Nobel Prize

Benjamin List: যোগাসন করেন আর নিরামিষ খান আমার নোবেলজয়ী শিক্ষক

দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে, বেঞ্জামিন এবং ডেভিড ম্যাকমিলনের কাজ বহু মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে।

Advertisement

সুভাষচন্দ্র পান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৫৯
Share:

রসায়নে নোবেল পেয়েছেন বেঞ্জামিন লিস্ট।

গবেষণা অনেকেই করেন, কিন্তু আরও পাঁচ জনের কথা ভাবেন ক’জন! আমার নোবেলজয়ী শিক্ষক, বেঞ্জামিন লিস্ট অন্য রকম। বেঞ্জামিনকে দেখেছি, সব সময়ে সাধারণের জন্য ভাবতে। সকলের সঙ্গে খোলা মনে মেশেন। সব কাজে এগিয়ে যান। ওঁর গবেষণাও তাই সাধারণ মানুষের কথাই বলে। বেঞ্জামিনের নোবেল জয়ের খবরটি শোনার পর থেকে সে সব কথাই মনে হচ্ছে।

Advertisement

এক বার জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটে, যেখানে ওঁর ল্যাবরেটরি, সেখানে বেঞ্জামিনের ফুটবলের দল জিতল। বেঞ্জামিন ছিলেন দলের অধিনায়ক। আমি তখন ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটে বেঞ্জামিনের ছাত্র। ওঁর ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করি। দেখেছিলাম, বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফুটবল খেলায় জিতে কেমন সকলের সঙ্গে আনন্দে মাততে পারেন! অনেককে সঙ্গে নিয়ে যে কাজ করা যায়, তা-ই ওঁর প্রিয়।

আসলে বেঞ্জামিন অনেককে নিয়ে থাকতে পছন্দ করেন। ওঁর কাছে গবেষণা করার সময়ে এ বিষয়টি বার বার চোখে পড়েছে। তাই মনে হচ্ছে, নোবেল জয়ের পরেও তো আমাদের সকলের একসঙ্গে আনন্দ করার কথা। অন্য সময় হলে ভাবতাম, জার্মানি গিয়ে সকলে মিলে উদ্‌যাপন করব। কিন্তু অতিমারির এই সময়ে নিজের দেশ বসেই মুঠো ফোনে শুধু অভিনন্দন জানালাম। কবে দেখা হবে, কে জানে!

Advertisement

জার্মানিতে বেঞ্জামিন লিস্টের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র পান।

অনেকের মনে হবে, রসায়নের কঠিন তত্ত্বের সঙ্গে সাধারণের আবার যোগ কীসের? কিন্তু বেঞ্জামিনের কাজ থেকে আসলে বহু জনের সুবিধা হতে পারে। এ বছরের রসায়নের দুই নোবেলজয়ীর এক জন, বেঞ্জামিনের কাছে গবেষণা করার সময়ে সেই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থেকেছি। এখনও আছি। ফলে দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে, বেঞ্জামিন এবং ডেভিড ম্যাকমিলনের কাজ বহু মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে। ওঁদের গবেষণার ফলে ওষুধের মান উন্নত হচ্ছে। যে বিষয়টি নিয়ে বছর কুড়ি আগে কেউ বিশেষ কিছু জানতেই না, তা কয়েক বছরে রসায়নের গবেষণার মোড় ঘুরিয়ে দিল। ওষুধ তৈরি নিয়ে ভাবনা-চিন্তার মোড়ও ঘুরল।

বেঞ্জামিনের গবেষণার বিষয়, ‘অ্যাসিমেট্রিক অর্গ্যানোক্যাটালিসিস’। এতে অণুর মিরর ইমেজ (প্রতিবিম্ব) নিয়ে গবেষণা হয়। যে কোনও ওষুধ তৈরির সময়ে যদি সব অণুর মিরর ইমেজের প্রকৃতিও বুঝে নেওয়া যায়, তা হলে তার কার্যকারিতা আরও সূক্ষ্ম ভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব। বেঞ্জামিন সেই কাজ যে পদ্ধতিতে করছেন, তাতে খরচ তুলনায় কম। ফলে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় কমবে। সাধারণের সাধ্যের মধ্যেও মিলবে সেই ওষুধ। যা আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ দেশের সংস্কৃতির প্রতি এমনিতেও বেঞ্জামিনের খুব টান রয়েছে। ভারতের মানুষের কথা সব সময়ে বলেন। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে এক বার এ দেশে বেড়াতে এসেছিলেন। এখানে সকলের সঙ্গে মেলামেশা করে খুব ভাল লেগেছিল। এই দেশে যে পরিবারের সকলে একসঙ্গে থাকেন, তা ওঁর পছন্দ। বেঞ্জামিনও নিজের স্ত্রী-পুত্রদের সঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকতে পছন্দ করেন।

২০০৫ সালে জার্মানিতে গিয়ে প্রথম যখন ওঁর সঙ্গে আলাপ হল, তখন মাঝেমঝেই আমার বাড়ির কথা, পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করতেন। যবে থেকে ওঁকে চিনি, রোজ যোগাসন করতে দেখেছি। এখন তো আবার আমিষ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন। ২০১৮ সালে গুয়াহাটিতে আমার বাড়িতে এসে নিরামিষ খেলেন। ভারতীয় সংস্কৃতির সব কিছুই বেঞ্জামিন পছন্দ করেন। এখানকার খাবারও ওঁর খুব প্রিয়। এ দেশে এলেই নানা ধরনের নতুন রান্না চেখে দেখতে পছন্দ করেন। নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে গল্প করেন। আইআইটি-তে এসে তো ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা একটি ক্লাসই নিয়ে ফেললেন।

আইআইটি গুয়াহাটিতে বেঞ্জামিন লিস্ট। সঙ্গে সেখানকার অধ্যাপকেরা। নিজস্ব চিত্র।

বেঞ্জামিনের কাছে গবেষণা করার সময়ে তিনি বলতেন, জার্মানিতে পিএইচডি নির্দেশক হলেন পিতার মতো। ছাত্র-ছাত্রীরা সন্তানতুল্য। বেঞ্জামিন কাজের ক্ষেত্রে সত্যিই আমার পিতৃসম। ওঁর কাজ আরও অনেক নতুন গবেষণায় দিশা দেখাচ্ছে। আইআইটি গুয়াহাটিতে আমাদের অ্যাসিমেট্রিক ল্যাবরেটরিতে কাজ চলছে খানিকটা ওঁর গবেষণার পথ ধরেই। আশা করি, আমরাও এখানে বেঞ্জামিনের মতো অনেক মানুষের সাহায্যের কথা ভেবে গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। কারণ, ওঁর গবেষণার ধরণ আমাদের অনেক কিছু শেখাচ্ছে। শুধু যে বিজ্ঞানের জন্যই কাজ করে গেলে চলবে না, সমাজের কথা ভাবতে হবে, তা ওঁর নোবেলজয় আরও ভাল ভাবে মনে করাল। আশা করি আমাদের মতো বিভিন্ন দেশের গবেষকরা সে কথা মনে রেখে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এ ভাবেই তো বিজ্ঞান এবং সমাজ উন্নত হতে পারবে।

(লেখক আইআইটি গুয়াহাটির অধ্যাপক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন