Poila Baisakh 2024

‘বড় হয়েছি তো কী, এখনও মা সাজিয়ে দেন’, বৈশাখী মেজাজে আড্ডায় মাতলেন নন্দী সিস্টার্স

বৈশাখী সাজে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী অন্তরা নন্দী ও অঙ্কিতা নন্দী।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৮
Share:

(বাঁ দিকে) অন্তরা নন্দী। অঙ্কিতা নন্দী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

পয়লা বৈশাখে আমরা কী করি গো মা? নতুন বছর উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন পেয়েই কেতাদুরস্ত তরুণী সোজা মায়ের শরণে। শুরু হল বৈশাখী আড্ডা!

Advertisement

তরুণী বটে, তবে যে সে নন। বৈশাখী সাজে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী অন্তরা নন্দী। সঙ্গে বোন অঙ্কিতা নন্দী। এক কথায় ‘নন্দী সিস্টার্স’ নামেই পরিচিত দু’জনে। নেটদুনিয়ায় ঝড় তুলে এখন রীতিমতো এ শহর-ও শহর করে বেড়াচ্ছেন গানের জন্য। এক জন সবে ২৫-এ পা রেখেছেন। অন্য জন আরও কম। গান থেকে সাজ কিংবা আড্ডা, সবেতেই পাশে পাশে আছেন মা জুঁই নন্দী। রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যেখানেই থাকুন, মাকে স্মরণও করতে লাগে না। উল্টো দিকে এক বার তাকিয়ে নিলেই হয়।

করোনাকালে সকলে যখন ঘরে বন্দি, তখন অনেকের নজর কেড়েছেন এই দুই কন্যা। হাতে সুর-যন্ত্র, ফুলের মতো সাজ আর নদীর মতো সুর। হু-হু করে বাড়ে জনপ্রিয়তা। এখন দু’জনে প্রতিষ্ঠিত গায়িকা। সাজ ততটাই নজরকাড়া এখনও। অঙ্কিতা বলেন, ‘‘এখনও আমাদের সাজের ব্যাপারে মায়ের ইচ্ছাই শেষ কথা!’’ কিন্তু এখন তো বড় হয়েছেন ওঁরা। বাকিদের মতো অন্তরা-অঙ্কিতারও নিশ্চয়ই মতামত আছে? কী পরতে ইচ্ছা করছে, তা হয়তো বলেন, কিন্তু মা সবুজ বাতি না দেখানো পর্যন্ত কোনও লুক আন্তর্জালে যায় না। মঞ্চেও দেখা যায় না সচরাচর,আজও।

Advertisement

(বাঁ দিক থেকে) মায়ের সঙ্গে দুই বোন, অন্তরা এবং অঙ্কিতা। —নিজস্ব চিত্র।

সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত দুই কন্যা। মঞ্চে দেখলে মনে হবে, কোনও বাধা মানেন না। তবে আসলে তাঁরা মাকে ছাড়া এক পা-ও নড়েন না। ইচ্ছা না থাকলেও মেয়েদের আড্ডায় ঢুকতে বাধ্য হন মা। কথায় কথায় চোখে জল আসে জুঁইয়ের। বলেন, ‘‘ওরা বলে মা না বললে কিছু করি না। কিন্তু ওরাও আমাকে দেখে রাখে। এর মধ্যেই তো এক দিন হল। ওরা গান গাইছে মঞ্চে। আমাকে চিনতে না পেরে নিরাপত্তারক্ষী দূরে সরে যেতে বললেন। আমি চুপচাপ চলেও যাচ্ছিলাম। ঠিক কানে এল, অন্তরার গান থেমে গিয়েছে। পিছন থেকে এসে আমার হাতটা ধরল। ইশারায় বলে দিল, ওর মা কোথাও যাবে না। বুঝলাম, মেয়ে আমার বড় হয়ে গিয়েছে। মায়ের খেয়ালও রাখতে শিখেছে।’’ নতুন বছরের শুরুতে মায়ের চোখে কান্না দেখে মেয়েরা আবার জাপ্টে ধরেন মাকে।

