রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চালু হতে চলেছে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ, মঙ্গলবার হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের উল্টো দিকের তিনটি ঘর নিয়ে সিসিইউ চালু করার কথা রয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। উল্লেখ্য, পরিকাঠামোর অভাবে গত প্রায় সাত বছর ধরে হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটটি (আইসিইউ) বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে প্রতি দিনই হৃদরোগে আক্রান্ত ও আশঙ্কাজনক রোগীদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীদের হয়রানি ও সমস্যা রুখতে দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালে সিসিইউ চালুর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালে সিসিইউ চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ায় খুশি তারা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মৌখিক ভাবে ৫ মে থেকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে সিসিইউ চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। ইউনিট তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আশা করছি, চূড়ান্ত নির্দেশ আসার পর নির্ধারিত দিনে ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তিনটি ঘরকে সংস্কার করে ১২ শয্যার ওই সিসিইউ তৈরি করা হয়েছে। ওই ইউনিটে ৪ জন চিকিত্সক, ৮ জন নার্স, ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও এক জন সাফাইকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্মীর অভাব থাকায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুরোধে রায়গঞ্জ পুরসভা সিসিইউতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ও সাফাইকর্মীকে নিয়োগ করেছে।
হাসপাতাল সুপার অনুপকুমার হাজরা জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিসিইউতে একাধিক ভেন্টিলেটর, মাল্টি চ্যানেল মনিটর, ব্লাড সেলকাউন্ট মেশিন-সহ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত চিকিত্সার বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রসামগ্রী বসানো হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সরাসরি সেগুলি বরাদ্দ করেছে। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন চিকিত্সা পরিকাঠামোর অভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত-সহ অন্যান্য আশঙ্কাজনক রোগীদের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হতো। সিসিইউ চালু হয়ে গেলে ওই রোগীদের সেখানেই ভর্তি রেখে চিকিত্সা পরিষেবা দেওয়া হবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে আইসিইউতে চিকিত্সাধীন এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগে একদল বাসিন্দা আইসিইউতে ভাঙচুর চালায়। চিকিত্সক, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিত্সার যন্ত্রাংশের অভাব থাকায় ওই ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর আইসিইউটি চালু করার সাহস পাননি। ফলে সেই থেকে আইসিউটি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর রাজ্য সরকার আইসিইউর নাম বদল করে সিসিইউ দেয়। গত তিন বছর ধরে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি হাসপাতালে সিসিইউ চালুর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সিসিইউ চালুর ব্যাপারে আমাকে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে রোগীদের স্বার্থে সিসিইউ চালুর দাবিতে দলের তরফে দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ, সুপারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া-সহ বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল জানান, হৃদরোগ ও আশঙ্কাজনক রোগীদের চিকিত্সা পরিষেবার স্বার্থে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালে সিসিইউ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ায় তাঁরা খুশি। সিসিইউ চালুর দাবিতে সিপিএম ও ডিওয়াইএফের তরফে হাসপাতালে দীর্ঘ দিন নানা আন্দোলন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমার অনুরোধ, সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি করেই যেন হাসপাতালে সিসিইউ চালু করা হয়। নয়তো ভবিষ্যতে আইসিইউর মতো সিসিইউ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।’’
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তীর দাবি, টাকার অভাবে প্রতি দিন হৃদরোগে আক্রান্ত ও আশঙ্কাজনক রোগীদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন পরিবারের লোকজন। তিনি বলেন, ‘‘এ সব রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালে সিসিইউ চালু হতে চলায় আমরা খুশি। দলের টানা আন্দোলন সার্থক হয়েছে বলে আমি মনে করছি।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের দাবি, পূর্বতন রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার অভাবের জেরে আইসিইউ বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অমলবাবু বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর রোগীদের উন্নত চিকিত্সার স্বার্থে দিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বিষয়টি জানাই। দিদি আমাকে কথা দিয়েছিলেন তিনি হাসপাতালে সিসিইউ চালু করার ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ করছেন। দিদি কথা রেখেছেন।’’