সন্তানের রোজকার জীবনযাপনে বদল আনলে অনেকটাই সুরাহা মিলবে এ রোগে
Health

বাড়ছে শিশুদের হাইপারটেনশনের সমস্যা

কিডনির অসুখের মতো কিছু রোগের কারণে শিশুদের মধ্যে হাইপারটেনশনের সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ০৯:০৯
Share:

চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে, পেডিয়াট্রিক হাইপারটেনশন। ছবি: অমিত দাস।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে প্রেশার, সুগার, হার্টের অসুখের মতো হাজারো রোগব্যাধি আঁকড়ে ধরতে চাইবে, তা আর নতুন কথা কী? কিন্তু হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা শুধুমাত্র বড়দেরই নয়, শিশুদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে, পেডিয়াট্রিক হাইপারটেনশন। সাধারণত, মহামারি বোঝাতে আমরা ‘কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’ বা ছোঁয়াচে রোগের কথাই বলি। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে দেখা যাচ্ছে হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, ক্যানসারের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ় বা ছোঁয়াচে নয়, এমন রোগও মহামারির দিকেই এগোচ্ছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই সব রোগে। আশ্চর্য নয় যে, শিশুদের মধ্যেও হাইপারটেনশনের প্রবণতা আগের চেয়ে ঢের বেড়েছে। ফলে, এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

Advertisement

রোগের কারণ

এই ধরনের লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়-এর ক্ষেত্রে আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেকটাই এড়িয়ে চলা যায়। শিশু চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, “আগের চেয়ে কেন পেডিয়াট্রিক হাইপারটেনশন-এর সংখ্যা বাড়ছে, তা জানতে হলে শিশুদের এখনকার লাইফস্টাইলের দিকে নজর দিতে হবে। শিশুদের চলাফেরা, দৌড়নোর সুযোগ এখন অনেক কমে গিয়েছে। তাদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা বেড়েছে। কারণ, শিশুরা আনাজপাতি খেতে চায় না। পরিবর্তে তারা যে ধরনের জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ত হচ্ছে, তার ভিতরে থাকা প্রচুর ফ্যাট, ক্যালরিও তাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এগুলি সবই হাইপারটেনশনের জমি প্রস্তুত করে। তা ছাড়া যাদের মধ্যে সামান্য হাইপারটেনশনের সমস্যা ছিল, জাঙ্ক ফুডে থাকা নুনের আধিক্য সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

Advertisement

আবার কারও পরিবারে যদি হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হওয়ার ধারা থাকে, সেই শিশুরও ব্লাডপ্রেশার বেশি থাকার প্রবণতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকবে।

অন্য দিকে, কিডনির অসুখের মতো কিছু রোগের কারণে শিশুদের মধ্যে হাইপারটেনশনের সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। টাকায়াসু আর্টেরাইটিস, পলিসিস্টিক কিডনি ডিজ়িজ় প্রভৃতি অসুখ থাকলে ব্লাডপ্রেশারেও তার প্রভাব পড়ে। সুতরাং, হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকলে প্রথমেই চিকিৎসকরা দেখে নেন শিশুটি কিডনির কোনও অসুখে আক্রান্ত কি না। কোনও শিশু দীর্ঘ দিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ খেলেও ব্লাডপ্রেশার বাড়তে পারে।

আটকানোর উপায়

ডা. রায়চৌধুরীর মতে, এই অসুখ আটকানোর প্রথম ধাপ হল জীবনযাপনে বদল আনা। রোজ নিয়ম করে চল্লিশ থেকে ষাট মিনিট শিশুর ফিজ়িক্যাল অ্যাক্টিভিটি প্রয়োজন। হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলো— যা খুশি। একই সঙ্গে ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্ত জরুরি। ফ্যাটযুক্ত খাবার যথাসম্ভব বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যে শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাদের ঘি, তেল, মাখন, চিজ়, বাদামজাতীয় ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খাওয়াতে হবে। সফট ড্রিঙ্কস, আইসক্রিম, চকলেট-সহ কোনও রকম জাঙ্ক ফুড তাদের হাতে দেওয়া যাবে না। অন্য দিকে, তাদের খাদ্যতালিকায় ফাইবারযুক্ত আনাজ, ফল যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, তা দেখতে হবে। বিনস, ঢ্যাঁড়শ, পটল, বরবটি, শাক, পেয়ারা জাতীয় আনাজ ও ফল এদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে উপকারী। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ছোটদের ব্লাডপ্রেশারও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তা ছাড়া, যাদের হাইপারটেনশনের প্রবণতা আছে, তাদের খাবারে নুনের পরিমাণ বেশি রাখা চলবে না। ডায়াবিটিসে আক্রান্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে হাইপারটেনশন জটিল হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সুগারও।

চিকিৎসা কী

এই রোগের ক্ষেত্রে প্রাইমারি কারণগুলি দায়ী হলে, যেমন লাইফস্টাইল, ওবেসিটি, সে ক্ষেত্রে ওজন কমালে, নিয়মিত ফিজ়িক্যাল অ্যাক্টিভিটির মধ্যে থাকলে ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু কিডনির অসুখের মতো কোনও কারণে হাইপারটেনশন শুরু হলে সেই রোগের চিকিৎসা আগে প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ওজন কমিয়ে বিশেষ লাভ হবে না। তাই কারণটি আগে খুঁজে সেইমতো চিকিৎসকরা দেখে নেন বাচ্চাটির ওষুধের প্রয়োজন কি না, অথবা কত দিন চিকিৎসা চলতে পারে।

মনে রাখতে হবে, ছোটদের হাইপারটেনশনের অন্যতম কারণ কিডনির অসুখ। তাই এ রোগ ধরা পড়লে নিজে থেকে কারণ খোঁজার চেষ্টা না করে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন