বিদেশি ভাষায় সখ্য, চাকরির বাজারে দক্ষ

‘কলোনিয়াল হ্যাংওভার’ থেকে বেরোতে পারিনি বলেই হয়তো, ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের মোহটা একটু বেশি। আদপে কিন্তু এই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি লোক যে ভাষায় কথা বলেন, সেটা চিনা ভাষা। ২০.৭%। তারপরে আসে ইংরেজি, ৬.২%।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৮
Share:

‘কলোনিয়াল হ্যাংওভার’ থেকে বেরোতে পারিনি বলেই হয়তো, ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের মোহটা একটু বেশি। আদপে কিন্তু এই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি লোক যে ভাষায় কথা বলেন, সেটা চিনা ভাষা। ২০.৭%। তারপরে আসে ইংরেজি, ৬.২%। অর্থাৎ ৯৩.৮% শতাংশ লোক ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন। এই ছোট্ট পরিসংখ্যানটাই বুঝিয়ে দেয়, ইংরেজি ছাড়া অন্য বিদেশি ভাষা শেখার গুরুত্বটা। গ্লোবাল ভিলেজের দুনিয়ায় ভারতীয় সংস্থাগুলি যেমন বিদেশে তাদের শাখা খুলছে, তেমনই বহু বিদেশি সংস্থা এদেশের বাজারকে ধরতে চাইছে। এই প্রেক্ষিতে ইংরেজি ছাড়াও এক বা একাধিক বিদেশি ভাষা শেখা থাকলে চাকরির বাজারে কদর বাড়ে। কর্পোরেট দুনিয়ায় নানা ধরনের কাজের দরজা খোলে।

Advertisement

কেন পড়ব?

সবার আগে কর্মসংস্থানের কথাটা বিশদে বলে নেওয়া ভাল। ইংরেজি ছাড়াও এক বা একাধিক বিদেশি ভাষা জানা থাকলে বহুজাতিক সংস্থা বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুবাদক, ইন্টারপ্রেটারের কাজ পাওয়া যায়। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বা বিপিও সেক্টরে প্রচুর কাজ। ফ্রিল্যান্সে লেখালেখি, অনুবাদের কাজ করা যায়। ডিপ্লোম্যাটিক সার্ভিস, বিদেশমন্ত্রক, গুপ্তচর সংস্থায় কাজ মেলে। ইউনাইটেড নেশনস বা এই ধরনের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান, বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় প্রচুর কাজের সুযোগ আছে। বিদেশি ভাষা শেখানো অর্থাৎ শিক্ষকতা করা যায়। ট্যুরিস্ট গাইড হিসাবে কাজ করা যায়। এছাড়াও জনসংযোগ (পিআর) বা হোটেল শিল্পের লোকজনের বা বিমানসেবিকা, স্টুয়ার্টরা বিদেশি ভাষা জানলে কর্মক্ষেত্রের দিগন্ত বাড়ে।

Advertisement

পাশাপাশি নতুন কোনও ভাষা শেখা মানে শুধু তার ব্যাকরণ বা গঠন জানা নয়, বিশ্বের যে প্রান্তে ওই ভাষার চল, সেখানের সংস্কৃতি, ইতিহাসটাও জানা হয়ে যায়। দেখা গিয়েছে, ছোটবেলায় বিদেশি ভাষা শিখলে মাতৃভাষাতেও দক্ষতা বাড়ে। এছাড়া বিদেশে পড়তে বা বেড়াতে গেলে সুবিধা তো হয়ই।

কোনটা ভাল?

বিদেশি কোন ভাষাটা শিখবেন, তা নিয়ে একটা টালবাহানা চলে। বাছাইয়ের তিনটে দিক আছে—ব্যাক্তিগত আগ্রহ, সহজবোধ্যতা আর কর্মসংস্থানে চাহিদা।

ব্যাক্তিগত ভাবে আপনার কোনও দেশের ভাষা, সংস্কৃতি জানার আগ্রহ থাকতে পারে। সম্ভবত এই ব্যাক্তিগত ভাল লাগার কারণেই আমাদের দেশে ফ্রেঞ্চ শেখেন সবচেয়ে বেশি মানুষ।