নববর্ষ উপলক্ষে নানা কাজ নিয়ে কলকাতায় এসেছেন পুণের বাসিন্দা দুই বোন। এখন বহু বছর হয়ে গিয়েছে, নববর্ষে বাড়িতে সে ভাবে একসঙ্গে আনন্দ করা হয় না। কাজের জন্য বাইরে বাইরেই থাকতে হয়। এ বছরও যেমন আছেন। তবে বাংলা বছরের শুরুর দিনটা তাঁদের কাছেও আলাদা। মেয়ে যেই না মায়ের দিকে তাকালেন নববর্ষের ঘরোয়া উদ্‌যাপনের কথা মনে করতে, মা মনে করিয়ে দিলেন খাওয়াদাওয়ার কথা। ব্যস! দুই বোনকে থামায় কে! পাঁঠার মাংস থেকে ধোঁকার ডালনা, কী নেই তাঁদের কথায়! দিদিমার বাড়িতে যেতেন এক সময়ে, নতুন বছর পালন করতে। পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালমন্দ খেতেন বাড়ি বসেই। এখনও পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালি রান্নার কথা মনে হয় দুই বোনের। আর মনে হয় পরিবারের বড়দের কথা। এক সময়ে নতুন জামা পরে বাগুইআটিতে আত্মীয়দের বাড়ি যাওয়াও ছিল রীতি। তবে মায়ের হাতের রান্না চার জনে একসঙ্গে বাড়িতে বসে খাওয়াই হল সেরা উদ্‌যাপন দুই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার জুঁই এবং অনিমেষ নন্দীর কন্যা অন্তরা ও অঙ্কিতার কাছে।

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় ‘নন্দী সিস্টার্স’। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু সুন্দরীরা নাকি খাওয়াদাওয়া বিশেষ করেন না? ও সব নিয়মে বাধা এখনও পুরোপুরি পড়েননি ওঁরা। অন্তরা বলেন, ‘‘আমরা সব খাই।’’ অঙ্কিতা জুড়ে দেন, ‘‘এমন কোনও খাবারই নেই যা আমরা ভালবাসি না। মা যা রান্না করে, আমাদের সেটাই ভাল লাগে।’’ অন্তরা জুড়ে দেন, মায়ের হাতের উচ্ছে ভাজা, ঝিঙের ঝোলও এখন খুব প্রিয় ওঁদের। ছোটবেলায় সে সব মুখে রুচত না। এখন তো বড় হয়েছেন। মায়ের হাতের গুণের প্রশংসা আরও বেশি করে করতে শিখেছেন। তাই মা যা দেন, সব ভাল লাগে।

তবে এ সব শুধু বচ্ছরকার দিনের খাবার। এখন দু’জনে বড় হচ্ছেন। স্বাস্থ্য সচেতনও হতে শিখছেন ধীরে ধীরে। অন্তরার স্নাতকোত্তর পর্যন্ত লেখাপড়া হয়ে গিয়েছে। ফলে সারা দিন কাজের দিকেই মন। তার মাঝখানে শরীরচর্চা করার চেষ্টা করেন। আর অঙ্কিতার স্নাতক স্তরের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার মাঝে কাজের জন্য কলকাতায় আসতে হয়েছে। ফলে হাতে সময় খুব কম। ১৬ এপ্রিল পরীক্ষা শেষ হাওয়া মাত্রই তিনিও ব্যায়াম শুরু করে দেবেন। শেষে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে বেশি পরিবর্তন আনতে হলে মুশকিল যে!

তবে সে সব পরের কথা। আপাতত চুটিয়ে আনন্দ করবেন। দেশের বহু শহরে ইতিমধ্যেই থাকা হয়ে গেলেও, কলকাতাই তাঁদের সবচেয়ে পছন্দের। অঙ্কিতা বলেন, ‘‘কলকাতাই হল বাড়ি। অন্য শহরগুলো খারাপ, তা নয়।’’ আর তাঁরা যে ভাষাতেই কথা বলুন না কেন, আসলে মনেপ্রাণে বাঙালি। সে কথা বলতে শেখার মতো অভ্যাস নেই তাঁদের। কিন্তু কাজ হোক কি সাজ, আসলে সেই অতি বাঙালি মেয়েদের মতোই কথায় কথায় ঢুকে পড়ে বাবা-মায়ের কথা। অন্তরা বলেন, ‘‘আমাদের গান গাওয়াই তো শুরু বাবা-মায়ের জন্য। বাঙালি বাড়িতে যেমন গানবাজনা হতেই থাকে, আমাদের বাড়িতেও তো তা-ই।’’ বাংলা বছরের শুরুর দিনটা আরও বাঙালি হয়ে ওঠে নতুন যুগের এই দুই নতুন মুখের কথায় কথায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন