ঘুরে ফিরে আসে বাঙালি ভোজের নানা অজুহাত

তারকা-মুগ্ধ এ সময়ে বাঙালি রান্নায় মন দেওয়ার নতুন কারণের অন্যতম হলেন কয়েক জন সেলিব্রিটি ডায়েটিশিয়ান। বলিউডের দাপুটে সুন্দরীরা যাঁদের দেওয়া মন্ত্রে নিত্যই তাক লাগাচ্ছেন রূপোলি পর্দায়।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৫
Share:

পয়লা বৈশাখে শাক-চচ্চড়িতে বাঙালিয়ানার উদ্‌যাপন নতুন নয়। তা নিয়ে চর্চাও ইতিমধ্যে হয়েছে বহু। ফলে কোন রেস্তরাঁয় পাবদার ঝোল ভাল, আর কোন রেস্তঁরায় ইলিশ, তা নিয়ে নতুন আলোচনার খুব প্রয়োজন পরছিল না কয়েক দিন আগে পর্যন্তও। তবু নিত্য নতুন মোড়কে যে ফিরে ফিরে আসে এঁচোড়-মোচা কিংবা ‘হেরিটেজ’ দোকানের চপ-কাটলেট খেয়ে আধুনিক হওয়ার কারণ।

Advertisement

তারকা-মুগ্ধ এ সময়ে বাঙালি রান্নায় মন দেওয়ার নতুন কারণের অন্যতম হলেন কয়েক জন সেলিব্রিটি ডায়েটিশিয়ান। বলিউডের দাপুটে সুন্দরীরা যাঁদের দেওয়া মন্ত্রে নিত্যই তাক লাগাচ্ছেন রূপোলি পর্দায়। বাঙালিরা জেনে গিয়েছেন ইতিমধ্যে, তাঁরাও মাঝেমধ্যেই ঘি-ভাত খান!

ফলে বদলে গিয়েছে সুস্থ-খাদ্যের তালিকা। তাই আরও এক বার পাতে ফেরার কারণ খুঁজে নিয়েছে ভাত। সে মুগ্ধতার ছুঁতোয় ইলিশ-পাবদা-পোস্তোর বড়ায় নজর কাড়তে কোমর বেঁধেছে রেস্তঁরারা। নতুন বছরকে মাথায় রেখে যেমন দক্ষিণ কলকাতার ‘সপ্তপদী’ উৎসাহীদের জন্য রান্না করছে আদা বাটা দিয়ে ঘরোয়া মাংস, কাঁচা লঙ্কা-মেথি দিয়ে মুরগির ঝোল। ভাজা মশলার আলুরদম আর কালো মরিচ দিয়ে পাবদার ঝোল নিয়ে এ নববর্ষে উৎসাহীদের জন্য অপেক্ষা করবেন বৈদিক ভিলেজে এক দল শেফ।

Advertisement

কথায় কথায় বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া এ প্রজন্মের অনেকেই পরিচিত ভিন্‌দেশি লোকেভোর মুভমেন্টের সঙ্গে। পশ্চিমে যে একাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, স্থানীয় খাবারেই সবচেয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব। তা জেনে নিয়েছেন বাঙালিরা। ফলে পিৎজা-বার্গারের চেয়ে স্থানীয় খাদ্যই এখন বেশি হ্যাপেনিং করে তুলতে পারে তাঁদেরও! তাই বলে পাইস হোটেলের মিল সিস্টেম যে অভ্যস্ত নন সকলে। প্ল্যাটার-সংস্কৃতিতে হ্যাপেনিং হয়ে উঠতে চাওয়াদের জন্য রসদ তৈরি করেছে শহর। তাই বলেই কি ফুটপাত কিংবার পাইস হোটেলে যাবেন তাঁরা? সকলে যে তেমনটাও করে উঠতে পারেন না। বোহেমিয়ান রেস্তঁরা সেই সকল বাঙালিকে মুগ্ধ করতে তৈরি করেছে সাবেক তেলেভাজার সাহেবি প্ল্যাটার। হোটেল হলিডে ইন আবার সাহেবিয়ানায় অভ্যস্ত লোকেভোর বাঙালির বর্ষবণের চিন্তায় সুপ তৈরি করে ফেলেছে ধনে পাতা আর পোড়া আম দিয়ে।

সাহেবদের ইতিহাস প্রেম দেখে কিছু বাঙালি আধুনিক হতে চেয়েছেন ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য সচেতন যতই হোন, স্ট্রিট ফুড তাঁদের কাছে ‘ইন’। স্থানীয় খাবার ভালবেসে নিজের শহরটাকে নতুন করে চিনতে ‘ফুড ওয়াকে’র নামে মাইল মাইল হাঁটতেও আপত্তি নেই সেই আধুনি বাঙালিদের। যদিও ‘আলিস্যিতে পিইচডি’-র মতো বদনাম কুড়োনো বাঙালি কিছুকাল হল খাটনির ছুঁতোয় ছেড়ে দিয়েছে বহু সময়সাপেক্ষ জটিল রান্না। সাহেবি ফুড ওয়াকের নামে তাঁরা এখন মাঝেমধ্যে খেতে বসেন সেই সব রান্নাই, পুরনো কোনও বৌদির হোটেল কিংবা দাদার কেবিনে। দক্ষিণ কলকাতায় এমনই ফুড ওয়াকের আয়োজন করেন পেশায় শিক্ষক অভিষেক রায়। তিনি বলেন, ‘‘লেকের ধারের চাট, গড়িয়াহাট চত্বরের মিষ্টি দই, পুরনো কেবিনে ফিশ ফ্রাই, রাধুবাবুর দোকানে চায়ের আড্ডায় নববর্ষ কাটাতে এখন ভালবাসেন অনেক বঙ্গ তরুণ-তরুণীই।’’ উত্তর কলকাতায় কলেজ স্ট্রিট চত্বরেও নববর্ষের ভ্রমণে নিয়ে যেতে চান শুদ্ধব্রত দেব। তিনি বলেন, ‘‘খাবারকে ঘিরে হেরিটেজ ওয়াক এখন পছন্দ করেন অনেকেই।’’ ফলে নববর্ষের সকালে ফেভারিট কেবিনের চা, পুঁটিরামের কচুরি, ভিম নাগের বিদ্যাসাগর পাকের সন্দেশ এবং সব শেষে প্যারামাউন্টের ডাব সরবতের প্রাতঃভ্রমণের আয়োজন নিয়ে নব আনন্দে বাঙালিকে কলকাতা ঘুরিয়ে দেখাতে উৎসাহী তাঁর সংস্থাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন