ছুটির দিনে নিজের যত্ন নেওয়ার অর্থ কী ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
তরী ভেবেছিলেন ছুটির দিনটা কাটাবেন, নিজের মতো। কবে থেকে কেনা বইটার দুটো পাতাও পড়া হয়। তাই পরিকল্পনা ছিল, ছুটির দিনে বেরোনো নয়, কফির কাপ নিয়ে আরাম কেদারায় গা এলিয়ে দিয়ে দিনযাপন।
কিন্তু ভাবনা থাকলেই হয় কই? দিদি আর ছোট্ট বোনঝির আবদারে দুপুরবেলাতেই বেরোতে হল। তরীর মতো কি আপনারও ছুটির দিন এর-ওর ইচ্ছাতেই কাটে? বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রিয় মানুষটির দরকারে এই কাজ, সেই কাজ করতেই হয়! ইচ্ছামতো গা এলিয়ে বিছানায় দিনভর গড়াবেন, সেটা আর হয়েই ওঠে না?
নিজের যত্ন মানে কী?
নিজের যত্ন, নিজেকে ভাল রাখা, নিজেকে সময় দেওয়া— এমন অসংখ্য কথাই শোনা যায়। কিন্তু নিজেকে ভাল রাখা আসলে কী? রূপচর্চা, সুগন্ধী মোম জ্বালিয়ে ঈষদুষ্ণ জলে গা ভেজানো? নিজের যত্ন মানে এর চেয়েও বেশি কিছু হতে পারে। হতে পারে কিচ্ছু না করা। হতে পারে একেবারে একলা ঘরে, নিজের সঙ্গে থাকা। সংজ্ঞাটা প্রত্যেকের জন্য আলাদা। তবে যা-ই হোক, মনে রাখা দরকার, ছুটির দিনটিই কিন্তু বাকি সপ্তাহের জন্য শারীরিক, মানসিক রসদ জোগানোর পালা।
‘না’-এ লুকিয়ে অপরাধ?
বাবা-মায়েরাও অপেক্ষা করে থাকেন ছুটির দিনে সন্তানের সঙ্গ পাওয়ার জন্য। প্রিয় মানুষটিও এমন দিনে বিশেষ পরিকল্পনা করতে চান। সংসারের জন্য বা আত্মীয়-পরিজনের কোনও জরুরি কাজ থাকতে পারে। কেউ যখন ভালবেসে বা প্রয়োজনে কিছু চাইছেন, তাঁকে কি না বলা যায়? শরীর-মন অন্য কিছু চাইলেও, না বলাটা কি আদৌ ঠিক? না বললে কি অপরাধ বোধ হয়? তা হলে নিজের ইচ্ছা, চাওয়াকে এড়িয়ে যাওয়াটাও তো না বলার সমানই।
‘না’ কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া নয়: ভালবাসার মানুষের কাছে, বন্ধুদের কাছে কখনও না বলতে পারাটা অপরাধ নয়। বিশেষত, যখন শরীর ভীষণ ক্লান্ত। কিছুই ভাল লাগছে না, তখন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরোনো বা বান্ধবীর সঙ্গে কেনাকাটা করতে যাওয়াতে ‘হ্যাঁ’ বলা কি খুব জরুরি? শরীরে ক্লান্তি না থাকলে, মন চনমনে থাকলে হ্যাঁ নিজে থেকেই আসবে। কিন্তু শরীর যখন বিশ্রাম চায়, নিজের মতো করে মন থাকতে চায়, সেটুকু করা যেতেই পারে।
নিজেকে অগ্রাধিকার : ছুটির দিনটিতে নিজের চাওয়া-পাওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়াই যায়। নৈশ পার্টি করাই যেত, কিন্তু তেমন ইচ্ছা করছে না। শুভাকাঙ্ক্ষীরা এই ‘না’-এর অর্থ নিশ্চয়ই বুঝবেন। কিন্তু দিনের বেশ কিছুটা সময় ঘুমোনো, বই পড়া, খেলা দেখা, নিজের মতো কাটানো মানে শরীর-মন তরতাজা হয়ে ওঠা। ছুটির দিন মানে কিন্তু মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা নয়, হতে পারে মোবাইল সরিয়ে অন্য ভাবে সময়কে উদ্যাপন করা।
নিজের যত্ন মানে হল, যা ইচ্ছা করছে না , ভাল লাগছে না তেমন কিছুকে এড়িয়ে যাওয়াও। আর যা ভাল লাগছে, তাকে গ্রহণ করা। নিজেকে বোঝা, নিজেকে ভাল রাখা। নিজের সঙ্গে ভাল সময় কাটানো।