Tomato Ketchup

কী ভাবে ‘টম্যাটো কেচাপ’ প্রথম তৈরি হল?

কী ভাবে খাওয়া-দাওয়ার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠল টম্যাটো সস্ এবং কেচাপ। তা জানতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ১৫০০ বছর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:০০
Share:

২০০ বছর আগেও রান্নার বইতে টম্যাটো সস্‌কে বলা হয়েছে ‘নোংরা, পচা আর দুর্গন্ধযুক্ত’ একটি তরল

অধিকাংশ বাড়ির খাবারের টেবিলেই সাজানো থাকে টম্যাটো সস এবং কেচাপের কাঁচের বোতল। বিষয়টা এতটাই স্বাভাবিক যে আমাদের নজরেই আসে না। এক সময় কিন্তু টম্যাটোকে ভাবা হতো বিষ ফল। খুব বেশি দিন আগে নয়, ২০০ বছর আগেও রান্নার বইতে টম্যাটো সস্‌কে বলা হয়েছে ‘নোংরা, পচা আর দুর্গন্ধযুক্ত’ একটি তরল। তাহলে কী ভাবে খাওয়া-দাওয়ার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠল টম্যাটো সস্ এবং কেচাপ। তা জানতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ১৫০০ বছর।

Advertisement

আমেরিকাতে প্রথম টম্যাটো সস্ জনপ্রিয় হলেও বিষয়টির সূত্রপাত এশিয়ায়। চিনা নাবিকরা ‘কি-চুপ’ নামের একটি বিশেষ সস বানাতেন। সামুদ্রিক মাছের নাড়িভুড়ি ভাল করে পরিষ্কার করে নুন দিয়ে মাখিয়ে জারে ভরে রেখে দিতেন চিনারা। গরমে ২০ দিন, বর্ষায় ৫০ দিন আর শীতকালে ১০০ দিন জারে ভরে রাখলেই তৈরি হয়ে যেত সস। বিষয়টি প্রথম লক্ষ্য করেন ইংরেজরাই। এই পদ্ধতির আদলে দেশে ফিরে অনেক রকমের সস্ বানায় ইংরেজরা। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের মাছ আর মাশরুমের ওপরেই চলছিল সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কোনও কোনও ব্রিটিশ রাঁধুনি সসে্র উপকরণ হিসাবে টম্যাটো ব্যবহার করলেও তা জনপ্রিয় হয়নিও একটুও। কারণ, বিষাক্ত বেরি-র মতো দেখতে বলে অনেকেই টম্যোটোকেও বিষ ফল বলেই মনে করতেন।

শেষ পর্যন্ত আসরে নামেন আমেরিকানরাই। ১৮২০ সালে কর্নেল রবার্ট জনসন নিউজার্সিতে একটি আদালতকক্ষের সামনে প্রকাশ্যে এক ঝুড়ি টম্যাটো খেয়ে প্রমাণ করেন টম্যাটো বিষফল নয়। এর দশ বছরের মধ্যেই আমেরিকাতে জনপ্রিয় হয় টম্যাটো। আসে অন্য বিপত্তি। অনেকেই টম্যাটোর ট্যাবলেট বানিয়ে ওষুধ হিসেবে বিক্রি করা শুরু করেন। তাঁদের দাবি ছিল এই ট্যাবলেট খেলে সেরে যাবে ডায়েরিয়া, বদহজম সহ আরও নানান অসুখ। কেউ কেউ আবার ‘টনিক’ হিসেবেও বেচতে শুরু করেন টম্যাটোর সস্। এই ভাবে নানা খানা-খন্দ পেরিয়ে বিংশ শতাব্দীতে জনপ্রিয় হয় টম্যাটো সস্।

Advertisement

আরও পড়ুন: কিডনিকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে চান? তা হলে আজ থেকেই মানুন এ সব

যদিও সস্ পাওয়া যেতো শুধুই টম্যাটো ফলনের মরসুমে। বছরের বাকি সময় তা সরবরাহ করার জন্য অনেকেই সস্ বানাতেন, কিন্তু সারা বছর তা টিকিয়ে রাখার জন্য নানান অস্বাস্থ্যকর দ্রব্য মেশানো হতো টম্যাটো সসে্। ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভস, ফরম্যালিন, বোরিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড মেশানোর জন্য টম্যাটো সস্ হয়ে উঠতো বিষাক্ত। কেউ কেউ গাঢ় লাল করার জন্য কয়লার টার-ও মেশাতেন। তাই সারা বছর খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও টম্যাটো সস্ খাওয়ার যোগ্য ছিল শুধু শীতের মরসুমেই।

আরও পড়ুন: এই সব কাজে এর আগে কোল্ড ড্রিঙ্ক ব্যবহার করেছেন কখনও?

১৮৭০ সালে আসরে নামেন হেনরি হেইঞ্জ। কারখানার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য তাঁর সুনাম ছিল আমেরিকায়। তাঁর নজরে আসে সারা বছর টম্যাটো সস ব্যবহারে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি। নিজের পরিচ্ছন্নতার ধারাবাহিকতা সামনে আনতেই টম্যাটো সসের বোতলকে স্বচ্ছ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯০৪ সালে প্রিজারভেটিভস ছাড়াই টম্যাটো সস তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তাঁর গবেষকেরা। বাকিটা ইতিহাস। দু’বছরের মধ্যেই ৫০ লক্ষ বোতল বিক্রি করেন হেইঞ্জ। আরও নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আসে কেচাপ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কেচাপে ভিনিগার বা অ্যাসেটিক অ্যাসিড থাকলেও টম্যাটো সসে্ তা থাকে না। আবার টম্যাটো সস্‌কে গরম করে রান্নায় ব্যবহার করা গেলেও কেচাপ ব্যবহার করা হয় ঠান্ডা অবস্থাতেই। সস্ আর কেচাপ এই দু’টি প্রোডাক্টই তুমুল জনপ্রিয় হয় আমেরিকায়। কয়েক বছরের মধ্যেই তা আমেরিকা ছাড়িয়ে পাড়ি দেয় অন্যান্য মহাদেশে। সারা দুনিয়ায় অসংখ্য কোম্পানি আজ বানায় টম্যাটো কেচাপ আর টম্যাটো সস্। আর তার ব্যবহারও এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন