herbal juices

করোনা দূরে রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নিন, ভেষজ ক্বাথ বানান এই ভাবে

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ১৭:২২
Share:

কোভিডকে ঠেকাতে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এখন যেহেতু প্রতিষেধক না আসা অবধি করোনার সঙ্গেই থাকতে হবে, কিছু নিয়ম মেনে ও ভেষজ খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

Advertisement

আয়ুর্বেদ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানিয়েছেন, “মানুষ জন্মসূত্রে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়েছেন, আয়ুর্বেদে যাকে বলে ‘সহজ বল’, তা রাতারাতি বাড়ানো যায় না। পুষ্টি, ব্যায়াম ও নিয়ম-নিষ্ঠার হাত ধরে সে আসে, যাকে বলে অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনিটি বা ‘যুক্তিকৃত বল’। ভ্যাকসিন দিয়েও নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে যুক্তিকৃত বল গড়ে তোলা যায়। যে রোগের ভ্যাকসিন নেই, যেমন কোভিড, সেখানে সঠিক জীবনযাপন ও ঘরোয়া ওষুধই ভরসা। খেয়াল রাখতে হবে যাতে জীবাণু কাছে ঘেঁষতে না পারে বা ঘেঁষলেও শরীর লড়তে পারে সর্বশক্তি দিয়ে।"

তাঁর মতে, আর এক ধরনের ইমিউনিটি আছে, যাকে বলে ‘কালজ বল’, ঋতু পরিবর্তন ও বয়সের সঙ্গে তা পাল্টায়। সে জন্যই দেখা যায় এমনিতে সুস্থ, কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় বা বয়স বাড়লে তিনি সংক্রমিত হচ্ছেন। এই সব সমস্যা ঠেকিয়ে যুক্তিকৃত বল বাড়াতে চাইলে নিয়ম মেনে জীবনযাপন করার পাশাপাশি কিছু ভেষজ খাবার পথ্য হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: লকডাউন ধীরে ধীরে উঠছে, বাইরে বেরতে হবে, কী কী সতর্কতা মেনে চলতেই হবে

ভেষজ ক্বাথ বানিয়ে নিতে পারেন বাড়িতেই।

ঘরোয়া পথ্য বানানোর পদ্ধতি

চরক সংহিতায় ঘরোয়া ওষুধ ও পথ্য বানানোর পাঁচটি পদ্ধতির কথা বলা আছে। যেমন—

• লতাপাতা মিক্সিতে বেটে রস বার করে, যাকে বলে স্বরস।

• মশলা ও ভেষজ জলে ফুটিয়ে, যাকে বলে ক্কাথ বা কাড়া।

• কল্ক বা সব কিছু মিশিয়ে বেটে পেস্ট বানিয়ে।

• ভেষজ ও মশলা ঠান্ডা জলে সারা রাত ভিজিয়ে পর দিন সকালে ছেঁকে নিয়েও খাওয়া যায়। যার নাম শীত বা হিম।

• ভেষজ ও মশলার গুঁড়ো গরম জলে ভিজিয়ে ছেঁকে চায়ের মতো খেলে তাকে বলে ফান্ট।

ক্কাথ বা কাড়া কী ভাবে বানাবেন

কিছু ভেষজ দ্রব্যের রস করা যায় না। যেমন, বিভিন্ন রকম মশলা। তাদের দিয়ে বানানো হয় ক্কাথ। এর সঙ্গে মেশানো হয় আরও নানা রকম ইমিউনিটি বুস্টার। যেমন, গুলঞ্চ, আদা, তুলসি, মধু ইত্যাদি। ক্কাথ নানা রকম ভাবে বানানো যায়। দেবাশিসবাবু জানালেন চার রকমের পদ্ধতির কথা।

প্রথম উপায়: ৩ কাপ জলে এক চা-চামচ করে এলাচের গুঁড়ো, দারচিনির গুঁড়ো, টাটকা আদা বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে এক কাপ করুন। ছেঁকে স্বাদ মতো মধু মিশিয়ে গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নিন।

দ্বিতীয় উপায়: ৮-১০টা তুলসি পাতা, ৫-৬টা গোলমরিচ ও আধ চামচ আদা বেটে জলে ভাল করে ফুটিয়ে, ছেঁকে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। সর্দি-কাশির কষ্ট লাঘব হবে অনেকটাই।

তৃতীয় উপায়: আধ চা-চামচ দারচিনির গুঁড়ো এক কাপ জলে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খান। চটজলদি এনার্জি পাবেন। অন্যান্য উপকার তো আছেই।

চতুর্থ উপায়: আধ চা-চামচ গুড়ুচি এক কাপ জলে ফুটিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, বাড়বে হজম শক্তি। কমবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ।

আরও পড়ুন: বাসে-ট্রামে উঠতে হবে এ বার, এই সব সতর্কতা না মানলে বিপদ বাড়বে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভরসা রাখুন ক্বাথে।

ক্বাথের উপকার

• ক্কাথ জীবাণুনাশক। নিয়মিত ক্বাথ খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমে বলে ক্রনিক অসুখের আশঙ্কা ও প্রকোপও কমে। ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, আর্থাইটিস সবই আছে এই তালিকায়। কোভিড যখন জটিল পর্যায়ে পৌঁছয়, তখন শরীর জুড়ে এক রকমের প্রদাহ শুরু হয়। তার জেরে রোগীর অবস্থা জটিলতর হয়ে ওঠে। তখন সেই প্রদাহ ছেকাতেও এমন ক্বাথ খুব কাজে আসে।

• অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ থাকায় শরীরে প্রতিনিয়ত যে কোষের ক্ষতি হয়, যার জেরে ক্রনিক রোগের প্রকোপ বাড়ে, তার হার কমে।

• ক্বাথে থাকা কিছু উপাদান সরাসরিও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেজন্য এদেণ ইমিউনিটি মডিউলেটার বা ইমিউনিটি এনহান্সার বলা হয়। তবে কিছু উপাদানের সঙ্গে কিছু ওষুধের ক্রিয়া-বিক্রিয়াও হয়। কাজেই কোনও অসুখবিসুখ থাকলে নিয়মিত ক্বাথ খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন