প্রতি বছরের মতো এ বছরও মার্গ-এর বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি, তাদের অভিভাবক এবং মূলস্রোতের ছেলেমেয়েরাও। ছবি: সংগৃহীত।
একদল ছেলেমেয়ে গৎভাঙা। পাঁচজন সাধারণ মানুষের থেকে একটু বেশিই চাহিদা তাদের— একটু বেশি মনোযোগ, যত্ন, সহমর্মিতার চাহিদা ওদের থাকে। ওরা বিশেষ ভাবে সক্ষম। আর পাঁচটি সাধারণ কাজ ওরাও করতে পারে, তবে নিজেদের মতো করে। আর একদল তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু খেলার মাঠে যখন দু’তরফের দেখা হল, তখন মিশে যেতে কোনও অসুবিধা হল না। একসঙ্গে হাত মিলিয়ে চুটিয়ে মজা করল সবাই। সঙ্গে ছিলেন বড়রাও। এক দিনের জন্য বড়রাও বয়স ভুলে শিশুদের সঙ্গে মিশলেন একেবারে তাদের মতো করে। গত ১৪ ডিসেম্বর, রবিবার নিউ আলিপুরের টার্ফ এক্সেলে শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ‘মার্গোৎসব’-এর আয়োজন করেছিল ‘মার্গ: আ মাইন্ড ওয়েলনেস স্টুডিয়ো’। সেখানেই দেখা গেল জীবনের বাঁধা গতে না-পড়াদের মূলস্রোতের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে।
মানসিক সুস্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেই বছর চারেক আগে শুরু হয়েছিল মার্গ-এর পথ চলা। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানসী সঙ্ঘভি ভয়ানি এবং রোহন ভয়ানি। তার পর থেকে অন্তত ৫০০০ মানুষের মনের ঠিকানা জেনেছে মার্গ। পাশাপাশি, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট সংস্থা, এমনকি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাতেও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার কাজে সহযোগী হয়েছে তারা। মানসী নিজে একজন মনোবিদ এবং বিশেষ শিক্ষা প্রদানকারী। তিনি বলছেন, ‘‘মার্গোৎসবের মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চেয়েছি, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যাঁরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, তাঁরা ওই ধরনের মূলস্রোতের খেলাধুলো বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না। তাঁদের কথা ভেবেই এই ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করি আমরা। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কে কেমন ভাবে খেলল, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কতটা উৎসাহ নিয়ে শিশুরা যোগদান করল।রএই উৎসবে খেলাধুলা আর শিল্পের হাত ধরে সব শিশুই এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে।’’
দৌড় প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ছিল অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও মার্গ-এর বার্ষিক ক্রীড়া উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি, তাদের অভিভাবক এবং মূলস্রোতের ছেলেমেয়েরাও। দৌড় প্রতিযোগিতা, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ২০ ফুট উঁচু কাঠামো বেয়ে ওঠার মতো প্রতিযোগিতা ছাড়াও ছিল কার্নিভাল গেমস, খাবারের স্টল, এমনকি কাউন্সেলিংয়ের স্টলও। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল কলামার্গ স্টল। যেখানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা তাদের হাতে তৈরি রকমারি সামগ্রী বিক্রি করছিল। তাদের প্রতিভা সকলের সমানে তুলে ধরা হয়েছিল কলামার্গের স্টলে। রোহন ভয়ানি বলেন, ‘‘একটা ছোট পার্ক থেকে মার্গোৎসবের সূচনা করেছিলাম। আজ এত মানুষকে আমাদের সঙ্গে জুড়তে পেরেছি, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।’’
ছোটদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিলেন বড়রাও।
মার্গ-এর ক্রীড়া উৎসবে অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন, ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজের ভাইস চেয়ারম্যান মিরাজ শাহ, মনোরোগ চিকিৎসক গৌতম সাহা, আর্ট বেস্ড থেরাপিস্ট নেহা পটেল, প্যারাসাইক্লিস্ট দিবিজ শাহ, শিক্ষাবিদ বিনবন্ত কৌর, মনোবিদ এবং বিশেষ শিক্ষা প্রদানকারী মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টরা।