ডায়াবেটিস বাড়াচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। যা কখনও কখনও যন্ত্রণাহীন। ভয়াবহ এই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা ক্রমশই বাড়ছে। আর তাই প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীদের হার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। কারণ, অনেক সময় এই হার্ট অ্যাটাক এতটাই যন্ত্রণাহীন হয় যে প্রথম কয়েক ঘণ্টা রোগী নিজেই বুঝতে পারেন না যে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
তা হলে?
চিকিত্সক সুনীল বরণ রায় বললেন, ‘‘যদি কোনও ডায়াবেটিক রোগী শ্বাসকষ্ট, উত্কণ্ঠা বা বুকে ব্যথার মতো সমস্যায় ভোগেন তাঁকে অবিলম্বে নিকটবর্তী হাসপাতালের এমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া উচিত্।’’ রবিবার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের প্রাক্কালে লেকটাউনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে জানা গেল এমনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। হাঁটা, রোগী-চিকিত্সক জরুরি প্রশ্নোত্তর, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ও দে়ড়শো রোগীর বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা নিয়েই ছিল এই অনুষ্ঠান।
চিকিত্সক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানালেন, ডায়াবেটিসের ফলে চোখ, কিডনি, হার্ট, ব্রেন, নার্ভের যে মারাত্মক ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। যত তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস ধরা পড়বে তত বেশি অঙ্গহানির ঝুঁকি কমবে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৌগত হালদার পরামর্শ দেন, ডায়াবেটিস ধরার পড়ার পরই রেটিনোথেরাপি পরীক্ষা করানোর। বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট নন্দিনী বিশ্বাস ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া বুকের ইনফেকশন রুখতে ভ্যাক্সিনেশনের উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘‘ডায়াবেটিস বুকে বোঝা হিসেবে চেপে বসতে পারে। কাশি বা শ্বাসকষ্ট সাধারণ নিউমোনিয়া ভেবে অবহেলা করবেন না। ডায়াবেটিস থাকলে এই সমস্যাই হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ। তাই ফ্লু ও নিউমোককাল ভ্যাক্সিন সংক্রমণ রোখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ এই সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে তা সেপ্টিসেমিয়ার মতো চরম অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেন করেন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চিকিত্সক শুভায়ন ভট্টাচার্য।
ডায়টিশিয়ান সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ তুলে ধরেন ডায়াবেটিস মোকাবিলায় ব্যালান্স ডায়েটের গুরুত্ব। থোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সার্জন অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ডায়াবেটিস ধরা পড়লে প্রথমেই খেয়াল রাখা উচিত্ সন্ধের দিকে পায়ের পাতা ফুলছে কিনা। এই সমস্যা দেখা দিলে সময় না নষ্ট করে নিউরোপ্যাথি ও ভ্যাসকুলোপ্যাথির সাহায্য নিন।
২০১১ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল আর্বান ডায়াবেটিস সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতার জনসংখ্যার ১১.৭ শতাংশ ডায়াবেটিসের শিকার। ২০১২-১৩ সালে আইআইটি খড়্গপুর থেকে প্রকাশিত একটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে গ্রাম বাংলায় এই হার শতকরা ৩.৫ থেকে ৫.৭ শতাংশ পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়া (১৩.২ শতাংশ), কলকাতা (১২ শতাংশ) ও বর্ধমানের (৮.৭ শতাংশ) বাসিন্দারা। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমাদের সর্বপ্রথম কাজ কী ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী অপরিক্ষীতই থেকে যান। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়লে, সঠিক চিকিত্সা ও নিয়ম মেনে চললে পরবর্তী কালে চোখ, কিডনি, নার্ভ, হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বড়সড় ক্ষতি রোখা সম্ভব, জানালেন ডায়বেটোলজিস্ট সৌম্যব্রত রায়চৌধুরী।
১৮৯১ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম হয় ইনসুলিনের আবিষ্কর্তা ফ্রেডেরিক গ্রান্ট ব্যানটিংয়ের। ১৯৯১ সালে এই দিনটিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ঘোষণা করে দ্য ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফ্রেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেনশ।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস বাড়াচ্ছে অঙ্গহানির আশঙ্কা