কাশ ফুল, শরতের আকাশ, শপিং, নতুন ফ্যাশন— সব মিলিয়ে পুজো আসার আগে আমেজ তৈরি করার দায়িত্বটা এরা ভাগাভাগি করে নেয়। কিন্তু, মা দুগ্গার বিদায়ের পর পুজোর রেশ ধরে রাখার দায়িত্ব কিন্তু একা বিজয়াকেই ঘাড়ে তুলে নিতে হয়।
কালীপুজো না হলেও নিদেন পক্ষে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত তো রেশ টানতেই হবে। তাই আজ এর বাড়ি, তো কাল ওর বাড়ি গিয়ে বিজয়া সারার পালা তো বাঙালি সেই কবেই ভুলেছে। এখন কি আর আগের মতো নারকেল কুরে হাতে পাকানো নাড়ু, প্রতি কামড়ে মুখে পড়া নারকেল কুচির আবেশে সুস্বাদু ঘুগনি, মুচমুচে নিমকি ভাজার সময় আছে? কোনও কোনও বাড়িতে বয়স্কা দিদিমা-ঠাকুমারা বেঁচে থাকলে সে সব অমৃতের কৃপা দৃষ্টি মেলে কখনও সখনও। বাকি বলতে বিজয়ার এখন পোশাকি নাম ‘থ্রোব্যাক।’
বিজয়ার হারিয়ে যাওয়া বোঁদের পায়েসের রেসিপি দেখুন
দশমীর পর দিনই অফিস যাওয়ার তোড়জো়ড়, মায় চার দিন যারপরনাই ভোগ, চাইনিজ, বিরিয়ানি, কন্টিনেন্টাল পেঁদিয়ে এ বার ডায়েটে না ফিরলেই নয়। বিজয়ার মিষ্টির কথা এখন ভাবলেও যেন কোমরটা আরও ইঞ্চি দুয়েক চওড়া হয়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপে হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লার ছবি আসতেই ঝটপট ফরওয়ার্ড টু অল। দেখে জিভে জল আসার আগেই। সেই সঙ্গেই কমপ্লিট বিজয়া সারা। আরও শর্টকাটে সারতে গেলে ফেসবুক ওয়াল তো আছেই। এক দেওয়াল লিখনেই বিজয়ার শুভেচ্ছা ভাইরাল।
তবে, মন কি মানে? অফিসে গিয়ে না বসে কাজে মন, না ভাল লাগে আবার সেই ছকে বাঁধা রুটিন। একটু পর পরই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের ওয়াল খুলে সপ্তমী-অষ্টমীর স্মৃতি রোমন্থন। আর মাঝেই মাঝেই জমিয়ে রাখা ছবি এডিটের তুলি বুলিয়ে পোস্ট। ক্যাপশন #থ্রোব্যাকঅষ্টমী বা #সপ্তমী২০১৭। কমেন্ট, লাইকের বন্যার মাঝে জানিয়ে দেওয়া শুভ বিজয়া, পুজোর চার দিনের নস্ট্যালজিয়া ঝালিয়ে নেওয়া।
শহুরে, আধুনিক বাঙালির কাছে বিজয়া এখন এটুকুই। শুধু এক রয়ে গিয়েছে ওদের কাছেই। বিসর্জনের পর দিন সকালে দরজায় ঢাকের কড়া না়ড়াতেই ঘুম ভাঙে এখনও। বকশিস পেয়ে একগাল নির্মল হেসে শুভ বিজয়া জানিয়ে এ বছরের মতো বিদায় জানিয়ে চলে যান ওরা। বাড়িতে যে ওদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে মুখগুলো। বছরের এই সময়ই তো মেলে কৃপাদৃষ্টি। কবে শহর থেকে ‘শুভ বিজয়া’ জানিয়ে ফিরবেন বাড়ির পুরুষেরা, আর শুরু হবে কয়েক দিনের একটু ভাল থাকা। তিলের সঙ্গে এখো গু়ড়ের সুগন্ধে নাড়ুর পাকে শুরু হয়ে যাবে চালের গুঁড়োয় নিকনো উঠোনে আলপনা দেওয়ার প্রস্তুতি। মা লক্ষ্মী যে এ বার একটু বেশিই প্রসন্ন হয়েছেন।