আসেন না ডাক্তার, অবরোধ আউশগ্রামে

একে ডাক্তারের সংখ্যা কম। তার উপরে আবার যাঁরা রয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে তাঁরাও আসছেন না। ফলে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ন্যূনতম চিকিৎসাও মিলছে না— এই অভিযোগে শনিবার সকাল থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা গুসকরা-ইলামবাজার রোড অবরোধ করলেন আউশগ্রামের বননবগ্রামের বাসিন্দারা। শেষে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে আলোচনা করার পরে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০২:০২
Share:

একে ডাক্তারের সংখ্যা কম। তার উপরে আবার যাঁরা রয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে তাঁরাও আসছেন না। ফলে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ন্যূনতম চিকিৎসাও মিলছে না— এই অভিযোগে শনিবার সকাল থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা গুসকরা-ইলামবাজার রোড অবরোধ করলেন আউশগ্রামের বননবগ্রামের বাসিন্দারা। শেষে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে আলোচনা করার পরে অবরোধ ওঠে। মঙ্গলবার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনায় বসবেন এলাকাবাসীর একটি প্রতিনিধি দল। আপাতত আজ, রবিবার থেকে এক জন চিকিৎসক দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আউশগ্রাম ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে যত জন চিকিৎসকের প্রয়োজন, তা নেই। যে দু’জন রয়েছেন তাঁরা রোজ আসেন না। গত কয়েক মাস ধরে সপ্তাহে তিন-চার দিন তাঁদের অনুপস্থিতি থাকাই যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছে। আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলেও এক জন রাতে থাকতেন, আর এক জনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে পাওয়া যেত না। অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তার পরিষেবা নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। এ সব নিয়ে সাধারণের মানুষের ক্ষোভ ছিলই। শুক্রবার একটি দুর্ঘটনার পরে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসা পরিষেবা না মেলায় তা বাড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে বননবগ্রাম বাসস্টপে একটি লরি দুর্ঘটনায় পড়ে। সেটির চালককে রক্তাক্ত অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে তখন কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। এক জন নার্স ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মীর উপরে ভরসা করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছিল। আহতকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলা ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায় ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা তথা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য মঙ্গলা মাড্ডির অভিযোগ, “সপ্তাহে তিন-চার দিন এখান থেকে কোনও পরিষেবা এলাকার মানুষ পেতেন না। এ নিয়ে বিএমওএইচ সপ্তাহ দু’য়েক আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিজ্ঞপ্তিও দেন। তার পরে আমরা নানা জায়গায় ডাক্তারের দাবিতে চিঠি পাঠাই। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। তাই এলাকার মানুষ পথ অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। আউশগ্রাম, বননবগ্রাম, ওয়ারিশপুর, পূর্বতটী গ্রামের মানুষরা জোট বেঁধে এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। যার জেরে আটকে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা তপন মণ্ডল, অশোক দাশগুপ্ত, মাতাবুদ্দিন শেখরা বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এখানে রোগী ভর্তি বন্ধ বললেই চলে। পরিষেবা পাওয়া তো দূর, এখানে এসে রোগীরা নানা রকম সমস্যায় পড়ে থাকেন।” পুলক দে, সেলিম শেখদের অভিযোগ, “আমাদের দাবি ছিল, হয় ডাক্তার দিতে হবে, না হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করতে হবে।” স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বহির্বিভাগে প্রতি দিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশো রোগী হয়। ১০-১২ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু, গত কয়েক দিন ধরে চিকিৎসক না আসায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। শুধু আউশগ্রাম ১ নয়, আউশগ্রাম ২ ও কাঁকসা ব্লক থেকেও অনেকে এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন।

জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য টগর শেখ বলেন, “আমরা চিকিৎসক দেওয়ার জন্য সভাধিপতির কাছে ইতিমধ্যে আবেদন রেখেছি।” আউশগ্রামের বিধায়ক বাসুদেব মেটে বলেন, “এই পরিস্থিতির বদল চেয়ে আমি ব্লক থেকে জেলা প্রশাসনের সবার কাছে আবেদন করেছি। আশা করি, মানুষের চাপে স্বাস্থ্য দফতর একটু হলেও নড়েচড়ে বসবেন।” আউশগ্রাম ১ বিডিও অরুণ পাল বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে দাবিগুলি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায় বলেন, “মঙ্গলবার অবরোধকারী ও প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে স্থায়ী সমাধানের পথ বের করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement