আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছে ভারত। রোগটা কী ভাবে ছড়ায়, কী ভাবে তার প্রতিরোধ সম্ভব সে সম্পর্কে সচেতনতাও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেকটাই। কিন্তু সব কিছু জানার পরেও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সেই কথাগুলি মানছেন ক’জন? সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার থেকে কতটা বাঁচানো গিয়েছে এইচআইভি পজিটিভদের? মঙ্গলবার, বিশ্ব এডস দিবসের অনুষ্ঠানে বার বার উঠে এল এই প্রশ্নই।
কলকাতায় আমেরিকান কনসুলেটের সঙ্গে অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ভাইরোলজির শিক্ষক-চিকিৎসক সকলেই স্বীকার করলেন, এই রোগীদের সম্বন্ধে এখনও নানা ছুৎমার্গ থেকে গিয়েছে। রাজ্যের যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা সচ্চিদানন্দ সরকার বলেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালেই এইচআইভি পজিটিভ জানতে পারলে হাসপাতালের কাগজে আলাদা স্ট্যাম্প মারা থাকে। এমন কী কোনও কোনও ক্ষেত্রে শয্যার গায়েও আলাদা চিহ্ন থাকে। দিনের পর দিন চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন এঁরা। সরকারি তরফে নানা চেষ্টার পরেও সমস্যাটা থেকেই যাচ্ছে।’’ কার্যনির্বাহী মার্কিন কনসাল জেনারেল কোরি ডি উইলকক্সের কথায়, ‘‘আগের তুলনায় মানুষ রোগটা সম্পর্কে অনেক বেশি বুঝছেন সে কথা ঠিক, কিন্তু এখনও বহু পথ যাওয়া বাকি। সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, রক্ত সুরক্ষার মতো বিষয়গুলিতেও আরও প্রচার জরুরি।’’
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের ধারণা, শুধুমাত্র অনিয়ন্ত্রিত যৌনতা থেকেই এই সংক্রমণ ছড়ায়। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর ভাইরোলজির চিকিৎসক বিভূতি সাহা জানালেন, রক্ত নিতে গিয়ে বহু মানুষ এই সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক বৃদ্ধ এসেছিলেন আমার কাছে। তাঁর হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়েছে। সেই সময়ে রক্ত নিতে গিয়ে এই সংক্রমণ ঢোকে শরীরে। ধরা পড়ার পরে তাঁর দিশাহারা অবস্থা। বার বার সকলকে বলছেন, ‘বিশ্বাস করুন, আমি কিচ্ছু করিনি। তবু কী করে রোগটা হল!’’ কী ভাবে রক্ত নিতে গিয়ে থ্যালাসেমিয়া শিশুরাও এই সংক্রমণের শিকার হয়, সেই প্রসঙ্গও আসে তাঁর কথায়।
শুধু রোগের উৎস নয়, প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমণ ধরা না পড়ায় বহু এইচআইভি পজিটিভের চিকিৎসা দেরিতে শুরু হয়। বহু ক্ষেত্রেই দেরিটা এত বেশি যে তখন আর কিছু করার থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মা আর এইচআইভি প্রায় হাত ধরাধরি করে চলে। সুতরাং যক্ষ্মা ধরা পড়লেই এইচআইভি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সচেতনতা বাড়ানোর ওপরেও জোর দেন তাঁরা। রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস জানান, এ বিষয়ে তাঁরা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। প্রয়োজনীয় যে কোনও পরামর্শকে স্বাগত জানান তিনি।