Online Food

ঘরেই রেস্তরাঁর খানা, নেটে ‘দেখা’ বন্ধুদের

বাড়িতে বসে খাবারের অভিনব আয়োজনই এখন ‘নিউ নর্মাল’।

Advertisement

ঋজু বসু 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৪:১৮
Share:

এ ভাবেই বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে রকমারি সুখাদ্য। নিজস্ব চিত্র

রবিবাসরীয় দুপুরে স্বাদ-বিলাসী বন্ধুদের জমায়েতও অন্য চেহারায়। ফেসবুকের গ্রুপে অনলাইনে দাম মেটানো বিশেষ পঞ্চপদী মেনু মোড়কবন্দি হয়ে যথাসময়ে যাঁর যাঁর বাড়িতে চলে এসেছিল। আড্ডার স্বাদটুকু পেতে খাওয়ার ঠিক আগে ভিডিয়ো কলে একজোট হল বন্ধুদের প্রিয় মুখগুলি।

Advertisement

কেউ বা পানীয়-বিয়ারের মাগ হাতে নিয়ে বাড়িতেই গুছিয়ে বসেছেন। খাওয়া ছাড়াও বহু দিন দেখা না-হওয়া আড্ডাবাজদের ভার্চুয়াল মোলাকাত। ‘দ্য ক্যালকাটা পর্কঅ্যাডিক্টস’ নামে শহরের পর্কপ্রেমী বন্ধুদের দল কোভিড-বিচ্ছিন্নতার যুগে নানা অভিনব খেয়ালের শরিক। গত জুন থেকে এ ভাবেই ‘দেখা’ হচ্ছে বন্ধুদের। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ‘বড়া খানা’ থেকে বিবিধ উপচার সহযোগে হ্যামের খিচুড়ির আস্বাদেও তাঁরা তৃপ্ত।

বাড়িতে বসে খাবারের অভিনব আয়োজনই এখন ‘নিউ নর্মাল’। কলকাতায় লকডাউন না-মানার অভিযোগ থাকলেও রেস্তরাঁয় হাজিরা তত বেশি নয়। তবে বোহেমিয়ানের কর্ণধার জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কোভিড পরিস্থিতিও একটা সুযোগ। জয় বলছেন, ‘‘বাড়িতে সহযোগী ছাড়াও সপ্তাহান্তে টেকঅ্যাওয়ের চাহিদা সামলাচ্ছি। তাতে খরচ কমছে।’’ নিজের পুরনো মেনু কার্ডের ‘পাগলা মামার’ বিরিয়ানির অনুপ্রেরণায় ইলিশ-মাংস নামাচ্ছেন জয়। পাঁচতারা আইটিসি সোনার পর্যন্ত সপ্তাহান্তে বিরিয়ানি এবং ললিত গ্রেট ইস্টার্ন বেকারি সম্ভার বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। আবার টি-বোর্ডে গুডরিকের টি রুমও খাবার সরবরাহ পরিকাঠামো গড়ে চায়ের সঙ্গে স্যান্ডউইচ-বার্গার থেকে ভিন্দালু, সসেজ কারি পর্যন্ত পৌঁছতে তৈরি। যাদবপুরের আনকোরা বিগ ব্যাং কাফেও সুইগি জিনির মাধ্যমে নিউ টাউন বা দমদম থেকে ফিশ অ্যান্ড চিপস ও কাঁচা লঙ্কা মুরগির অর্ডার পাচ্ছে। চাউম্যান, অউধ ১৫৯০-এর মতো রেস্তরাঁ চেনের দাবি, টেকঅ্যাওয়ের চাহিদা ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এখন বিরিয়ানি উৎসবে শামিল অউধ ১৫৯০। মাছ, চিংড়ি, কিমা, কোফতা-সহ ডজনখানেক বিরিয়ানি রেস্তরাঁ ছাড়াও বাড়িতে বসে মিলবে দেশপ্রিয় পার্ক, সল্টলেক, কালিন্দী বা সাদার্ন অ্যাভিনিউ থেকে।

Advertisement

পূর্ব ভারতের হোটেল-রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধার সুদেশ পোদ্দার বলেন, “রেস্তরাঁর ব্যবসা গড়ে চলছে ২০-২৫ শতাংশ। মদ্যপান বন্ধ। টেকঅ্যাওয়েই মুখরক্ষা করছে।” টেকঅ্যাওয়ে, হোম ডেলিভারির ব্যাকরণও ভেঙেচুরে যাচ্ছে।

কেয়াতলার চিনে রেস্তরাঁ টাক হেংয়ের কর্ণধার পৃথ্বীশ চক্রবর্তী যেমন মেনু কার্ডটাকেই আমল দিচ্ছেন না। বিশ্বস্ত অতিথি-বন্ধুদের স্বাদ-আহ্লাদ মেটাতে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে কার কী চাহিদা জেনে নতুন নতুন রান্না করছেন। তাঁর কথায়, “টেকঅ্যাওয়েতে রেখে খাওয়ার পদ বা উপকরণ দেওয়াটা জরুরি।” তাই স্যান্ডউইচে মাখানোর বয়ামবন্দি চিকেন বা পর্কপেস্ট, ফ্রোজ়েন মাংসের শিঙাড়ায় তিনি হাত পাকিয়েছেন। সসেজ-হ্যামের রকমারি সম্ভার পৌঁছতে সারা শহর ঘুরছেন। ইতিমধ্যে একটি অর্ডারে ২১০ জন অতিথিকে বাড়ি-বাড়ি চিনে লাঞ্চের থালা পৌঁছে দিয়েছেন পৃথ্বীশ। সম্প্রতি নিউ আলিপুরের কন্টেনমেন্ট জ়োনের এক বৃদ্ধ টানা সাত দিন ফ্রিজ়ে রেখে খাওয়ার খাবারও অর্ডার করেছেন।

টেকঅ্যাওয়ের নতুন আঙ্গিকের নাম এখন ‘ডু ইট ইয়োরসেল্ফ’। সিয়েনা কাফে নিজেদের তৈরি পাস্তা শুকনো অবস্থায় আলাদা সস-চিজ সহযোগে বাড়িতে পাঠাচ্ছে। একসঙ্গে ফুটিয়ে বা মাইক্রোওয়েভে দিলেই তৈরি। পঞ্জাবি খাবারের দিল দেসি, মোগলাইয়ের চাচাজান বা বার্গার-পিৎজ়ার শাখা মাই বিগ ফ্যাট বেলি আবার রুবি মোড়ের কাছে এক ছাদের নীচে ‘ক্লাউড কিচেন’ হিসেবে রয়েছে। সিটি সেন্টার, বি বা দী বাগের টাটকা ফলের রসের ব্র্যান্ড ‘ইয়েলো স্ট্র’ ইদানীং তাজা ফলও সরবরাহ করছে। ‘ওয়াও মোমো’ দুর্দিনে মোমো ছাড়া ময়দা, তেলও সরবরাহ করেছে। অতিথিদের আস্থা অর্জনে ভার্চুয়াল টুরের আয়োজন করছে গোলপার্কের ড্রয়িংরুম সদৃশ কাফে ‘দ্য ট্রাইব’। সেখানে ছবির প্রদর্শনীও অতিথিদের হাতছানি দিচ্ছে। সুদিন ফেরার আশায়, সবই মরিয়া চেষ্টার রকমফের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন