মারণজ্বরে মৃত কত, নানা কর্তার নানা মত

এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছেন ঠিক কত জন? এই রোগে উত্তরবঙ্গে মৃতের সংখ্যা এবং তাঁদের পরিচয় নিয়ে প্রশাসনের নানা শীর্ষ কর্তার নানা বিবৃতিতে বিভ্রান্তি বেড়েছে বই কমেনি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। তাই এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে লুকোছাপা চলবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৩
Share:

এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে সরকারি ব্যর্থতার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়াচ্ছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসক ও ছাত্রদের একাংশ। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছেন ঠিক কত জন? এই রোগে উত্তরবঙ্গে মৃতের সংখ্যা এবং তাঁদের পরিচয় নিয়ে প্রশাসনের নানা শীর্ষ কর্তার নানা বিবৃতিতে বিভ্রান্তি বেড়েছে বই কমেনি।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। তাই এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে লুকোছাপা চলবে না। কিন্তু একই সংবাদিক সম্মেলনে গৌতমবাবু যখন এ দিন মৃতের সংখ্যা ১ বলে জানাচ্ছেন, তখন পাশে বসা দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলছেন ১ নয়, মৃতের সংখ্যা হবে ৩।

গৌতমবাবুর দেওয়া তথ্য বলছে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যিনি মারা যান তাঁর নাম বিরসা মিঞা (৭০), বাড়ি কার্শিয়াঙের মেরনবাড়ি চা বাগানে। তাঁর শরীরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য মৃতদের কোনও পরিচয় জানাননি। বলেছেন ওই তথ্য দেবেন রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

Advertisement

কলকাতায় রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী আবার মৃতদের যে পরিচয় দিয়েছেন, তাতে মন্ত্রীর দেওয়া নামটিই নেই। বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, উত্তরবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁরা সকলেই মারা গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা বছর ২৩-এর এক জন মারা গিয়েছেন। মারা গিয়েছেন বানারহাটের বাসিন্দা ২১ বছরের জয়া শাইবু নামে এক যুবতীও। ১৩ বছরের এক কিশোরেরও মৃত্যু হয়েছে, তার বাড়ি মেখলিগঞ্জে।

এর সঙ্গে মন্ত্রীর দেওয়া নামটি ধরলে মৃতের সংখ্যা কিন্তু বেড়ে দাঁড়ায় ৪। কোন তথ্যটি ঠিক, তা নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত ধন্দ কাটেনি।

স্বাস্থ্য অধিকর্তার দেওয়া হিসাব বলছে, উত্তরবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও দু’জন। তার মধ্যে হেমতাবাদের বাসিন্দা ৮ বছরের এক বালক রয়েছে। তাকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মালদহ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পুরনো মালদহের বাসিন্দা ২৯ বছরের এক যুবক। দক্ষিণবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় জ্বর, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি নিয়ে আরও চার জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের এনসেফ্যালাইটিস হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এঁদের মধ্যে একজন বাঁকুড়ার, এক জন মুর্শিদাবাদের, এক জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ও এক জন নদিয়ার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ দিন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস জানান, গত জানুয়ারি মাস থেকে বুধবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গে ১৩৫ জন মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে ৩৩ জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত। পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে, তা বোঝাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর হার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ৩০%। এখানে এখনও পর্যন্ত তা ২৮%।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্ত্রী দাবি করলেও, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপ্রতুল পরিকাঠামোর অভিযোগে এ দিন পথে নেমেছেন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়াদের একাংশ। বৃহস্পতিবার তাঁরা কলেজে ছাত্র ধর্মঘট পালন করেন। এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিকেলে হিলকার্ট রোডে মিছিলও করেন তাঁরা। পরিকাঠামো ঠিক করার দিকে নজর না দিয়ে স্বাস্থ্য কর্তাদের সাসপেন্ড করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের সমর্থক পড়ুয়াদের একাংশকেও ওই আন্দোলনে সামিল হতে দেখা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন