লন্ডনের বছর সাতেকের অ্যালিস রাউলিং। সমবয়সী আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে তার জীবন বেশ আলাদা। ইসকুলে যাওয়ার অনুমতি নেই। নেই পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার পারমিশনও। খেলবে কী করে? অল্প আঘাতেই তো ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে তার শরীরের হাড়! ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছেন, আর বেশিদিন আয়ু নেই অ্যালিসের। বহু চেষ্টা করেও কোনও ফল মেলেনি।
না মেলারই কথা। কারণ অ্যালিস ভুগছে অস্টিওজেনেসিসে। যার কোনও চিকিত্সা নেই। বলা ভাল, চিকিত্সা ছিল না। এত দিনে বিজ্ঞানীরা একটা রুপোলি আলো দেখতে পাচ্ছেন।
জিনগত এই অসুখের মোকাবিলার পথ এত দিন পর্যন্ত জানা ছিল না। এ বার অস্টিওজেনেসিস প্রতিরোধে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন সুইডেনের কারোলিনসকা ইন্সটিটিউট এবং ব্রিটেনের গ্রেট ওরমোনড স্ট্রিট হাসপাতালের গবেষকেরা। সমস্যাটা আসলে লুকিয়ে থাকে ভ্রূণের ডিএনএ-তে। ডিএনএ কোডিং-এ গরমিলের জন্য কোলাজেন তৈরি হয় না। হলেও তা পরিমাণে অত্যন্ত কম হয়। এই কোলাজেনই হাড়ের কাঠামো গঠন করে। আর তচারই অভাবে স্বাভাবিক ভাবেই হাড় ভঙ্গুর হয়।
অ্যালিস একা নয়, পৃথিবীতে প্রতি ২৫ হাজারের মধ্যে একটি শিশু অদ্ভুত এই অসুখ নিয়ে জন্মায়। আপাত দৃষ্টিতে সংখ্যাটা কম মনে হলেও মোট জনসংখ্যার নিরিখে তা নেহাত কম নয়। এই অসুখে আক্রান্ত শিশুরা হয় জন্মের পরেই মারা যায়। আর বাঁচলেও আয়ু অতন্ত কম হয়। এদের হাড় এতটাই ভঙ্গুর হয় যে আলতো টোকাতেই তা ভেঙে পড়ে।
গবেষকরা প্রথমে গর্ভপাতের ফলে সদ্য মৃত ভ্রূণ থেকে দেহকোষ সংগ্রহ করেছেন। সেই দেহকোষ প্রতিস্থাপিত করেছেন অপর একটি গর্ভস্থ ভ্রূণে। এর ফলে দ্বিতীয় ভ্রূণে জিনগত ত্রুটি থাকলেও সেই খামতি পূরণ করে দাতা কোষ। ফলে কমে অস্টিওজেনেসিসের সম্ভাবনা।
যদিও বিষয়টি এখনও পর্যন্ত পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, তবে সাফল্য পেলে অকালে ঝরে যাওয়া বহু প্রাণ রক্ষা পাবে। অক্ষুণ্ণ থাকবে বহু বাবা মায়ের মুখের হাসি।