Atrial fibrillation: অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন কী?

হৃদ্‌যন্ত্রের এই সমস্যার সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। না হলে দেখা দিতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা

Advertisement

সৌরজিৎ দাস

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০০
Share:

মানুষের শরীরে হার্ট বা হৃদ্‌যন্ত্র হল একটি ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল পাম্প। এই অঙ্গের উপরের দু’টি চেম্বারকে বলে ‘অ্যাট্রিয়া’ এবং নীচের দু’টিকে ‘ভেনট্রিকল’। হার্টের উপরের ডান দিকের অ্যাট্রিয়ার সাইনোয়াট্রিয়াল নোড থেকে যে ইলেকট্রিক ডিসচার্জ হয়, তার ফলে যন্ত্রটির উপরের অ্যাট্রিয়াগুলি সঙ্কুচিত হয় এবং রক্ত উপরের চেম্বার থেকে নীচের ভেনট্রিকল-এ পৌঁছয়। এই ইলেকট্রিক সিগন্যালই ভেনট্রিকলে সঞ্চারিত হলে ওই চেম্বারগুলিও সঙ্কুচিত হয়। এই ক্রিয়ার ফলে রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। হার্টের সঙ্কোচন-প্রসারণের সময় ও ছন্দ হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। সাধারণত মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার এই ইলেকট্রিকাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে। সাধারণত, হার্ট রেট বা হৃদ্‌স্পন্দন ৭২-এর আশপাশে থাকে। কিন্তু খেলাধুলো বা অন্যান্য কাজের সময়ে এটা বেড়ে যায়। হৃদ্‌স্পন্দনের এই সাধারণ ছন্দ যখন ব্যাহত হয়ে হার্টের উপরের চেম্বারগুলি (অ্যাট্রিয়া) এক সময় তীব্র এবং অসংলগ্ন গতিতে সঙ্কুচিত হয় আর নীচের চেম্বারগুলি (ভেনট্রিকল) অন্য সময়ে সঙ্কুচিত হয়, তখন এই পরিস্থিতিকে বলা হয় অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (এফিব)। এফিব-এর সময়ে কিন্তু অ্যাট্রিয়াল রেট ২৫০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। আর ভেন্ট্রিকুলার রেট তখন সাধারণত ১০০-র বেশি ২০০-র মধ্যে থাকে। এফিব কী ভাবে হয়, কেন হয়, এর নিরাময় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করলেন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ড. সুনীলবরণ রায়।

Advertisement

ধরন

এফিব সাধারণত দু’ধরনের হতে পারে। এক, প্যারক্সিসমাল অর্থাৎ এই সমস্যা কখনও হয়, আবার কখনও হয় না। আর দুই, পারসিসটেন্ট অর্থাৎ সারাক্ষণ হতে থাকে।

Advertisement

রোগের লক্ষণ

এফিব-এর সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বুক ধড়ফড় করে, শ্বাসকষ্ট হয়, শরীর ঝিমঝিম করে এমনকি বুকে ব্যথাও হতে পারে। হৃদ্‌স্পন্দন খুব বেশি বেড়ে গেলে মানুষ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। ড. রায়ের মতে, এর চেয়েও বিপজ্জনক হল, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা। অনিয়মিত হৃদ্‌স্পন্দনের ফলে হার্ট থেকে রক্ত ঠিকমতো পাম্প হয় না, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে হার্টের ভিতরে, বিশেষ করে অ্যাট্রিয়াতে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই জমাট রক্ত বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে ছড়িয়ে গেলে শরীরে নানা ধরনের জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি এই জমাট রক্ত কোনও ভাবে মস্তিষ্কে চলে যায়, তা হলে সেই ব্যক্তি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

রোগের কারণ

নানা কারণে হতে পারে এফিব। যেমন, হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস থাকলে হতে পারে এই সমস্যা। যাঁদের ইস্কিমিক কিংবা রিউম্যাটিক ভালভুলার হার্ট ডিজ়িজ রয়েছে তাঁদেরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ড. রায় জানালেন, এফিব হতে পারে তাঁদেরও, যাঁরা খুব বেশি ধূমপান কিংবা মদ্যপান করেন। এগুলো ছাড়াও করোনারি আর্টেরি ডিজ়িজ, কনজেনিটাল হার্ট ডিজ়িজ, ক্রনিক লাং ডিজ়িজ, কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি, কনস্ট্রিকটিভ পেরিকারডাইটিস-এর মতো রোগের কারণেও এফিব-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। বয়স যত বাড়ে তত বেশি এফিব হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য কম, যদি না তার কোনও হার্টের সমস্যা থেকে থাকে।

এফিব নির্ণয়

ড. রায়ের মতে, হঠাৎ বুক ধড়ফড় শুরু হলে, বুকে ব্যথা কিংবা একটু কাজ করলে বা বসে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হলে, চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। ইলেকট্রো কার্ডিয়োগ্রাম (ইসিজি) বা হল্টার মনিটর করলেই এই সমস্যা সাধারণত ধরা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইকোকার্ডয়োগ্রাম টেস্ট থেকে সাধারণত জানা যায়, কী কারণে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হয়েছে। কারও যদি এফিব অজ্ঞাত অবস্থায় থাকে, তা পরবর্তী কালে নানা রকম জটিল সমস্যা নিয়ে দেখা দিতে পারে। এবং তখন এই সমস্যা সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।

নিরাময়ের পথ

ড. রায় জানালেন, হার্ট রেট কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হলেও সেটা কিন্তু রক্তের জমাট বাঁধাকে আটকাতে পারে না। সে ক্ষেত্রে রোগীকে ব্লাড থিনার জাতীয় ওষুধ দিতে হয়। কিন্তু সবাইকে ব্লাড থিনার দেওয়া যায় না। যাঁদের রক্তক্ষরণের প্রবণতা খুব বেশি থাকে, যেমন, পেটে আলসার কিংবা ব্রেন হেমারেজ, ব্রেন টিউমার, তাঁদের এই ধরনের ওষুধে আবার উল্টো বিপত্তি হতে পারে। তাই এই সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা খুব বুঝেশুনে ওষুধ দেন।

অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন যাঁদের হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁরা নিজেদের লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন আ নলে এই সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। যেমন, ধূমপানে আসক্ত ব্যক্তিদের ধূমপান বন্ধ করতে হবে, মদ্যপান করলেও পরিমিত। এ ছাড়া ওজন, ব্লাড প্রেশার, সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন-এর মতো সমস্যাকে গুরুত্ব না দিলে, আগামী দিনে আরও গুরুতর শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলেই সতর্কবাতা দিলেন
ড. সুনীলবরণ রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন