পথ দুর্ঘটনায় জখম শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসার গাফিলতিতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের লোকেদের। অভিযোগ উঠেছে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালেরই এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পরে ওই শিশুর আত্মীয় পরিজনেরা হাসপাতালে ফিরে গিয়ে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখান। রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনাস্থলে মানিকচক থানার পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর নাম সঞ্চিতা সাহা (৫)। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাড়ি মানিকচক থানার মথুরাপুর পঞ্চায়েতের ধরমুটোলা গ্রামে। বাবা অসিত সাহা ব্যবসায়ী। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। এখনও কোনও তরফ থেকে অভিযোগ মেলেনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সঞ্চিতার মা রিঙ্কি সাহার সঙ্গে মথুরাপুরে রথের মেলা দেখতে গিয়েছিল। মেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ মানিকচকের শেখপুরার কাছে একটি মোটর সাইকেল তাকে ধাক্কা মারে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সঞ্চিতা। স্থানীয়েরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। তবে হাসাপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অমলকৃষ্ণ পাল মেয়েটিকে মৃত বলে ঘোষণা করে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন বলে দাবি পরিবারের। চিকিৎসকের কথা মতো বাড়ি নিয়ে চলেও যান পরিবারের লোকেরা। তবে গ্রামেরই কিছু মানুষ প্রশ্ন তোলেন পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলে ময়নাতদন্ত হয়। তবে চিকিৎসক কেন ছেড়ে দিলেন। এই প্রশ্নের সদুত্তর জানতে ফের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের মানুষেরা হাজির হন হাসপাতালে। চিকিৎসকদের সামনে দেহ রেখে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
তাঁদের দাবি, হাসাপাতালে যখন মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন সে বেঁচে ছিল। চিকিৎসক অমলবাবু ঠিক মতো না দেখেই ছেড়ে দেন। এর পরে উত্তেজনা শুরু হয়ে যায় হাসপাতালে। ঘণ্টা খানেক ধরে হাসপাতালে চলে বিক্ষোভ। পরে পুলিশ গিয়ে জনতার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মৃত শিশুর বাবা অসিত সাহা বলেন, ‘‘চিকিৎসকের গাফিলতিতেই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় সে বেঁচে ছিল। তখন ঠিক মতো চিকিৎসা না করেই চিকিৎসক বলেন ও মারা গিয়েছে। আমরাও দেখি সে আর সাড়া শব্দ করছে না। তাই দেখে আমাদেরও ধারণা হয় মেয়ে মারা গিয়েছে। পরে বুঝতে পারি তখনও সে বেঁচেছিল। পরে অবশ্য বাড়ি নিয়ে গেলে দেখি তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা হলে সে বেঁচে যেত। ওই চিকিৎসকের শাস্তি চাই।’’ যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শিশুটিকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। আমি তাঁদের বাড়ি নিয়ে যেতে বলিনি। আমি শুধু বলেছি মেয়েটি মারা গিয়েছে।’’
পরে মানিকচক থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আজ, সোমবার সকালে দেহ ময়না তদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সম্প্রতি মানিকচকের এক প্রসূতিকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা চিকিৎসা না করেই মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই প্রসূতি পথেই মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করেন। মানিকচক হাসপাতালের বিরুদ্ধে বারবার করে এমন অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’’