ডায়না পেন্টীর গৃহসজ্জার ঝলক। ছবি: সংগৃহীত।
মুম্বই শহরের বুকে ১০০ বছরের পুরনো অট্টালিকা। চার প্রজন্মের বাস সে বাড়িতে। যেখানে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি আসবাবও। প্রাসাদোপম সে বাড়ির আনাচকানাচ তৈরি হয়েছে পারসি সংস্কৃতির ছোঁয়ায়। সে বাড়ির দোতলা জুড়ে থাকেন বলিউডের অভিনেত্রী ডায়না পেন্টী। বাবা পারসি, মা কোঙ্কনী। ডায়নার প্রপিতামহ-প্রপিতামহীর বানানো এই বাড়ি। ঐতিহ্যবাহী সে বাসভবনে পা রাখলেন প্রযোজক-পরিচালক ফরাহ খান।
উঁচু, লম্বা সিলিং, উন্মুক্ত কড়ি-বরগা, ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত টানা জানলা, কাঠের দরজা, কাঠের আসবাবপত্র, গাছে ভরা মস্ত ছাদ, কাঠের বিশাল সিঁড়ি, পুরো দিনের টাইলস্ বসানো মেঝে— ঘরের প্রতিটি কোনায় যেন অতীতের পদচিহ্ন শোনা যায়। ১৯০৬ সালে ডায়নার ঠাকুরদার মাসি বা পিসি এবং প্রপিতামহীর আঁকা চিত্রকলা সে বাড়িতে এখনও জ্বলজ্বল করছে। বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছেই তাই প্রযোজক ডায়নার বাড়িকে তুলনা করলেন ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেসের সঙ্গে। মুম্বই নগরীতে এমন রাজকীয় অট্টালিকা রয়েছে, সে কথা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ফরাহ।
বাইরে থেকে ডায়নার বাড়ির ছবি। ছবি: ফরাহ খানের ইউটিউব ভিডিয়ো।
বাড়ির উপরের তলার গোটাটাই নায়িকার দখলে। নীচের তলায় থাকেন তাঁর মা-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য। নীচের তলায় মস্ত বসার ঘরে ১০০ বছরের প্রাচীন সমস্ত কাঠের আসবাবপত্র ঘুরিয়ে দেখালেন ডায়নার মা। দোতলায় ডায়ানার লিভিং রুমে ঢুকলেই চোখে পড়ে বিস্তৃত এক ঘর। কোনায় কোনায় ছোট ছোট জিনিস ও গাছ দিয়ে সজ্জা, এবং প্যাস্টেল রঙের বসার বন্দোবস্ত। পুরনো কাঠের আসবাব, ভিন্টেজ আলোকসজ্জা, উঁচু সিলিং। বিস্মিত ফরাহ বলেই ফেললেন, ‘‘আকার, আয়তনের নিরিখে বসার ঘরটি তো শাহরুখ খানের মন্নত-কেও টেক্কা দিয়েছে। শাহরুখের এখানে আসা উচিত।’’
১০০ বছরের প্রাচীন আসবাবপত্র। ছবি: ফরাহ খানের ইউটিউব ভিডিয়ো।
ঘরের ঠিক মাঝে রাখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি টেবিল। তবে সেটিকে টেবিল না-ও বলা চলে, কারণ তার মাঝখানটি ফাঁকা। সেখানে রাখা রয়েছে একটি গাছ। ডায়না জানালেন, দশকের পর দশক ধরে এই আসবাব এই বাড়িতে রাখা। এখনও টেকসই, ঠিক আগের মতোই মজবুত।
ডায়নার বসার ঘর। ছবি: ফরাহ খানের ইউটিউব ভিডিয়ো।
এ সবেরই মধ্যে কখনও সখনও অন্দরসজ্জা বদলে ফেলেন নায়িকা। ঘরের সাজ অদলবদল করলে একঘেয়েমিও কাটে।
ডায়নার বাড়ির দোতলা এবং নীচের রান্নাঘর। ছবি: ফরাহ খানের ইউটিউব ভিডিয়ো।
নীচের তলায় ডায়না তাঁর মায়ের রান্নাঘরেই সকলকে নিয়ে গেলেন। রান্নাঘরেও রয়েছে সাবেকিয়ানার আমেজ। কাজের সুবিধার জন্য কেবল মডিউলার কিচেনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তবে তা সাবেকিয়ানাকে ধ্বংস করে নয়। সাবেক এবং সাম্প্রতিকের সুন্দর মেলবন্ধন দেখা যায় ডায়নার বাড়িতে।
ডায়নার বাড়ির নীচের তলার বসার বন্দোবস্ত। ছবি: ফরাহ খানের ইউটিউব ভিডিয়ো।
তবে এ বাড়ির বাইরের অংশ যে সমান ভাবে রক্ষা করা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সদর দরজায় পৌঁছনোর আগেই মস্ত বাগানের ইঙ্গিত মেলে। শহরের ভিড় থেকে খানিক দূরে এই বাড়ির চারপাশে রয়েছে একখণ্ড সবুজ জমি। রয়েছে একটি ছোট খামার, ফুলের গাছ আর পোষ্যদের জন্য আলাদা জায়গা। মাঝেমধ্যেই মুরগির ডাক শোনা যায় সেই ঘরের ভিতর থেকে। একই ভাবে ছাদ এবং ছাদবাগানও বিশেষ উল্লেখের যোগ্য। প্রাসাদের মতো বাড়ির সুবিশাল ছাদ, তার গায়ে ঝুঁকে পড়েছে বাগানের দীর্ঘ গাছগুলি। ছাদেও বসার সুন্দর আয়োজন রয়েছে।
সমসময়কে অস্বীকার না করেও ঐতিহ্যকে আগলে রাখার আনন্দ পেতে চান ডায়না। তাই এমন বাড়ি ছেড়ে অ্যাপার্টমেন্টের খোপে নিজেকে বন্দি করেননি এখনও।