Dust particles

শীতকালে বাড়ে ধূলিকণার দূষণ

বাতাসে ক্রমবর্ধমান ধূলিকণার জেরে ফুসফুসের নানা রোগ জটিল হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব অন্যতম প্রধান সমস্যা।গবেষকদের দাবি, শীতে কাশি এবং অ্যাজ়মার টান বেড়ে যাওয়াতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এই ধূলিকণা দূষণ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বাতাসে ক্রমবর্ধমান ধূলিকণার জেরে ফুসফুসের নানা রোগ জটিল হয়ে উঠছে।

Advertisement

অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

শীতে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ধূলিকণা জনিত দূষণের সমস্যা প্রবল ভাবে দেখা দেয়। গবেষকেরা জানান, শীতকালে বাতাসের ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকার প্রধান কারণ হল এই সময়ে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর উপরের বায়ুস্তরের থেকে ঠান্ডা থাকে। এই কারণে অনেক জায়গায় ‘বৈপরীত্য উত্তাপ’ তৈরি হয়। ফলে, নীচের স্তরের ধূলিকণা বা এরোসলগুলি উপরের দিকে উড়তে পারে না। এরা বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ারেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাতাসে ধূলিকণার ঘনত্ব বাড়ার ফলে বায়ুদূষণ ঘটে।

Advertisement

শীতকালে আমাদের দেশে, বিশেষত কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলিতে ফসল কাটার মরসুম চলে। গবেষকদের দাবি, সেই সময়ে কৃষিক্ষেত্র থেকেও প্রচুর ধূলিকণা, ফুলের রেণু বায়ুস্তরে মেশে। এরই সঙ্গে সঙ্গে এই সময়ে ইটভাঁটায় কাজ চলার কারণেও ধুলোর পরিমাণ বাড়ে। এ ছাড়া, বৈদ্যুতিক কাজ, জলের লাইন পাতা বা নিকাশি নালা তৈরির ও রাস্তার কাজ শীতে বেশি হওয়ার ফলে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ে। কাটোয়ার পরিবেশকর্মী ও কাটোয়া কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের শিক্ষক টোটন মল্লিক জানান, অনেক রাজ্যে রবি শস্যের চাষের আগে খরিফ মরসুমের ফসলের গোড়া পুড়িয়ে দেওয়ার হয়। এতেও বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ে। তাঁর দাবি, বাতাসে ভাসমান কণাগুলি মূলত ০.০১ মাইক্রন থেকে ১০০ মাইক্রন পর্যন্ত আকারের হতে পারে। ভাসমান এই উপাদানগুলির মধ্যে থাকে ডাস্ট, ফ্লাই অ্যাশ, সিমেন্ট, কয়লার কণা, ‘ফিউম’ বা উদ্বায়ী পদার্থ, লবণকণা, শিল্পজাত বিভিন্ন রাসায়নিকের কণা, ফুলের পরাগরেণু প্রভৃতি।

কাটোয়ার প্রবীণ চিকিৎসক পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন পদার্থের কণাকে ‘সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার’ (এসপিএম) বলে। এসপিএম বেশি হলে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হয়। এই ধরনের পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে সমস্যা সৃষ্টি করে। এদের প্রভাবে শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতাও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরেশবাবু জানান, ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণে অতিবেগুনি রশ্মির জেরে এমনিতেই ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এবং ছানি-সহ নানা চোখের রোগের বাড়বাড়ন্ত দেখা দিচ্ছে। ধূলিকণা দূষণ সেই পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ করে তোলে।

Advertisement

গবেষকদের দাবি, শীতে কাশি এবং অ্যাজ়মার টান বেড়ে যাওয়াতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এই ধূলিকণা দূষণ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বাতাসে ক্রমবর্ধমান ধূলিকণার জেরে ফুসফুসের নানা রোগ জটিল হয়ে উঠছে। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এ বিষয়ে সচেতনতা থাকলেও আমাদের দেশে সচেতনতার অভাব একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। ভারতের মতো দেশে এখনও বহু স্থানে কয়লার জ্বালানিতে রান্না হয়। ফলে, বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণা দূষণের সমস্যা বাড়ছে। গবেষকদের দাবি, ধূলিকণা আঢাকা খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে পেটের অসুখ বাঁধাতেও পারে। শরীরে এর অতিরিক্ত প্রবেশ শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশকে ব্যাহত করে। স্নায়ুরও ক্ষতি হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদেরও শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কোভিড পরিস্থিতিতে ধূলিকণা দূষণ সম্পর্কে বিশেষ ভাবে সচেতন থাকা জরুরি বলে দাবি করছেন গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে ধূলিকণা এড়াতে মাস্কের ব্যবহার, হাত ধোওয়ার মতো স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক দিকগুলিকে একেবারেই অবহেলা করা চলবে না। পরিবেশবিদদের দাবি, আমাদের দেশে শিল্পাঞ্চলগুলিতে বেশি ধূলিকণা থাকায় ‘হিট আইল্যান্ড’ তৈরি হচ্ছে। জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘ, কুয়াশা, অকাল বৃষ্টির ঘটনাও বাড়াচ্ছে।

চিকিৎসকেরা জানান, বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে তাকে সংক্রামিত ধূলিকণা বলে। এই সংক্রমিত ধূলিকণার সান্নিধ্যে এলে মানবশরীরে টিউবারকিউলোসিস, নিউমোনিয়া, পজিটাকোসিস, মাথাযন্ত্রণা, ঝিমুনি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজ়মা, কাশি ইত্যাদি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলিতে ধূলিকণা দূষণ নিযন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও অনুরূপ কাজ করা যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, ধূলিকণা দূষণজনিত কারণে সৃষ্ট বক্ষরোগের চিকিৎসার বন্দোবস্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আছে। জেলার নানা প্রান্তেও সেই পরিকেঠামো তৈরি করার কাজ চলছে। আর ধূলিকণ দূষণের উৎসগুলির দিকে আগামী দিনে সতর্ক নজরদারি চালানো হবে। পরিস্থিতি যাতে মাত্রাতিরিক্ত খারাপ না হয় সে বিষয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও প্রশাসন একযোগে কাজ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন