অমিতাভ বচ্চনের লিভার ২৫ শতাংশ কাজ করছে। উনি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত। এটা তো আমরা সকলেই জেনে গিয়েছি। কিন্তু, লিভার ২৫ শতাংশ কাজ করছে মানে কী? ঠিক কত শতাংশ কাজ করলে লিভার সুস্থ? কী ভাবে জানা যাবে আমার লিভার সুস্থ কিনা? কখন চিন্তার বিষয়? এ সব বহু প্রশ্নই এখন জাগছে আমাদের মনে। লিভারের স্বাস্থ্য নিয়ে এমনই প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানাচ্ছেন প্রখ্যাত চিকিত্সক ও লিভার ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অভিজিত্ চৌধুরী।
লিভারের অসুখ নিয়ে আমাদের মনে ভয় যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনাও। তবে অভাব রয়েছে সচেতনতার।
কী ভাবে বুঝবেন আপনার লিভার কেমন কতটা সুস্থ?
লিভার ঠিক কতটা কাজ করছে, কত শতাংশ বিগড়ে গিয়েছে তা নির্দিষ্ট পরিমাপ করার কোনও উপায় নেই। কিডনির ক্ষেত্রে যেমন নির্দিষ্ট ভাবে বলে দেওয়া যায় যে ২৫ শতাংশ কাজ করছে, বা ৪০ শতাংশ কাজ করছে, লিভারের ক্ষেত্রে কিন্তু এ রকম কোয়ান্টিফায়েবেল ডিসফাংশন নির্ধারণ করা যায় না। অর্থাত্ অমিতাভ বচ্চন যে ভাবে বলছেন ওঁর লিভার ২৫ শতাংশ কাজ করে না, ঠিক অতটা নির্দিষ্ট ভাবে লিভারের ফাংশনালিটি নির্ধারণ করা যায় না। তবে কিছু কিছু জিনিস পরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের স্বাস্থ্য বোঝা যায়।
পড়ুন: আর মাত্র ২৫% সুস্থ বিগ-বি-র লিভার!
মাঝে মাঝেই এই পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন-
১। এসজিপিটি(SGPT)- সিরাম গ্লুটেমিক পাইরুভিক ট্রান্সমিনেজ। এই উৎসেচক অ্যালানিন অ্যামিনোট্রান্সফারেজ(এএলটি) নামেও পরিচিত। লিভারের সুস্থতা পরীক্ষা করতে এসজিপিটি পরিমাপ করা হয়। এসজিপিটির মাত্রা বেশি মানে আপনার লিভারে গোলযোগ শুরু হয়েছে। এসজিপিটির মাত্রা সাত থেকে ৫৬ ইউনিট/লিটার হল স্বাবাবিক। চিকিত্সকরা ৪০-এর নীচে রাখার পরামর্শ দেন। তবে আবার এসজিপিটি নরমাল মানেই আপনার লিভার সম্পূর্ণ সুস্থ এমনটা বলা যায় না। আবার তেমনই যদি দু’জনের মধ্যে এক জনের এসজিপিটি ১০০, দ্বিতীয় জনের ২০০ মানে কিন্তু দ্বিতীয় জনের লিভার দ্বিগুণ খারাপ তা বলা যায় না। এসজিপিটি বেড়ে যাওয়া মানে লিভারের কোষগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে না।
২। অ্যালবুমিন- অ্যালবুমিন প্রোটিনের পরিমাণ কমলে লিভার ঠিকমতো কাজ করে না। অ্যালবুমিন ছয়-এর নীচে নেমে যাওয়া মানে আপনার লিভারের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তিন-এর নীচে নেমে গেলে অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
৩। প্রোথ্রোম্বিন টাইম- রক্ত জমাট বাঁধার সময়কে বলা হয় প্রোথ্রোম্বিন টাইম। এই প্রোথ্রোম্বিন টাইম যদি তিন সেকেন্ডের বেশি হয় তার মানে আপনার লিভার নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে।
৪। চাইল্ড পাগ ক্রাইটেরিয়া- লিভারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় চাইল্ড পাগ ক্রাইটেরিয়ার সাহায্যে। বিলিরুবিন, অ্যালবুমিন, প্রোথ্রোম্বিন টাইম, অ্যাসাইটিস ও হেপাটিক এনসেফ্যালোপ্যাথির মাত্রা পরীক্ষা করা হয় বোঝা যায় লিভারের স্বাস্থ্য।
৫। মেল্ড স্কোর (MELD Score)- মেল্ড স্কোরের সাহায্যেও লিভারের সুস্থতা পরীক্ষা করা যায়। কেউ লিভারের ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা তা বুঝতে এই পরীক্ষা করা হয়। মেল্ড স্কোর যত বেশি হয় সেই অনুযায়ী মর্টালিটি রেট বেড়ে যায়।