বিক্রি কমে তলানিতে, চিন্তায় সাবেক রেস্তোরাঁ

ঠিক যেন টাইমমেশিনে চড়ে ’৯০-এর দশকের গোড়ায় ফিরে যাওয়া! কিন্তু এ ভাবে ফিরতে কে-ই বা চেয়েছিল? পার্ক স্ট্রিটের জনপ্রিয় পানশালার দোতলায় বসে বোধহয় সেটাই ভাবছিলেন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই দুই সহকর্মী রিতা শর্মা ও অভিষেক দত্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩০
Share:

বদলে গিয়েছে ভিড়ে ঠাসা ছবি। পার্ক স্ট্রিটের পানশালায়। — সুদীপ আচার্য

ঠিক যেন টাইমমেশিনে চড়ে ’৯০-এর দশকের গোড়ায় ফিরে যাওয়া! কিন্তু এ ভাবে ফিরতে কে-ই বা চেয়েছিল?

Advertisement

পার্ক স্ট্রিটের জনপ্রিয় পানশালার দোতলায় বসে বোধহয় সেটাই ভাবছিলেন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই দুই সহকর্মী রিতা শর্মা ও অভিষেক দত্ত। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় সামান্য বিয়ার ও কাটলেট খেয়ে দু’জনে বিল মেটালেন পকেট ঝেড়েঝুড়ে। অভিষেক মানিব্যাগ খুলে দেখালেন, ‘‘আমার সঙ্গে শুধুই বাতিল কাগজ (কয়েকটি ১০০০-এর নোট ছাড়া আর কিছু নেই)। ভাগ্যিস রিতার কাছে কিছু ১০০-র নোট ছিল।’’

গঙ্গা দিয়ে যত জলই গড়াক, এখনও ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডকে স্বীকার করে না এই পানশালা। নোট বাতিলের আচমকা ফতোয়ায় অতিথি-সংখ্যা কার্যত তলানিতে। জনৈক কর্মচারী বললেন, ‘‘মাংসের স্টেক এমনিতে রোজ ১৮০-৮৫ প্লেট বিক্রি হতো, এখন চার-পাঁচটার বেশি অর্ডার মিলছে না।’’ কর্মীদের কারও আশঙ্কা— বিক্রির যা হাল, মাস গেলে মাইনে হবে কি না সন্দেহ! ম্যানেজার আব্দুল মজিদের কথায়, ‘‘রোজ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’’ কার্ড পদ্ধতি বা প্লাস্টিক মানি-র লেনদেন চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা কার্যকর হতে আরও সপ্তাহখানেক লাগবে বলে তাঁর ধারণা।

Advertisement

শহরের রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠনের কর্তা সুদেশ পোদ্দারেরও ধারণা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত দিন ১০-১২ লাগবে। ব্যাঙ্ক থেকে নতুন নোট সকলের হাতে আসতে সময় লাগবে। এখনও কলকাতার অতিথিদের একাংশ নগদে টাকা দিতেই পছন্দ করেন। তাঁরা অনেকে রেস্তোরাঁমুখো না হওয়ায় অন্তত ৩০-৩৫ শতাংশ কমে গিয়েছে ব্যবসা।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতো রেস্তোরাঁ কর্তারাও তাই জোগান কমাতে বাধ্য হয়েছেন। সব থেকে দুরবস্থা পাড়ার ছোট চায়ের দোকান, চপ-কাটলেটের কেবিন বা মিষ্টির দোকানের। সিমলে পাড়ার নামজাদা সন্দেশ-স্রষ্টার উত্তরপুরুষ, তরুণ কর্তা পার্থ নন্দীর আক্ষেপ, ‘‘বন্‌ধের দিনের থেকেও বাজার খারাপ!’’

এই বাজারেও বাধ্য হয়েই ৫০০ টাকার নোট নিচ্ছে ডেকার্স লেনের জনপ্রিয় চাউমিন-রোল বিপণি। কর্তা সমীরণ ঘোষ বললেন, ‘‘এখনও ৫০০ টাকা ফেরাচ্ছি না। তাতেও ব্যবসা ঢিমে।’’ কালীঘাটের প্রসিদ্ধ ফিশফ্রাই ঠেক বাধ্য হয়ে ৮-১০ কেজি ভেটকির জোগান কমিয়ে দিয়েছে। দুরবস্থায় শোভাবাজারের সাবেক চিংড়ি কাটলেটের বিপণিও। শোভাবাজারের নামী কাটলেট কাফে-র কর্তা তাপস রায় বললেন, ‘‘ভাগ্যিস, পেটিএমে দাম মেটানো চালু করেছিলাম! ওটাই ব্যবসা চালু রেখেছে।’’ কার্ডে বিক্রি চালু রেখেও ব্যবসা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে, জানাচ্ছেন তিনি।

রিষড়ার নামী মিষ্টি বিপণিও কার্ড নেয়। কিন্তু সমস্যা মিটছে কই? কর্ণধার অমিতাভ মোদক বললেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোর ভরা বাজারেও ব্যবসা নেই। দুধ-ছানার জোগানদারদের পাওনা মেটাতে পারছি না। ওঁরা তো আর কার্ড নেবেন না! এত ১০০-র নোট পাই কোথায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন