চলছে বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। এ বার বীরভূমেও গড়ে উঠবে হাসপাতাল। রবিবার বোলপুরে জেলার বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে ঘণ্টা পাঁচেক বৈঠকের পরে এমনটাই জানালেন উদ্যোক্তারা। তার জন্য ইতিমধ্যেই শান্তিনিকেতন লাগোয়া কোপাই এলাকার একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। পেশায় আইনজীবী তথা সমাজসেবী সিউড়ির বাসিন্দা স্বপনকুমার রুজের দান করা ওই জমিতেই গড়ে উঠবে হাসপাতাল। পরে অন্যতম উদ্যোক্তা বিশ্বভারতীর শিক্ষক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “অনেক দিন ধরেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কথা ভাবা হচ্ছিল। তবে, সে রকম সুযোগ আসেনি। স্বপনবাবু উদ্যোগী হয়েছেন। শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জমি দেওয়ার কথা অঙ্গীকার করেছেন। ওই হাসপাতাল গড়ে উঠলে শুধু বীরভূমই নয়, আশপাশের এলাকার অসংখ্য মানুষের উপকার হবে।”
ঘটনা হল, আজ থেকে তিন দশক আগে বন্ধ হয়ে যায় বেলুড়ের ইন্দো-জাপান স্টিল কারখানা। তার কিছু আগে জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের বেশ ক’জনের সঙ্গে কারখানার কর্মীদের আলাপ হয়। ক্রমশ বাড়তে থাকে যোগাযোগ। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছু দিন আগে ওই তরুণ ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা বালিতে এক কর্মীর বাড়িতে চালু করলেন ছোট্ট এক ক্লিনিক। কিছু দিন পরে কারখানার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক টুকরো জমিও আদায় করে ফেললেন তাঁরা। সেখানেই ওই সমাজমনস্ক ডাক্তারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কর্মীরা গড়ে তুলেছিলেন প্রথম শ্রমজীবী হাসপাতাল। এই হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় না। কিন্তু, তুলনায় অনেক কম খরচে রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে শ্রমজীবী হাসপাতাল। এই মুহূর্তে বেলুড় ছাড়া শ্রীরামপুর, সুন্দরবন ও কালিয়াগঞ্জে শ্রমজীবী হাসপাতাল আছে।
বস্তুত, বীরভূমেও এ রকম ধাঁচে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জেলার কিছু বিশিষ্ট জন বছর পাঁচেক ধরেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন। শান্তিনিকেতনের প্রয়াত আশ্রমিক শ্যামলী খাস্তগির, বিশ্বভারতী অধ্যাপকসভার অন্যতম কর্তা কিশোর ভট্টাচার্য, শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন যাঁদের মুখ। বার কয়েক এ নিয়ে আলোচনা হলেও জমি না মেলায় প্রকল্পটি এত দিন বাস্তব রূপ পায়নি। আলোচনার চলার সময়পর্বেই শ্যামলীদেবী প্রয়াত হন। এত দিন পরে সেই হাসপাতাল গড়া ওঠার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় খুশি জেলার মানুষ।
বোলপুরের মারওয়ারি ধর্মশালায় এ দিন সকাল ১০টা থেকে শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য আলোচনায় বসেন উদ্যোক্তারা। তাতে যোগ দেন বিশ্বভারতীর বাংলার অধ্যাপক অতনু শাসমল, রামপুরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মল্লনাথ মুখোপাধ্যায়, সমাজসেবী শৈলেন মিশ্র, বোলপুর সাহিত্য সংসদের সম্পাদক স্বপন মুখোপাধ্যায়, শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। পাশাপাশি জেলা এবং এলাকার আরও অনেক মানুষের উপস্থিতিতেই ওই বৈঠক চলে প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্যতম উদ্যোক্তা কৃশাণু মিত্র, ফণিগোপাল ভট্টাচার্য, কৃষিবিদ অনুপম পালরা। সেখানেই হাসপাতালের জন্য জমিদান করার কথা জানান স্বপনবাবু। কোপাই স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে থাকা শ্রীনিধিপুর পঞ্চায়েতের চাঁদপাড়া মৌজায় তাঁর দেওয়া ওই জমিতেই হাসপাতাল গড়ে উঠবে। সন্ধ্যায় স্বপনবাবু বলেন, “সমাজের একটা শ্রেণির মঙ্গল হবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষেবা গড়ে উঠবে। শত শত শ্রমজীবী মানুষ জীবন দান পাবেন। এর থেকে মহৎ কাজ আছে বলে আমার জানা নেই। সেই কাজে যদি আমার জমি ব্যবহার হয়, তার থেকে আনন্দের আর কী-ই বা হতে পারে!” জমি চিহ্নিত হওয়ার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বসে এলাকায় একটি বৈঠক করে বাকি কাজগুলি এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন উদ্যোক্তারা।