কিন্তু কোন ভাষাটা সহজ জানতে চাইলে, প্রথমেই থাকবে স্প্যানিশ। যেহেতু আমরা সকলেই কমবেশি ইংরেজি জানি, সেহেতু স্প্যানিশ শেখা আমাদের কাছে বেশি সহজ। দু’টো ভাষার ব্যাকরণ, গঠন এমনকী বেশ কিছু অক্ষরও এক। এরপরেই ফ্রেঞ্চ। উচ্চারণ একটু কঠিন হলেও ব্যাকরণ গত ভাবে ইংরেজির সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। ভারতে বিদেশি ভাষাশিক্ষার হারে এর পরই যেটা রয়েছে, সেটা হল জার্মান। যদিও উপরের দু’টি ভাষার তুলনায় যথেষ্ট জটিল জার্মান। বিশ্বে ১.৮ শতাংশ লোক জার্মান ভাষায় কথা বলেন। জার্মানরা যেহেতু প্রবল দেশাত্মবোধে নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় কথা বলেন না (ইংরেজিও না), সেহেতু ওই দেশে গবেষণা বা চাকরি সূত্রে গেলে, আপনাকে জার্মান ভাষা শিখতেই হবে।

কর্মসংস্থানে সুযোগের নিরিখে আবার অনেক এগিয়ে চিনা, কোরিয়ান ও জাপানি। চিন-কোরিয়ায় এখন বেশির ভাগ উৎপাদনমূলক সংস্থা। তাই কর্পোরেট চাকরিতে ইউরোপীয় ভাষার তুলনায় এই দু’টো ভাষার চাহিদা বাড়ছে। কদর বেশি হলে কী হবে চিনা ভাষা শেখা কিন্তু বেশ কঠিন। ব্যাকরণ, লেখনী সবই একেবারে আলাদা। চাহিদার নিরিখে উপরের দিকে থাকা জাপানি ভাষা দেখলে মনে হয় চিনার সঙ্গে মিল রয়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়। ভাষা হিসাবে আরও কঠিন জাপানি।

তবে, শেখার সময় কোনটা সহজ তা দেখে ফাঁকির চক্করে না পড়াই ভাল। বরং বিশ্ববাজারে কোনটার বেশি চাহিদা সেটা দেখা দরকার। যেমন, সোভিয়েত ইউনিয়নের যখন দাপট ছিল, আমাদের দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল, তখন রাশিয়ান ভাষা শেখার ভাল বাজার ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পরে রাশিয়ান ভাষার সেই বাজার নেই। একই ভাবে পার্শিয়ান ভাষা শিখে খুব একটা লাভ হয় না এখন।

কোথায় পড়ব?

দ্বাদশ শ্রেণি পাশের পরে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ দেশের ভাষার উপরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করা যায়। আবার অন্য কোনও কিছু নিয়ে পড়াশোনার ফাঁকে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা কোর্স করে নিতে পারেন বিদেশি ভাষার। বিদেশি ভাষার চর্চা নিয়েই থাকতে চাইলে স্নাতকোত্তর স্তরের পরে গবেষণাও করা যায়। এই রাজ্যে বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ভাল সুযোগ রয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেকগুলি বিদেশি ভাষার কোর্স করা যায়। যাদবপুরেও তাই। কলকাতার গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে খুবই কম খরচে বিভিন্ন ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও ম্যাক্সমুলার ভবনে জার্মানি, অলিয়্যাঁস ফ্রঁসে-তে ফ্রেঞ্চ শোখানো হয়। ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যাক্তিগত ভাবে অনেকে বিদেশি ভাষা পড়ান। বাড়িতে এসেও শিখিয়ে যান।

খরচ কত?

এটা নির্ভর করে কী ভাষা শিখছেন, তার উপরে। যেমন জাতীয় স্তরের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবিক ও পার্শিয়ান শেখানো হয় নামমাত্র মূল্যে। সেই তুলনায় কোরিয়ান, জাপানি ভাষা শিক্ষার খরচ বেশি। কোথায় শিখছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউতে (জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি) খরচ কম। জেএনইউতে অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থাকায় শেখাটা খুবই ভাল হয়। তাছাড়া স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। সাউথ কোরিয়া ও জাপান সরকারও স্কলারশিপ দেয়। এগুলোর খোঁজ রাখতে হয়। ম্যাক্সমুলার ভবনে খরচ বেশি নয়। শ্রেষ্ঠ দুই কৃতী পড়ুয়াকে স্কলারশিপ দেওয়ার পাশাপাশি জার্মানিতে নিয়ে যায় ওরা।

সব শেষে

বিদেশি ভাষা শিক্ষায় ভর্তি হন অনেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দখল আনতে পারেন খুব কমই। বিদেশি ভাষা শিখতে গেলে যেমন এর প্রতি প্যাশন থাকা দরকার, তেমনই প্রচুর ধৈর্য ধরতে হয়। রেডিমেড বাক্য মুখস্থ করে এটা হয় না। সবচেয়ে ভাল হয়, যে ভাষা শিখছো, সেই জনজাতির লোকজনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারলে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে সেটুকু করে নেওয়াই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন