফ্যান চ্যান্ট’ হু হু করে আউড়ে যায় মেয়েটি। দ্বাদশ শ্রেণির উর্বী দেবনাথের মতে, বিটিএস-এর গানের পরিবেশনা, কোরিয়োগ্রাফি দুর্দান্ত। দশম শ্রেণির প্রজ্ঞান সমাদ্দার অবিকল নেচে দেখায় বিটিএস-এর গানের স্টেপ। সোনম রায়ের আবার স্বপ্ন বিটিএস-এর লাইভ অনুষ্ঠান দেখে জীবন সার্থক করবে!

কোরিয়ান ভাষায় হওয়ায় গানের অধিকাংশই দুর্বোধ্য। তলায় সাবটাইটেল। মাঝেমধ্যে ইংরেজিতে দু’-একটি বাক্য। কিন্তু ভক্তেরা সব গাইছে অবিকল। কোন গায়কের ক’টা নাম, কার জীবনে কবে, কোথায়, কী ঘটনা ঘটেছে, কার কী অসুখ করেছে, কবে অপারেশন— সব নখদর্পণে এ শহরের স্কুলপড়ুয়াদেরও। তারা গলা শুনেই বলে দিতে পারে কোন গানটা কার গাওয়া। প্রিয় কে-পপ তারকার কথা বলতে গেলে আবেগে কন্ঠরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।

শুভমিতার মা বলেন, ‘‘এই লকডাউনে মোবাইল-কম্পিউটারে মুখ গুঁজে থাকার নেশা আরও বেড়েছে। এমনিতেই অনলাইনে পড়াশোনার জেরে বাবা-মায়ের হাত থেকে লেখাপড়ার রাশ অনেকটাই আলগা হয়েছে। মোবাইল ব্যবহারের অবাধ লাইসেন্স ও অঢেল ডেটা প্যাক পাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। তার মধ্যেই তাদের জীবনে ঢুকে পড়েছে কোরিয়া।’’ অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, অবোধ্য গান, তুমুল নাচ, রঙচঙে পরিবেশনায় মুগ্ধ ছেলেমেয়েদের কিচ্ছুটি বলার উপায় নেই। কিম চুংহা, সুগা, জো, ভি, জিমিন, জুন— এমন সব নাম নিয়ে সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে চলছে আলোচনা। গানের বাইরেও প্রিয় তারকাদের পোশাক, হেয়ারস্টাইল, নাচের স্টেপ, সুগার উপরে কোন বন্ধুর ‘ক্রাশ’ রয়েছে— আলোচনার বিষয় সবই।

কী ভাবে হঠাৎ বাঙালি কিশোর-কিশোরীরা ভাষা না জেনেও কে-পপের অন্ধ ভক্ত হয়ে উঠল?

কবি শ্রীজাত বলেন, ‘‘হয়তো এই ধরনের গানের ছন্দ, নাচ সব মিলিয়েই একটা আকর্ষণ তৈরি হয়। যেমন নেনজুক্কল্ল গানের ভাষা না বুঝেই আমরা মোহিত হয়েছি, কিম কি ডুকের ছবি গিলেছি গোগ্রাসে, সে ভাবেই হয়তো কোরিয়ার গানের আবেদন সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগেই সারা পৃথিবীতে ঝড় তুলেছিল গাংনাম স্টাইল। আমাদেরও ছোটবেলায় কিন্তু ভাষা না বুঝেই পাড়ায় পাড়ায় মাইকেল জ্যাকসনের মুনওয়াক ছিল তুমুল জনপ্রিয়। কয়েক বছর আগে পোকেমন নিয়েও বেশ পাগলামি চলছিল। তেমনই কে-পপ নিয়ে উন্মাদনার একটা ঢেউ উঠেছে।’’

গায়িকা সোমলতা আচার্য বলেন, ‘‘কে-পপ শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, বিশ্ব জুড়েই উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। ওদের ব্যাপারটা শুধুই নাচ-গানে সীমাবদ্ধ নয়। একটা পুরোদস্তুর জমজমাট, রঙিন, ঝলমলে প্যাকেজ। গানের বিপণনের দিক থেকেও ওরা বেশ এগিয়ে। কে-পপ দলগুলির বিভিন্ন গল্প, প্রচার ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সব মিলিয়েই ভাষার বাধা টপকে বর্তমান প্রজন্ম ওদের নাচ, ছন্দে মেতে রয়েছে।’’

কে-পপের ভক্তেরা অবশ্য কোনও তত্ত্বকথায় যেতে আগ্রহী নয়। কেন কে-পপ তাদের প্রিয়, তার চুলচেরা বিশ্লেষণের চেয়ে কোন দলের নতুন গান কবে আসছে, তার খবর রাখতেই পছন্দ করছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন