এনসেফ্যালাইটিসে ফের তথ্য গোপনের অভিযোগ

এনসেফ্যালাইটিসে উত্তরবঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জানুয়ারির থেকেই এ পর্যন্ত মারা জাপানি এনসেফ্যালাইটিস(জেই)বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে মারা গিয়েছেন ৫৫ জন বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৯
Share:

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আসার আগে সাফাই চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এনসেফ্যালাইটিসে উত্তরবঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জানুয়ারির থেকেই এ পর্যন্ত মারা জাপানি এনসেফ্যালাইটিস(জেই)বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে মারা গিয়েছেন ৫৫ জন বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। পয়লা জুলাই থেকে শুধু ধরলে, মৃত্যুর সংখ্যাটা ৪২। গত এক মাসে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও আলাদা একটি কেবিন করা ছাড়া বিশেষ কোনও উদ্যোগ দেখায়নি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার কোচবিহারে এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতির সামাল দিতে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কড়া সমালোচনা করেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এদিন কোচবিহারেই, কোনও তথ্যই গোপন করা হয়নি বলে পাল্টা দাবি করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

Advertisement

রবিবার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৪ জন। শনিবার দুপুরের পর থেকে নতুন করে খিঁচুনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কোনও খবর নেই। গত চব্বিশ ঘন্টায় ২ জন নতুন করে খিঁচুনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। দু’জনকে সুস্থ হয়ে যাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এনসেফ্যালাইটিস বিষয়ে প্রথম থেকেই গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই সরকারিভাবে তারা বিবৃতি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকী জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাসও কোনওরকম তথ্য দেওয়া বারণ আছে বলে জানান।

বিমানবাবুর অভিযোগ, রাজ্য সরকার অন্য আর পাঁচটা বিষয়ের মতই এনসেফ্যালাইটিসকেও হালকাভাবে দেখছে। এদিন বামফ্রন্টের কর্মসূচিতে যোগ দিতে কোচবিহারে এসেছিলেন বিমানবাবু। বিকালে সিপিএমের জেলা দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এনসেফ্যালাইটিস প্রসঙ্গে রাজ্যের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। বিমানবাবু বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শুধু নয়, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলোর হাসপাতালেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সমস্ত মৃত্যুই সরকার নিয়মমাফিক ছোট্ট ঘটনা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে।” কিন্তু ওই এলাকাগুলোর মৃত্যুর সঠিক তথ্যও দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ‘‘এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সতর্কতামূলক সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উদ্বেগের ব্যপার নেই।’’ এমনকী আক্রান্ত ও মৃতদের সরকারিভাবে তথ্য গোপনের অভিযোগও তিনি উড়িয়ে দেন। মিডিয়ার রমরমার যুগে তথ্য গোপনের কোন জায়গা নেই বলেও দাবি তাঁর। সেইসঙ্গে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকা সরোজমিনে ঘুরে দেখে রাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর এদিন দাবি করেন।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রই অবশ্য জানা গিয়েছে, কোচবিহার সহ বিভিন্ন জেলায় ৬০ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিস(জেই)-র টিকাকরণ করা হয়নি বলে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি কোচবিহারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বয়স্কতদের টিকাকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, কিছু এলাকায় বয়স্কদের টিকাকরণ করা হলেও অনেক জায়গায় এখনও তা হয়নি তা সত্যি। তবে দ্রুত বাকি জেলাগুলোতেও টিকাকরণের চেষ্টা হচ্ছে।”

আজ সোমবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করার কথা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবীর। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চাইতে পারেন মন্ত্রী বলে জানা গিয়েছে। তিনি আসার আগে এদিন গোটা মেডিক্যাল কলেজ চত্বর সাফাই করা হয়েছে। বহুদিনের জমে থাকা জঞ্জালও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উপস্থিত রোগীর আত্মীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, একদিনেই যদি এমন সাফাই করা সম্ভব, তাহলে নিয়মিত পরিস্কার রাখা হয় না কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন