লেট নয় টয়লেটে

শিশুকে স্বাবলম্বী হওয়ার পাঠ দিতে হবে ছোট থেকেই। কেন জরুরি টয়লেট ট্রেনিং?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

কোনও শিশু সাত-আট বছর বয়সেও টয়লেট পাওয়ার কথা বলতে পারে না। কেউ বা আবার তিন বছর বয়সেই স্পষ্ট করে দিতে পারে, তার টয়লেট বা পটি পেয়েছে কি না। অভিভাবক কী ভাবে শিশুকে গ্রুম করছেন, তার উপরে নির্ভর করে শিশুটি কতটা স্বাবলম্বী। মোটামুটি ভাবে দু’বছর বয়স থেকে শিশুর টয়লেট ট্রেনিং শুরু করা যেতে পারে। সম্ভব হলে তারও আগে চেষ্টা করতে পারেন।

Advertisement

মুখে হয়তো তখনও কথা ফোটেনি, কিন্তু শিশু যাতে আকারে ইঙ্গিতে তার প্রয়োজনের কথা বলতে পারে, সেটি দেখতে হবে। মোটামুটি দু’-আড়াই বছর বয়স থেকেই প্লে স্কুলে ভর্তি হতে হয়। সুতরাং শিশুটি যত তাড়াতাড়ি টয়লেট-পটির কথা বলতে পারবে, তত সমস্যা কম হবে। এর সঙ্গে কিন্তু হাইজিনও ভীষণ ভাবে জড়িয়ে।

Advertisement

প্রথম ধাপে কী করবেন?

আপনার সন্তান হাঁটতে শেখার পর থেকেই তাকে ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। দিনের বেলা ডায়পার পরিয়ে রাখবেন না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুকে টয়লেট করানোর চেষ্টা করুন। এতে ক্রমশ তার বাথরুমে গিয়ে বা পটি বক্সে বসে টয়লেট করার অভ্যেস তৈরি হবে। তখন যেখানে-সেখানে টয়লেট করবে না। তবে পুরো বিষয়টি বেশ সময়সাপেক্ষ। ছোটদের ধৈর্য কম বলে ওদের এক জায়গায় বসানো খুব মুশকিল। সে ক্ষেত্রে হাতে কোনও খেলনা ধরিয়ে দিতে পারেন।

শিশু যত বড় হবে, ধীরে ধীরে ডায়পারের অভ্যেস ছাড়ানোর চেষ্টা করুন। দু’বছরের পর থেকে বাইরে নিয়ে গেলেও ডায়পার পরাবেন না। তাকে সতর্ক করুন বাইরে সকলের সামনে টয়লেট করে ফেলা উচিত নয়। বকুনি দেবেন না, ভাল কথায় বোঝান। এতে কখনও সকলের সামনে টয়লেট করে ফেললে লজ্জা পাবে। ক্রমশ দেখবেন টয়লেটে পেলে সে নিজেই জানাচ্ছে।

রাতেও শিশুকে ডায়পার পরানো বন্ধ করতে হবে। দেড়-দু’বছর পর্যন্ত অনেক শিশুর রাতে দুধ খেতে খেতে ঘুমের অভ্যেস থাকে। সেই অভ্যেস প্রথমে বন্ধ করুন। এতে সে রাতে কম প্রস্রাব করবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে একবার এবং মাঝে ঘুম থেকে তুলে এক-দু’বার টয়লেট করান তাকে।

স্কুলে যাওয়ার আগে

প্লে স্কুলে যাওয়ার সময়ে ডায়পার পরানোর অভ্যেস ছাড়াতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখুন, স্কুলে টয়লেট-পটি করার পরে শিশুকে পরিষ্কার করার সময়ে যেন হাইজিন মানা হয়। দরকার হলে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। অনেক সময়ে স্কুলে নতুন পরিবেশে শিশুর মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। প্রস্রাব পেলেও হয়তো তা বলতে চায় না। এ ক্ষেত্রে তাকে বোঝাতে হবে, টয়লেট চেপে রাখলে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

সময়ের কাজ সময়ে

শুধু টয়লেট নয়, পটির জন্যও শিশুকে কিছু জিনিস শেখাতে হবে। শিশু যখন বাড়িতে থাকে, তখন সারা দিনের যে কোনও সময়ে পটি করলে সমস্যা হয় না। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে তা চলবে না। শিশু ঘুম থেকে ওঠার পরেই তাকে পটিতে বসানোর ব্যবস্থা করুন। ধীরে ধীরে অভ্যেস তৈরি করতে হবে। প্রয়োজন হলে ঘুম থেকে ওঠার পরে একটু জল বা গরম দুধ খেতে দিন।

মাথায় রাখুন স্বাস্থ্যের কথাও

ছোটদের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের সমস্যা খুব কমন। খেলার খেয়ালে শিশুরা টয়লেট চেপে রাখে। অধিকাংশ শিশুরই মল-মূত্র ত্যাগে অনীহা দেখা যায়। এটা অভিভাবককে খানিকটা জোর করেই করাতে হবে। প্রস্রাবের জায়গা পরিষ্কার রাখার অভ্যেসও ছোট থেকেই করান।

অনেক সময়ে শিশুদের রাস্তাঘাটে টয়লেট করানো হয়। এটি পরিবেশ পরিপন্থী তো বটেই, শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যও খারাপ। সুলভ শৌচাগার এখন যত্রতত্র। সেখানেও হাইজিন মেনে স্যানিটাইজ়ার, ওয়েট টিসু ব্যবহার করুন।

যারা একদম ছোট, তাদের ডায়পার পরালে তা সময় মতো বদলে দিন। এক ডায়পারে বেশিক্ষণ রাখবেন না। এতে অ্যালার্জি তো বটেই, ঠান্ডাও লেগে যেতে পারে।

সমস্যা হয়তো গভীরে

সাত-আট কিংবা তারও বেশি বয়সের ছেলেমেয়েদের আচমকা প্রস্রাব করে ফেলার অভ্যেস থেকে যায়। সারা দিনে হয়তো করে না, কিন্তু রাতে ঘুমের ঘোরে সে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। এখানে অভিভাবককে কড়া হতে হবে। খেয়াল রাখবেন, টয়লেট করে যেন ঘুমোতে যায়। রাতে জোর করে তুলে টয়লেটে পাঠান। প্রয়োজন হলে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে টয়লেট করান। এতেও যদি ঠিক না হয়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কাউন্সেলিং করাতে পারেন।

শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে তাকে স্বাবলম্বী করাও প্রয়োজন। নিজের হাতে খাওয়া, নিজের কাজ করার পাশাপাশি টয়লেট-পটির ক্ষেত্রেও আপনার সন্তানকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন