ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট অমিল চার হাসপাতালে

ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। চার-পাঁচ দিন আগে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। অথচ, গত প্রায় দেড় মাস ধরে কলকাতার চারটি প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ম্যালেরিয়া পরীক্ষার ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট’ নেই!

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:০২
Share:

ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। চার-পাঁচ দিন আগে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। অথচ, গত প্রায় দেড় মাস ধরে কলকাতার চারটি প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ম্যালেরিয়া পরীক্ষার ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট’ নেই! নীলরতন সরকার, আর জি কর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও এসএসকেএম হাসপাতালের এমনই অবস্থা বলে অভিযোগ উঠেছে। মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কেও ম্যালেরিয়ার কিট ফুরনোর মুখে। এখন সাকুল্যে ২০০ কিট আছে, যা দিয়ে আগামী দু’দিনও যাবে না।

Advertisement

ম্যালেরিয়া-প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত কলকাতায় এমন ভরা ম্যালেরিয়ার মরসুমে প্রধান মেডিক্যাল কলেজগুলির ব্লাড ব্যাঙ্ক কী ভাবে ম্যালেরিয়া কিট শূন্য হয়ে থাকে?

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের রক্ত নিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর নয়ন চন্দ বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরে ম্যালেরিয়ার কিট নেই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। এই কিট জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (ন্যাকো) পাঠানোর কথা। ওরা পাঠায়নি। তাই আমরা আপাতত স্লাইড মেথডে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছি।”

Advertisement

এ কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন ন্যাকো-র রক্ত নিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সুনীল খাপারডে। তাঁর কথায়, “আমরা রাজ্যগুলিকে এইচআইভি, যৌন রোগ, হেপাটাইটিস বি এবং সি পরীক্ষার কিট দিয়ে থাকি। ম্যালেরিয়া কিটের টাকা ম্যালেরিয়া কার্যক্রমের মাধ্যমে আসে। সেই টাকা দিয়ে রাজ্যগুলিই কিট কিনে নেয়। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর সেটা কেনেনি কেন?” রাজ্যের রক্ত নিরাপত্তা বিভাগের কর্তারা আবার এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, “ম্যালেরিয়া কার্যক্রমের টাকায় রাজ্য ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট কেনে সাব সেন্টার, ব্লক প্রাথমিক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালের জন্য। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট ন্যাকোরই পাঠানোর কথা।”

এই টানাপড়েনের মাঝখানে তা হলে ওই চার মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগৃহীত রক্তের ম্যালেরিয়া পরীক্ষা কী করে হচ্ছে?

ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির টেকনিশিয়ানরাই জানিয়েছেন, কিটের অভাবে বাধ্যতামূলক ম্যালেরিয়া পরীক্ষা ছাড়াই অধিকাংশ রক্ত ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম রক্ষার্থে মুখে বলা হচ্ছে, ম্যালেরিয়ার ‘স্লাইড টেস্ট’ হচ্ছে। অর্থাৎ, স্লাইডে রক্ত টেনে মাইক্রোস্কোপের নীচে দেখার আদ্যিকালের পদ্ধতি। আদতে সরকারি ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বহু দিন আগেই বাতিলের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। টেকনিশিয়ানদের বক্তব্য, “ব্লাড ব্যাঙ্কে টেকনিশিয়ানের মারাত্মক অভাব। প্রয়োজনের অর্ধেকও নেই। তাঁদের বেশির ভাগেরই স্লাইড পরীক্ষার জ্ঞান বা দক্ষতা নেই। তার উপরে যথেষ্ট মাইক্রোস্কোপ নেই। থাকলেও অধিকাংশ পুরনো ও খারাপ। এই অবস্থায় স্লাইড পরীক্ষা করলে রিপোর্ট ভুল হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা থাকে।”

টেকনিশিয়ানদের কথায়, “এক-একটি স্লাইড দেখতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। আমাদের প্রতিদিন যে বিপুল রক্ত পরীক্ষা করতে হয়, তাতে স্লাইডে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতে গেলে আর কাউকে রক্ত দেওয়া যাবে না। কিট পাচ্ছি না, তাই ম্যালেরিয়ার জীবাণু রয়েছে কি না পরীক্ষা না-করেই ৭০ শতাংশ রক্ত ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।”

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই হাসপাতালগুলিতে প্রতিদিন কলকাতা ও জেলার প্রচুর রক্ত আসে। ঠিকমতো পরীক্ষা না-হলে ওই রক্ত নিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া (যাকে ‘ট্রান্সফিউশন ম্যালেরিয়া’ বলে), তার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন