Coronavirus

সংক্রমণের সব শর্ত পূরণ করে চূড়ান্ত ‘সফল’ কোভিড

ভাইরাসের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি হল, সংক্রমিত ব্যক্তি খুব বেশি অসুস্থ হবে‌ন না।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৭:৩২
Share:

ছবি: এএফপি।

কী কারণে সার্স কোভ-২ সংক্রমণ ছড়াতে এতটা সফল?― এই প্রশ্ন শুরু থেকেই ভাবাচ্ছিল বিজ্ঞানী-গবেষকদের। শুধুমাত্রই ভাইরাসের মিউটেশন, না কি অন্য কোনও ‘ফ্যাক্টর’ জড়িত রয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা চলছিল। যদিও সার্স কোভ-২ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থাকার জন্য সে সম্পর্কে চূড়ান্ত কিছু বলা যে সম্ভব নয়, তা জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। কিন্তু গত ন’মাসে সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রাথমিক বিশ্লেষণ, কোনও ভাইরাসের ‘সাফল্য’-এর মাপকাঠি যদি রোগ ছড়ানোকে (ট্রান্সমিশন) ধরা হয়, সে দিক থেকে সার্স কোভ-২ চূড়ান্ত ‘সফল’। গবেষক মহলের বক্তব্য, পুরো বিষয়টি যদি ভাইরাসের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের ছড়ানোর জন্য যে ‘আদর্শ’ পরিস্থিতি দরকার, তার সব শর্তই পূরণ করেছে সার্স কোভ-২।

Advertisement

কী এই শর্ত?

ওয়াকিবহা‌ল মহল জানাচ্ছে, ভাইরাসের আক্রমণে যদি ‘হোস্ট’-এর (উদ্ভিদ, প্রাণী বা মানুষ) মৃত্যু হয়, তাতে ভাইরাসের লাভ হয় না। কারণ, তখন ভাইরাসটি নিজেকে ছড়ানোর সুযোগ পায় না। ফলে ভাইরাসের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি হল, সংক্রমিত ব্যক্তি খুব বেশি অসুস্থ হবে‌ন না। অর্থাৎ, অসুস্থ হয়ে বাড়িতে বসে যাবেন না। বাড়িতে বসে গেলে তো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না। সংক্রমিত ব্যক্তি একটু অসুস্থ হয়ে অল্প হাঁচবেন-কাশবেন, মানে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারবেন, কিন্তু নিজে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন (উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের রোগীদের যেমনটা হচ্ছে),— এই হল ভাইরাসের সাফল্যের শর্ত। সে দিক থেকে সার্স কোভ ২-এর সাফল্য প্রশ্নাতীত। পরিসংখ্যানই বলছে, অতিমারি শুরুর ন’মাস পরেও প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে তিন লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন! মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ভাইরাসের সফলতার মাপকাঠি যদি ট্রান্সমিশন হয়, তা হলে গত ১০০ বছরে কোভিড ১৯-এর মতো এতটা সফল ভাইরাস বোধহয় দেখা যায়নি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা আবহে 'সুপারহিট' পানীয়ের সম্ভার বাড়িতেই, কী ভাবে বানাবেন​

আরও পড়ুন: জন্ম বধির সারা বিশ্বের ৩.৫ কোটি শিশু, আপনার বাচ্চা ঠিক ভাবে শুনতে পাচ্ছে তো?​

বিজ্ঞানীদের মতে, এমনিতে যে কোনও ভাইরাসই ক্রমাগত মিউটেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। তাতে নতুনত্ব কিছু নেই। কোনও মিউটেশনে ভাইরাসটি বিপজ্জনক হতে পারে, কোনওটার কারণে আবার দুর্বল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, “যেটি উল্লেখযোগ্য তা হল, সার্স কোভ-২-এর সংক্রমণের হার। এই হার যত ক্ষণ না কমবে, তত ক্ষণ কত জন সুস্থ হয়ে উঠছেন, মৃত্যুহার কম, এগুলোর খুব বেশি গুরুত্ব নেই। কারণ, ট্রান্সমিশন তাতে আটকাবে না।’’

তবে এখনই সার্স কোভ-২ নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলতে নারাজ অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, সে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই হোক বা আমেরিকার ‘দ্য সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-ই (সিডিসি) হোক না কেন, ভাইরাস নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলেও ফের তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কথাও বলতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স অ্যান্ড র‌্যাপিড রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনস সেল ফর কোভিড ১৯’-এর প্রাক্তন এক টেকনিক্যাল অফিসারের কথায়, ‘‘ভাইরাসটিকে বোঝা এখনও আমাদের বাকি রয়েছে। প্রতিদিন নতুন তথ্য, অনেক সময় যা পরস্পরবিরোধীও বটে, তা গবেষণায় উঠে আসছে।’’ ‘ওয়ার্ল্ড সোসাইটি অব ভাইরোলজি’-র প্রেসিডেন্ট এবং ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি’-র এমেরিটাস বিজ্ঞানী অনুপম বর্মা বলছেন, ‘‘অতিমারি থামলে তবেই সব তথ্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ভাবে বলা সম্ভব, ভাইরাসটি কতটা সিভিয়র। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের নিরিখে দেখা যাচ্ছে যে, কোভিডের সংক্রামক ক্ষমতা বেশি হলেও তার মারণ ক্ষমতা কম। তাঁরাই মূলত সংক্রমিত হচ্ছেন, যাঁরা নিয়ম মানছেন না বা নিয়ম মানলেও সতর্কতায় কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন